যমুনার সাত


যমুনার সাত

সাত পেরিয়ে আট বছরে যমুনা টিভি

মাহফুজ মিশু

২০‌১৩ সালের কথা।তখন কাজ করি এটিএন বাংলায়। চাকরি পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। মোটামুটি সবই চূড়ান্ত। চ্যানেল ২৪ এ যাওয়ার কথা, আমিসহ এটিএন এর কয়েকজনের। এরই মধ্যে একদিন রাতে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে ফোন। স্বভাবসূলত বিনয় নিয়ে ওপাশ থেকে জানালেন, তিনি আমার বাসার নীচে। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি ভদ্রলোককে বাসায় আসার অনুরোধ করলে রাজি হননি। আগারগাও তালতলায় থাকতাম তখন। নীচে নামলাম। একটা ছোট্ট হোটেলে বসে কথা। সারমর্ম, আমিসহ আমরা যেন একবার সায়মন ড্রিংয়ের সাথে কথা বলি। সায়মন তখন যমুনায়। একাত্তরে বিখ্যাত এই বৃটিশ সাংবাদিকই ২৫ মার্চের গণহত্যার কথা জীবনের ঝুকি নিয়ে বিশ্ববাসীকে জানিয়েছিলেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের যাত্রাও শুরু হয়েছিল। একাত্তরে অবদানের জন্য কিছুদিন আগেই সায়মনকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননাও জানিয়েছে বাংলাদেশ। সে সময় তাকে ইন্টারভিউ করার সুযোগ হয়েছে আমার। কাজেই সায়মন ড্রিংয়ের সাথে কথা তো বলতেই হবে। আর যে ভদ্রলোক বাসার নীচে এসে দেখা করে আমাকে এই কথাটি জানালেন, তিনি ফাহিম আহমেদ। এর আগে সম্ভবত দু’তিনবার দেখা হয়েছে উনার সাথে। তার কথাবার্তায় মুগ্ধ হয়ে পরের দিন সায়মন ড্রিং এর সাথে দেখা করলাম। শুনলাম, যমুনা টেলিভিশন নিয়ে তার বিশাল স্বপ্ন আর দূরদর্শী পরিকল্পনার কথা। এবং মুগ্ধ হলাম, বিমোহিত হলাম। চ্যানেল ২৪ কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানালাম, আমার ও আমাদের সেখানে জয়েন করা হচ্ছে না। ঘটনা সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালের।

তারপর থেকে যমুনার সাথে পথচলা শুরু। ২০১৪ সালের ৫ এপ্রিল অন এয়ারে আসলো। কিন্তু তার আগে হাজারো গুজব, গুঞ্জন, প্রচারণা- সবই নেতিবাচক ছিল যমুনা টেলিভিশন নিয়ে। সবচেয়ে বড় প্রচারণা ছিল, এটি অনএয়ারেই আসবে না। আসলেও আমরা কেউ নাকি এক বছরের বেশি চাকরি করতে পারবো না। এই কথা আমার খুব কাছের মানুষও কেউ কেউ বলেছিলেন। তারপরও সাত বছর কাটিয়ে দিলাম। এত চ্যানেলের ভিড়ে যমুনা টেলিভিশন ঠিকই তার স্বাতন্ত্র্য প্রমাণ করেছে। বড় ধরণের যে কোন ইভেন্টে এখনো দর্শকদের একটা বড় আস্থার নাম যমুনা নিউজ। যমুনাই সম্ভবত একমাত্র সংবাদ চ্যানেল, যার সর্বাধিক সংখ্যক সংবাদভিত্তিক নিজস্ব অনুষ্ঠান রয়েছে। ২০২০ সালের মার্চে দেশে কোভিড সংক্রমণ শুরুর পর দ্রুততম সময়ে করোনা নিয়ে নতুন অনুষ্ঠান শুরু করে যমুনা টেলিভিশন। যখন কোথাও ডাক্তার চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না, তখন ভুক্তভোগীদের নির্ভরতার ঠিকানা হয়ে উঠেছিল যমুনা টেলিভিশন। সে সময় ঝুঁকি নিয়ে গোরস্থান থেকে হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ছুটি বেরিয়েছে আমাদের কর্মীরা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার এই আকালেও যমুনা নিয়মিত অনুষ্ঠান ইনভেস্টিগেশন ৩৬০ ছাড়াও্র  সংবাদে ব্যাংক, বীমা আর্থিক খাত, মানুষের ভোগান্তির নেপথ্যের নানা ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে যাচ্ছে। কেবল সাংবাদিকতা নয়, যমুনার দায় আছে এদেশের মানুষের প্রতি। তাইতো দিনের পর দিন, প্রাণান্ত চেষ্টা করে সুন্দরবনের দস্যুদের আত্মসমর্পণের উদ্যোগ নেন যমুনার বিশেষ প্রতিনিধি মহসীন উল হাকিম। আজ সুন্দরবনে যে স্বস্তি আর স্বাভাবিক পরিবেশ তার কৃতিত্বের দাবিদার যমুনাও।

যমুনার সবচে শক্তির জায়গা একঝাক নিবেদিত প্রাণ কর্মী। নিউজ, সম্প্রচার, বিপণণ, প্রশাসন কিংবা ক্রিয়েটিভ – সবার সমন্বিত প্রচেষ্টাকে এক সুতোয় গাঁথেন একজন ফাহিম আহমেদ। আর তাকে শক্তি সাহস জোগান চ্যানেলটির কর্ণধার যমুনা গ্রুপ। আর এর ফলাফল দর্শক-পাঠক, সাধারণ মানুষের আস্থা, নির্ভরতার নাম যমুনা টেলিভিশন। নতুন কিছু হোক বা না হোক, “সাদাকে সাদা আর কালো কে কালো” বলার যে স্বপ্ন-সাহস-স্পর্ধা দেখিয়েছিলেন চ্যানেলটির প্রতিষ্ঠাতা, যমুনা গ্রুপের কর্ণধার প্রয়াত নূরুল ইসলাম, সেই পথেই হাটুক যমুনা টেলিভিশন- অষ্টম বছরে পদার্পণের এই শুভক্ষণে সেই প্রত্যাশা। 

লেখক : যমুনা টেলিভিশিনের সংবাদকর্মী।