রোজিনার মুক্তি চাই, কোনো শর্ত ছাড়াই


রোজিনার মুক্তি চাই, কোনো শর্ত ছাড়াই

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম দেশকে ভালোবাসেন। রোজিনা আমাদের বন্ধু, আমরা একই ব্যাচের শিক্ষার্থী।
 
একবার আমাকে নক করে বললেন: ‘জুলহাস ভাই, বিদেশে যাবার জন্য আপনার কাছ থেকে একটা রিকমেন্ডেশন লাগবে, যদি সম্ভব হয় তাহলে কৃতজ্ঞ থাকবো।’
 
আমি ভাবলাম হয়তো বিদেশ চলে যাবেন একেবারে। অনেকেই যাচ্ছেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
 
উত্তরে রোজিনা বললেন: ‘না, না, ভাই, নর্থ আমেরিকায় সাংবাদিকতার উপর একটা স্কলারশীপের চেষ্টা করবো, সেজন্য একটা রিকমেন্ডেশন দরকার, আপনার কাছ থেকে পেলে ভালো হয়।’
 
বললাম: ‘কোনো সমস্যা নেই, অবশ্যই দিব।’
 
তার বক্তব্যে পরিষ্কার আবেগ ছিল যে তিনি দেশকে ভালোবাসেন। বলছিনা যে, কেউ বিদেশে চলে গেলে তিনি দেশকে ভালোবাসেন না। আমার কাছে মনে হয়, দেশের মধ্যে বিদ্যমান সকল অরাজকতা, অন্যায়, দুর্নীতি, যা ইচ্ছা তাই থাকার পরও এবং বাইরে চলে যাবার সুযোগ থাকার পরও যারা এখানেই পড়ে থাকতে চান এবং থাকেন, তারা একটু বেশিই দেশপ্রেমিক। রোজিনাও সেই দলেই পড়েন। আগুনের কুন্ডলির মাঝখানে আটকা থেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা সহজ কাজ নয়।
 
তাছাড়া নারী হয়ে এমন শক্তভাবে সাংবাদিকতা করার সাহস দেখানো অতো সহজ নয়। দুই একটা হুমকি ধামকিতেই গুটিয়ে যাবার কথা। রোজিনা কখনো দমে গেছেন বলে আমাদের জানা নেই। তার সকল চেষ্টা প্রশাসনের বড় কর্তাদের নানা অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির ভেতরে আঘাত করা। জনগণের সামনে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। সেটাকে তিনি দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছেন। তার যে সাহস সেই সাহস আমাদের অনেকের আছে কি না সন্দেহ আছে আমার।
 
সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম প্রশাসনের অনেক কর্তাব্যক্তির কমফোর্ট জোন এলোমেলো করে দেবার একজন সৈনিক। আর তার কাজের ফলে আমার ধারণা সবচেয়ে বেশি সুবিধা হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। যারা উনার চোখের সামনে পর্দা তুলে রাখতে চান যেনো সবকিছু তিনি দেখতে না পান, জানতে না পারেন, তারা একজন রোজিনা ইসলামকে সহ্য করতে পারবেননা, সেটাই কি স্বাভাবিক না? তাই তাকে শায়েস্তা করতে না পারলে বড় বড় নানা দুর্নীতির অভিযোগে নিমজ্জিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেই দুষ্টচক্র শান্তি পায় কি করে?
 
করোনা শুরু হবার পর থেকে এই মন্ত্রণালয় নিয়ে যত রকমের খবর বেরিয়েছে সেগুলোর পোস্ট মর্টেম করলেতো আর কিছুই বাকি থাকেনা।
 
রোজিনার মুক্তি চাই, কোনো শর্ত ছাড়াই।