ঢাবির শতবর্ষঃ অর্জন এবং স্মৃতিকথন
০১ জুলাই ২০২১, ১০:২১ পিএম
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম জন্মদিন। প্রতিষ্ঠানটির শ্রেষ্ঠত্ব ১৯২১ থেকে আজ অব্দি একই আছে৷ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি উপমহাদেশের শিক্ষা বিস্তারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে তখন এগিয়ে এসেছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ, এ কে ফজলুল হক ও নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী প্রমুখগণকে, প্রতিষ্ঠা থেকে বর্তমান পর্যন্ত শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাবৃন্দদের প্রতি। খুব গর্বিতবোধ করছি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সুযোগ পেয়ে৷ আরো গর্বিত যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ তম সমাবর্তনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ সর্বোপরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম বার্ষিকী দেখে। খুব অজো পাড়া-গায়ে থেকে উঠে আসা ঢাবির শিক্ষার্থী আমি। হারিকেনের আলো দিয়ে পড়াশুনা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাবা স্কুলের শিক্ষক ছিলেন ও বড় ভাই-বোনেরা যেহেতু পড়াশুনা করতেন তাদের দেখেই লেখাপড়া করার উৎসাহ পেতাম। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনুপ্রেরণা পেতাম আমার এক জেঠাতো ভাইয়ের গাউন পরা ছবি ও গ্রামের অন্য এক বড় ভাইয়ের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে নেয়া স্বর্ণপদকের ছবি দেখে। প্রায় তাদের বাসায় গিয়ে এক নজর ছবিগুলো দেখতাম ও সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারি এবং গাউন পরহিত ছবি আমারও থাকে। এতে আমার পড়ার স্পৃহা আরো বেড়ে যেত। এস.এস.সি পাশ করার পর ঢাকায় যখন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হই এবং এ কলেজের প্রায় শিক্ষক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং নানা গল্প শুনাতেন। পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছে ছিলো মেডিকেলে পড়াশুনা করি কিন্তু আমার ইচ্ছেটাই শেষ পর্যন্ত পূর্ণ হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম দিকে কলা ভবনে বিভাগ, ক্লাসরুম, আরসি মজুমদার অডিটোরিয়াম, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বই খুঁজতে খুব সমস্যা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক মহোদয়গণ ক্লাসে নানা উপদেশ দিতেন। তাদের আদেশ-উপদেশেরগুলো খুব গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে পড়াশুনা করতাম ও পড়াশুনা ফাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। ফলে বিভাগের ফলাফল বরাবর সন্তোষজনক ছিল। স্নাতক তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নের সময় জানতে পারলাম যে, বিভাগের প্রতিটি ব্যাচে যে প্রথম হবে সে স্বর্ণপদক পাবে। সেটা সমাবর্তনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রদান করবেন। সেদিন থেকেই আমার নতুনভাবে যুদ্ধে চলা শুরু। অবশেষে সম্মান ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে সম্পন্ন হয়। এরপর হঠাৎ শুনতে পাই যে, উভয় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মানের ডীনস পদকের জন্য আমি মনোনীত হই এবং তা নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রহণ করি৷ এরপর আসে সমাবর্তন! বি এন সি সি করার সুবাধে সমাবর্তনে ডিউটি করেছি তবে গাউন পরে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করার মজাই আলাদা! সেটার ভিন্ন মাত্রা যোগ হয় যখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করা। পরপর দু'বার সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করি এবং দু'বার স্বর্ণপদক গ্রহণ করি। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে চায়না-বাংলাদেশ যুব ক্যাম্প ও নেপাল ইয়ুথ ফ্ল্যাশ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করি। এতে বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশকে তুলে ধরেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করি জানা, শেখা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য। আমার সকল অর্জনের জন্য আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার বাবা-মা, ভাই-বোন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, আমার পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ এবং আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী ও আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি। প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যা শিখছি এবং পেয়েছি তা ঋণ কখনো শেষ করতে পারব না। তবে নীতি-নৈতিকতার মধ্যে থেকে সব সময় চেষ্টা করব সেরা বিদ্যাপীঠের মান-সম্মান দেশ-বিদেশে তুলে ধরবার। আশা করি করোনা মহামারী অচিরে শেষ হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবারো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। জয়তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়...
লেখকঃ রোমানা পাপড়ি এম.ফিল গবেষক পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।