বিজেসির হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির গল্প !


বিজেসির হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির গল্প !

করোনার শুরুর দিনগুলোতে বাজারে সুরক্ষা পণ্যের কাড়াকাড়ি। ১২’শ সদস্যের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার বাংলাদেশ। ট্রাস্টি বোর্ড সিদ্ধান্ত গ্রহন করে প্রত্যেক সদস্যের হাতে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং পিপিই পৌছে দিবে বিজেসি।

বাজারে তখন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চুরান্ত সংকট। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুতির কোন বিকল্প ছিল না। সুতরাং কাজটি করার দায়িত্ব কাঁধে এসে পরে। বিজেসি সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ যোগাযোগ করিয়ে দেন বুয়েট রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ফিরোজের সাথে। বুয়েট রসায়ন বিভাগ তখন নিজেদের ব্যবস্থাপনায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিজেসির পক্ষ থেকে আমি সেখানে গিয়ে হাতে কলমে শিখে নিই স্যানিটাইজারের প্রস্তুত প্রণালী। পুরো প্রক্রিয়াটি আত্তস্থ করার পর বুয়েট রসায়ন বিভাগ শুভেচ্ছা হিসেবে বিজেসিকে নিজেদের বানানো ৫লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রদান করে। প্রথম দিনের এই প্রশিক্ষণ আরেকটু ঝালিয়ে নেওয়া দরকার। ফার্মেসি, রসায়ন ও প্রাণ রসায়নের শিক্ষার্থীরা তখন তৈরি করছেন ছাত্র ইউনিয়নের হ্যান্ড স্যানিটাইজার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনের একটি কক্ষে অস্থায়ী ল্যাব স্থাপন করে এই কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হয়। করোনা যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনার সাংবাদিকদের মাঝে বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করতে যাচ্ছে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার- বিজেসি, এমন সংবাদে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয় ছাত্র ইউনিয়ন। বুয়েট রসায়ন বিভাগের শিক্ষাকে এবার কাজে লাগানোর পালা ছাত্র ইউনিয়নের অস্থায়ী ল্যাবরেটরিতে। সেখানে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে নিজ হাতে প্রথম ১লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত করে ফেলি। শেখার গল্প মোটামুটি এতোটুকুই। পরের কাজ বিজেসি অফিসে একটি অস্থায়ী ল্যাব স্থাপন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের উপাদানগুলো সংগ্রহ করা। রাজধানীর টিকাটুলি স্যায়িন্টিফিক সরঞ্জামের দোকানগুলো খুঁজে খুঁজে সংগ্রহ করা হয় বিকার, ফানেল, গ্লাস রড, মেজারিং সিলিন্ডার সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রাংশ। আর চকবাজার কেমিক্যাল মার্কেট ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করা হয় আইসো প্রোপাইল এলকোহল, গ্লিসারল, লেমনেড অয়েল, ডিসটিলড ওয়াটার এবং হাড্রোজেন পার অক্সাইড। সংগ্রহকৃত কেমিক্যালগুলোর মান নিশ্চিত করনে সহযোগীতা নেওয়া হয় ফার্মেসি, রসায়ন ও প্রাণ রসায়নের শিক্ষার্থীদের। সদাইপাতি এখানেই শেষ নয়, প্রয়োজন পরে নির্দিস্ট পরিমাপের বোতল সংগ্রহ এবং মোড়কজাত করনের জন্য বিজেসির স্টিকার প্রিন্ট করা।

পরের দুই দিনে প্রস্তুত হয় ১২’শ সদস্যের জন্য বিজেসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এই স্যানিটাইজার বোতল ও মোড়কজাত করনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিজেসির দপ্তর কমিটি। মার্চ ২২, ২০২০; বিজেসির নিজস্ব হ্যান্ড স্যানিটাইজার পৌছে যায় সম্প্রচার সাংবাদিকদের হাতে। বিজেসির এই মানবিক উদ্যোগ মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোম মাধ্যমে সাংবাদিক গ্রুপ ও পেজগুলোতে আবেগঘন প্রশংসায় উদ্ভাসিত হয়। জয়তু বিজেসি।