নির্বাসনে নৈতিকতা


নির্বাসনে নৈতিকতা

 

নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা সেমিনার আয়োজন করেছিল সাংবদিকতার নৈতিকতা নিয়ে। শিক্ষক, আইনজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। আমার বলার পালা এলে বলেছিলাম- গণমাধ্যমে যা নেই, তা নিয়ে কথা বলি কী করে। গণমাধ্যম নৈতিকতা শূন্য একটি মাধ্যম। এখানে পেশাদারিত্বের অবনমনের সঙ্গে সঙ্গে নৈতিকতা টা টা দিয়ে বিদায় নিয়েছে। লজ্জা এবং ক্ষোভে। সাংবাদিকতা নিজ কণ্ঠ হারিয়েছে। অন্য যাকে বলে অপরাধী, অসৎ, চরিত্রহীন- গণমাধ্যম অবলীলায় সেভাবেই ঐ ব্যক্তিকে ভোক্তার কাছে উপস্থাপন করে। বিনিয়োগকারী বা পুঁজি দিনকে রাত, রাতকে দিন বললে, গণমাধ্যমের তা অস্বীকার করার সাহস নেই। এই সক্ষমতা বা ব্যক্তিত্ব নিয়ে গণমাধ্যমের নৈতিকতা বহন করার সাধ্য নেই।

গণমাধ্যমের কাছে একের পর এক ঘটনা আসে, আর গণমাধ্যম তাদের ভোক্তার কাছে অকপটে স্বীকার করে নেয় তার অসহায়ত্ব। মালিকের দুর্নীতি, চরিত্রহীনতাকে অস্বীকার করে তার পক্ষে সাফাই সংগীত গাইতে বাধ্য যে গণমাধ্যম, তার মুরোদ কই নৈতিকতা নিয়ে আওয়াজ তোলার। আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী তাদের নিজেদের ঢঙে ব্রিফিং করতেই পারে, সেখানে চেতনে অবচেতনে কেউ ‘রাতের রানী’ শব্দযুগল উচ্চারণ করতেই পারেন, কিন্তু গণমাধ্যম কোনভাবেই সেই শব্দযুগল কর্জ করতে পারে না। নারীবাদ, পুরুষবাদ নয়, দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকেই গণমাধ্যমের এধরণের উচ্চারণ বর্জন করা উচিত ছিল। কিন্তু খবরকে চাটনি বানাতে গিয়ে তারা লোভ সংবরণ করতে পারেনি।

‘রূপালী জগতের ডানাকাটা পরী’, ‘চৌদ্দ শিকের ভেতর প্রেম নিবেদনের কেউ নেই তার’- এ প্রকারের বাক্য যখন কোন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়, তখন নৈতিকতা আছে, নাই এ প্রকারের প্রশ্ন তোলাও অবান্তর। গণমাধ্যম গণমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতা ও পুঁজি চক্রের পাঁকে বাঁধা পড়েছে যখন, তখন থেকেই নৈতিকতা শব্দটি নির্বাসিত হয়েছে, হারিয়ে যাওয়া শব্দের মহাফেজখানায়!

পুঁজি এবং ক্ষমতার বলয় থেকে কখনই গণমাধ্যমের মুক্তি ঘটেনি। এই দুই বরাবরই গণমাধ্যমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু তারপরও গণমাধ্যম তার ব্যক্তিত্ব ধরে রেখেছিল, পেশাদারিত্ব দিয়ে। গণমাধ্যমকর্মীদের তাদের পেশাদারিত্ব ধরে রাখার লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। তবেই গণমাধ্যম ক্ষমতা ও পুঁজির উপত্যকায় দাঁড়িয়েও বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারবে।

 

তুষার আবদুল্লাহ, গণমাধ্যমকর্মী, লেখক