স্মৃতিতে সঞ্জীব চৌধুরী


স্মৃতিতে সঞ্জীব চৌধুরী

“বুক জুড়ে এই বেজান শহর/ হা হা শূন্য আকাশ কাঁপাও/ আকাশ ঘিরে শঙ্খচিলের শরীর চেরা কান্না থামাও/ সমুদ্র কি তোমার ছেলে/ আদর দিয়ে চোখে মাখাও”- এমন অনবদ্য অনেক কথা ও গান রেখে গেছেন ক্ষণজন্মা এই সাংবাদিক-সঙ্গীত শিল্পী।

গানের মানুষ হিসেবে সমাদৃত হলেও সঞ্জীব চৌধুরী পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা সঞ্জীব চৌধুরী আশির দশকে সাংবাদিকতা শুরু করেন। আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, যায়যায়দিনসহ বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি শুরুর দিকে ‘শঙ্খচিল’ নামের একটি দলে সংগীতচর্চা করতেন। এরপর ১৯৯৬ সালে শিল্পী বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে গড়ে তোলেন ব্যান্ড ‘দলছুট’। সঞ্জীব চৌধুরী ও বাপ্পার যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই ব্যান্ডের অ্যালবামগুলো হলো- আহ্ (১৯৯৭), হৃদয়পুর (২০০০), আকাশচুরি (২০০২) ও জোছনা বিহার (২০০৭)।

সঞ্জীব চৌধুরীর গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে- ‘বায়োস্কোপ’, ‘আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ’, ‘আমি তোমাকে বলে দেব’, ‘রিকশা’, ‘কথা বলবো না’, ‘সাদা ময়লা রঙ্গিলা পালে আউলা বাতাস খেলে’, ‘চোখ’, ‘তখন ছিল ভীষণ অন্ধকার’, ‘আহ ইয়াসমিন’ ‘তোমার ভাজ খোল আনন্দ দেখাও’, ‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায়’ প্রভৃতি।

সঞ্জীবের গাওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের ‘গাড়ি চলে না’ এবং ‘কোন মেস্তরি বানাইয়াছে নাও’ গান দু’টি বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়।  

তুমুল রাজনীতি সচেতন মানুষ ছিলেন সঞ্জীব চৌধুরী। ঢাকা কলেজে পড়ার সময় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আরও গভীরভাবে ছাত্র ইউনিয়নের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে উঠেন। 

১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সঞ্জীব চৌধুরী । দারুণ মেধাবী সঞ্জীব ছোটবেলায় হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। এরপর ঢাকার বকশী বাজার নবকুমার ইন্সটিটিউটে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১২তম স্থান অর্জন করেন।

১৯ নভেম্বর ছিলো সঞ্জীব চৌধুরীর ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৭ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান ক্ষণজন্মা এই মানুষটা। 

সঞ্জীব গানে গানে বলে গেছেন মানুষের জীবন-গাথা। প্রেম, বিরহ, সমাজ, রাজনীতি, প্রতিবাদ, দ্রোহ সমানভাবে তার গানে লেপ্টে আছে। সঞ্জীব চৌধুরীর শারীরিক উপস্থিতি নেই। কিন্তু তার সৃষ্টি সদা চলমান। সদা প্রাসঙ্গিক।