ভয়, শঙ্কা আর আনন্দের উন্মাতাল মিশেলে উপস্থিত হলাম নুহাশপল্লীতে
২০ জুলাই ২০২১, ১২:৩৭ পিএম

'হুমায়ুন আহমেদ ক্যানসারে আক্রান্ত!' খবরটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে কেমন এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা ছুঁয়ে যায়।
চোখ বন্ধ করে প্রিয় লেখকের অসুস্থ মুখটা কল্পনা করতে চেষ্টা করি। লেখকের ছবি কল্পনায় আসে না। কল্পনায় ভিড় করে হিমু, রূপা, শুভ্র, কঙ্কা, তিতলি, আনিস ভাই, মুনা, বাকের ভাই, মিসির আলী। আমি তাদের সঙ্গে করে ফিরে যাই আমার ফেলে আসা শৈশব-কৈশোরে। সেই কিশোরী বয়সে বাবা মা’র চোখ এড়িয়ে একেকটি বই পড়ছি আর কাঁদছি হাপুস-হুপুস করে।
নিলু, পারুলের জন্য মায়া হয়। নিজেকে কখনো রূপা কখনো কঙ্কা তিতলি ভেবেছি। কেন যে মুনা ভেবে উঠতে পারিনি। অতটা সংগ্রাম অতটা দুঃখ কি সইতী না পারার ভয় ছিল আমার? হবে বোধ হয়।
স্যারের অসুস্থতার ভালোমন্দ নানারকম খবর আসে। কায়মনে প্রার্থনা করি তখন। যেন সব মিথ্যে হয়ে যায়। স্যার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন নিশ্চয়ই। চিকিৎসার ফাঁকে কিছুদিনের জন্য দেশে আসেন। অফিসের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে চলে যাই ইন্টারভিউ নিতে। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। ভেতরে ভেতরে কেমন এক অদ্ভুত ঘোরলাগা। আমি স্যারকে সরাসরি দেখব, কথা বলব! আমার জিজ্ঞাসার জবাব দেবেন স্যার! ভয়, শঙ্কা আর আনন্দের উন্মাতাল মিশেলে উপস্থিত হলাম নুহাশপল্লীতে।
আমি বসে আছি। প্রিয় নুহাশপল্লীর আলো বাতাস, গাছ, মাটি, ঘাস, পুকুর, জল, টিনের চাল সবাই যেন আমার সঙ্গে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর স্যার এলেন। অত্যন্ত সহজভাবেই কথা বললেন আমার সঙ্গে। গাঢ় মমতা মেশানো সেসব কথা! কী কী কথা! কিছু বোধ হয় শুনলাম, আর কিছু বোধ হয় উত্তেজিত মস্তিষ্ক হারিয়ে ফেলল। স্যার আমার সামনে!
কেমো’র জন্য শুকিয়ে গেছেন। কালোও হয়ে গেছেন।
কী যে খারাপ লাগছিল আমার। সেই শরীর নিয়েই পুরো নুহাশপল্লী ঘুরিয়ে দেখালেন। একটি গাছের পাতা খেতে দিলেন। বললেন, খেয়ে বলো এটা কী গাছ? নানা ধরনের ঔষধি গাছ দিয়ে নুহাশপপ্লী সাজানো। একটা রুমের সামনে নিয়ে বললেন, এই রুমে ভূত আছে৷ পরে কাহিনী শোনালেন। রুমের ভিতর ছবি তুললে আসে না। অনেকেই বিশ্বাস করেনি। তাই তারা রাতে থাকতে চেয়েছে রুমে। পরে ভয় পেয়ে পালিয়ে এসেছে। এমন নানা গল্প শোনালেন।
বললেন, তাঁর স্বপ্নের কথা। দেশ নিয়ে তরুণ প্রজন্ম নিয়ে অনেক আশাবাদ ব্যক্ত করলেন। দেশের মাটি, প্রকৃতি কতটা প্রিয়, পৃথিবীর কোথাও এতটা শান্তি তিনি পান না। অসুস্থ হওয়ার পর মানুষ যে তাঁকে কতোটা ভালোবাসে সেটা বুঝেছেন। কত মানুষের কত চিঠি, কত মানুষ কত খাবার পাঠিয়েছেন! মাঝে মাঝে পাশে বসে থাকা শাওন আপু চিকিৎসার অবস্থা, স্বাস্থ্যের অবস্থা জানাচ্ছিলেন।
স্যার আজ নেই। কিন্তু রয়ে গেছেন আমার ভেতরে। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে স্যারের সেদিনের সেই সাক্ষাতকার গ্রহণ যে আমার জন্য কত বড়ো প্রাপ্তির, আজ স্যারের অনুপস্থিতে তা বুঝতে পারি।
মতান্তর এর আরও লেখা

মানসম্মত টকশোর জন্য যা যা দরকার

নিউ মিডিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টিভিগুলোর করণীয়

হলি আর্টিজান নিয়ে চলচ্চিত্র- জাতীয় ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া

আমি মারা গেলে আমার কবরে একটা টিনের চোঙ্গা রেখে দিস

পনেরো আগস্ট : ষড়যন্ত্রের পথ ধরে জন্ম নেয়া ট্র্যাজিডি

নির্বাসনে নৈতিকতা

সায়মন: সাদা লম্বা খাঁটি বাংলাদেশি!
