সাংবাদিকতায় নক্ষত্রপতন !!!


সাংবাদিকতায় নক্ষত্রপতন !!!

মুরশিদুজ্জামান হিমু

একসময় অনেকে জিজ্ঞেস করতেন, ‌'আচ্ছা আপনি তো সাংবাদিক; বলুন তো আমেরিকা কি শেষ পর্যন্ত ইরাকের ওপর হামলা চালাবে?' অথবা কেউ প্রশ্ন করতেন, 'আচ্ছা এরশাদ তো বেশ বিপদে; এবার কার সাথে নির্বাচন করবেন তিনি?' কেউ আবার জিজ্ঞাসা করতেন, এবার চালের দাম বাড়বে কিনা, দেশে বন্যা হবে কিনা, এসবও।

কারণ, বেশিরভাগেরই ধারণা ছিল, সাংবাদিকরা কমবেশি সব খবর রাখেন। কথা বলেন নিজের ক্ষুরধার বিশ্লেষণ দিয়ে। যদিও আজকাল সাংবাদিকদের যোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, জানার পরিধি নিয়েও। তবে, এসব যারা প্রশ্ন করেন, তাদের বল সপাটে ছক্কা হাঁকানোর মানুষ ছিলেন মিজানুর রহমান খান।

জীবনটা এমনই। এই যেমন লিখে ফেললাম 'ছিলেন'। আসলেই তো, আজ আছি, কাল নেই। তবে, তার মাঝেও মিজান ভাইয়ের মতো লোকজন সবার মাঝে থেকে যান। স্বশরীরে না থেকেও বার বার আসেন আলোচনায়। উদাহরণ হয়ে থাকেন, উদাহরণ হয়ে আসেন।

কেন বললাম, তারই একটা উদাহরণ দিয়ে দেই। কিছুদিন আগে প্রথম আলো'য় একটা কলাম লিখেছিলেন তিনি। সিলেটে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান হত্যা নিয়ে। ওই ঘটনায় ২০১৩ সালের আইনে যে মামলাটি হয়েছে, তা থেকে কিভাবে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা ভবিষ্যতে মাত্র তিন লাখ টাকার বিনিময়ে ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন, তা রীতিমত হিসেব কষে, যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন লেখায়। একটি এজাহারকেও ভবিষ্যতে কাজে লাগিয়ে আসামিরা কীভাবে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেন, তা কী পানির মতো সরল করে বুঝিয়েছেন। একটা কলাম যে এত তথ্যবহুল হতে পারে, তা শুধু পড়েছি আর ভেবেছি। মাস দেড়েক আগে আদালতে ধর্ষণ মামলার আসামির সাথে ভুক্তভোগীর বিয়ে সম্পর্কিত লেখাটি নিয়ে তো এক সহকর্মীর সাথে আলোচনা হয়েছে দীর্ঘসময়।

হ্যা, মিজানুর রহমান খানরা এভাবেই আলোচনায় থাকেন। লেখার মাধ্যমে ঋদ্ধ করেন পাঠকদের। আমাদের মতো সাংবাদিকতায় অনুজদেরও।

সম্প্রতি তার এক সহকর্মী ( যিনি আমারও সাবেক সহকর্মী) লিখেছেন, সাংবাদিকতার সূত্রে কত শত বড় বড় মানুষকে তিনি চেনেন। তাকে চেনেন আরও বেশি মানুষ। অথচ আপাদমস্তক একজন গণমাধ্যমকর্মী মিজান ভাই তার সততা থেকে বিচ্যুত হননি কখনও। তা না হলে অন্তত ঢাকা শহরে একটি ফ্ল্যাটের মালিক থাকতেন তিনি।

তার সহকর্মীদের কাছ থেকেই জানা, খুব উচ্চস্বরে, প্রাণখুলে হাসতে পারতেন মিজান ভাই। আসলেই আইন-কানুনের মতো এত কাটখোট্টা বিষয় নিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা ভেবেও কেউ এমন শিশুর মতো মনভোলানো হাসি হাসতে পারেন!

কারও সাতে-পাঁচে থাকতেন না তিনি। কারও পেছনে লাগতেন না। করতেন না দলবাজি। থাকতেন কাজ নিয়ে। পরিচিত কারো চাকরি নেই, নিজের যোগাযোগ অনুযায়ী তার জন্য চেষ্টা করতেন। আমার পরিচিত একজনের চাকরির জন্য কী-ই না করেছেন।

এমন বড়ভাই-সহকর্মী দিন দিন কমে যাচ্ছে। যেমন মিজান ভাই-ই চলে গেলেন।

 

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী