মুসলিম বিশ্বে ভাস্কর্য!


মুসলিম বিশ্বে ভাস্কর্য!

বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষ তার চিন্তাশক্তির সৃষ্টিশীলতা প্রকাশ করতে পারে। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এই চিন্তাশক্তি প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ভাস্কর্যশিল্প। যা একটি দেশের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ বটেও। বিভিন্ন সময় মূর্তি ও ভাস্কর্য পৃথিবীর ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরব বহন করে। তুলে ধরা হয় হাজার বছরের ইতিহাস। মুসলিম বিশ্বেও রয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য। সেখানে ফুটে উঠেছে ইতিহাসের বীরত্বগাথা, মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধা আর নিজ সংস্কৃতির নানা দিক। রয়েছে আলাদা কদর।
এছাড়াও, আসলে একটি দেশ যখন গঠন হয় তখন আসলে কি নিয়ে তৈরি হয়? সেই দেশের যে নিজস্ব স্বকীয়তা আছে, সেটিই বা কিভাবে ফুঁটে উঠে? ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সাক্ষী কে বহন করে?
উপরের এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে বলা যেতেই পারে, ভাস্কর্য তার একটি মোক্ষম উপাদান। সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, ইরাকের মতো দেশগুলোতেও দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যে দেখা মিলে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কালচার। এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বয়ে নিয়ে যায় দেশটির সৌন্দর্য, কৃষ্টি কালচার, মানুষে মানুষে বন্ধন। মুসলিম দেশগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। কট্টর মুসলিম প্রধান দেশ সৌদি আরব থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া, মিশর, ইরান, ইরাক, তুরস্ক, কাতার এরকম বহু দেশ আছে তারা তাদের সংস্কৃতিকে বহন করে চলেছে এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে।
মক্কা-মদিনার দেশে ভাস্কর্য!
ইসলামের পূর্ণময় ভূমি সৌদি আরবকে ধরা হয়, কারন ইসলাম ধর্মের পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনা এই দেশে অবস্থিত। শতভাগ মুসলমানের দেশ সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম রাষ্ট্র। রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ আল সউদের নামানুসারে এ দেশের নামকরণ করা হয়েছে। এ দেশে প্রচলন ছিলো, আছে- উট এবং ঘোড়ার। সেই আদলেই সেখানে দেখা যায় উট, ঘোড়া বা গাংচিলের ভাস্কর্য। রাজধানী জেদ্দার উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে নগরীতে মুষ্টিবদ্ধ হাত, হাংরি হর্স, মানব চোখ, মরুর বুকে উটের ভাস্কর্য।
সৌদি আরবে উটের ভাস্কর্য
ইসলাম ইতিহাসের স্বর্ণযুগ ইরাকে মূর্তি!
মুসলিম দেশের মধ্যে ইরাকের অবস্থান অবস্থান ১২। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। এই দেশেই পাওয়া গেছে ৭ হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতির সন্ধান। সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া ধর্মাবলম্ব্বী। তবে সুন্নি ধর্মাবলম্ব্বী প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ১৯৭৯ সাল থেকে ২০০৩ সাল, ২৪ বছর ইরাকের রাষ্ট্র-ক্ষমতায় ছিলেন। তখন ইরাকের আনাচে-কানাছে ছিল সাদ্দাম হোসেনের নানান মূর্তি। সরকার পতনের পরও ভাস্কর্যহীন হয়নি ইরাক। প্রচুর ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যের মালিক দেশটি। রাজধানী বাগদাদে বেশকিছু বিখ্যাত মূর্তি রয়েছে। সেগুলো হলো : ইন্টারন্যাশনাল জোনে হাম্মুরাবির মূর্তি। বাগদাদ শহরের আবু নুয়াস স্ট্রিটে শাহেরজাদি পার্কে রয়েছে আরব্য উপন্যাসের প্রধান চরিত্র শাহেরজাদি এবং রাজা শাহরিয়ারের মূর্তি। এছাড়াও বাগদাদে আলীবাবা স্কয়ারে আলীবাবা ফাউন্টেনে সেই আলিবাব আর ৪০ চোরের মর্জিনার মূর্তির দেখা মিলবে ।
মর্জিনার মূর্তির দেখা মিলবে বাগদাদে আলীবাবা স্কয়ারে
সুলতান সালাদিনের ভাস্কর্য ইরাকে!
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া। জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। সুন্নি প্রধান এই দেশেও রয়েছে শিয়া-সুন্নি-কুর্দি দ্বন্দ্ব। অন্যান্য স্বৈরতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মতো সিরিয়াজুড়ে রয়েছে রাষ্ট্রপতি হাফিজ আসাদের মূর্তি। সিরিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত ভাস্কর্যটি হলো বীর মুসলিম সেনাপতি সালাদিন। তার জন্ম হয়েছিলো ১১৩৭ সনে, আর মৃত্যু ১১৯৩। ৪ মার্চ, ১৯৯৩ সালে সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফিজ আসাদ কুর্দি বংশোদ্ভূত সুলতান সালাদিনের ৮০০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন। ঐতিহাসিক ভাস্কর্যটির ভাস্কর আবদুল্লাহ-আল-সাঈদ।
সিরিয়ায় সবচেয়ে বিখ্যাত ভাস্কর্য‘স্ট্যাচু অব সালাদিন’
সবচেয়ে বেশী মুসলিমের দেশ ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে ভাস্কর্য!
মুসলিমের সংখ্যা অনুযায়ী বিশ্বে প্রথম ইন্দোনেশিয়া। বিশ্বে যত মুসলিম আছে তার মোট শতকরা ১২.৯ ভাগ বাস করে ইন্দোনেশিয়ায়। সংখ্যার বিচারে এর পরই রয়েছে যথাক্রমে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ। দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় সাড়ে সতেরো হাজার দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬ হাজার দ্বীপে মানুষ বসতি স্থাপন করেছে। বালির ডেনপাসার এলাকায় মূল সড়কে অবস্থিত আছে ভাস্কর্য। এছাড়াও গোটা দেশ জুড়েই আছে ভাস্কর্য। এর মধ্যে বালিতে ভাস্কর্যের সংখ্যা বেশি।
ভাস্কর্যটি বালির ডেনপাসার এলাকার মূল সড়কে অবস্থিত
ইরানের রাজপথে মনীষীর ভাস্কর্য শিল্প!
পৃথিবীর যত বৃহৎ সভ্যতা রয়েছে তার মধ্যে ইরান অন্যতম। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় পারস্যের ইতিহাসের সূচনা প্রায় এক লাখ বছর আগে থেকে। ইরানে প্রচুর উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য শিল্প রয়েছে। বেশির ভাগই ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের স্মরণে নির্মিত। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—তেহরানের ফেরদৌসী স্কয়ারে স্থাপিত মহাকবি ফেরদৌসীর মূর্তি, ইরানের হামাদানে ইবনে সিনার মূর্তি, তেহরানের লালেহ পার্কে ওমর খৈয়ামের ভাস্কর্য, কবি হাফিজের ভাস্কর্য, খোরাসানের মাসাদে নাদির শাহর মূর্তি। এছাড়াও রয়েছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি বা ইমাম খোমেনির একাধিক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল রয়েছে ইরানে।
ইরানের পথে পথে ভাস্কর্য
বাদ যায়নি পাকিস্তানও!
কট্টর ইসলাম পন্থী দেশ পাকিস্তানের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি। এ দেশেও রয়েছে শিয়া-সুন্নি প্রবল দ্বন্দ্ব। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন কট্টরপন্থিদের শক্ত অবস্থান। তবে এই দেশেই রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে অব্যাহত রয়েছে ভাস্কর্য শিল্পের অগ্রযাত্রা। বিভিন্ন সময় এখানে ভাঙা হয় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের পূজনীয় মূর্তি, ধ্বংস করে দেওয়া হয় মহামূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক ভাস্কর্য। তারপরও পাকিস্তানে রয়েছে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মূর্তি; রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য শিল্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনের সামনে ষণ্ডমূর্তি, লাহোরে বাদশাহি মসজিদের পার্শ্বে মেরি মাতার মূর্তি, পাঞ্জাবের জং শহরের রাস্তায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়সওয়ারের মূর্তি, লাহোরে ন্যাশনাল কলেজ অব আর্টস প্রাঙ্গণের নানা মূর্তি।
পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনের সামনে ষণ্ডমূর্তি
আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র মালয়েশিয়ায় আছে মনুমেন্ট!
আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে যে দেশটার নাম চোখে ভেসে আসে তা হচ্ছে মালয়েশিয়া। যাদের সাফল্য চোখধাঁধানো। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত ভাস্কর্য হলো ওয়াশিংটন মনুমেন্টের আদলে গড়া ন্যাশনাল মনুমেন্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শহীদ হওয়া বীরদের স্মরণে ১৫ মিটারের এই ভাস্কর্যটি উন্মুক্ত করা হয় ১৬৬৩ সালে। প্রতীকীভাবে সাতজন বীরের প্রতিমূর্তির মাধ্যমে বিশ্বস্ততা, আত্মত্যাগ আর বন্ধুত্বের বিষয়টি এই ভাস্কর্যের মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হলো বাতু কেভসের বিখ্যাত মুরুগান মূর্তি, কুচিং হলিডে ইন হোটেলের সামনে মার্জার মূর্তি এবং কনফুসিয়াসের মূর্তি।
মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত ভাস্কর্য হলো ন্যাশনাল মনুমেন্ট
সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছে কুকুরের মূর্তি!
আবুধাবি, আজমান, দুবাই, আল ফুজাইরাহ, রাআস আল খাইমাহ, আশ শারিকাহ এবং উম্ম আল কাইওয়াইন নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত। আবুধাবি শহর ফেডারেশনের রাজধানী এবং দুবাই দেশটির বৃহত্তম শহর। ৫০ লাখের অধিক জনসংখ্যার দেশটি বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। ৭৬ শতাংশ মুসলিম মানুষের দেশে উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হলো : বুর্জ আল খলিফার বিপরীতে সংস্থাপিত আরবীয় যুগলের মূর্তি, দুবাইয়ের ওয়াফি অঞ্চলের প্রবেশপথে পাহারাদারের প্রতিমূর্তি হিসেবে সংস্থাপিত কুকুরের মূর্তি, দুবাইয়ের ইবনে বতুতা মার্কেটে স্থাপিত মূর্তি।
বুর্জ আল খলিফার বিপরীতে সংস্থাপিত আরবীয় যুগলের মূর্তি
কামাল আতাতুর্কের মূর্তি তুরস্কজুড়ে!
ইউরোপ ও এশিয়ার সঙ্গমস্থলে অবস্থিত বলে তুরস্কের ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিবর্তনে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়েছে। গোটা মানব সভ্যতার ইতিহাসজুড়েই তুরস্ক এশিয়া ও ইউরোপের মানুষদের চলাচলের সেতু হিসেবে কাজ করেছে। তারপরও স্থাপত্য, চারুকলা, সংগীত ও সাহিত্যে তুরস্ক নিজস্ব পরিচয়ের সৃষ্টি করতে পেরেছে। দেশটিতে ৯৯.৮ শতাংশ মুসলিম। এককালের সারা মুসলিম জাহানের খলিফার দেশ সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে ইসলামী দল। সারা তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্কের রয়েছে অগণিত মূর্তি। কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য ছাড়াও তুরস্কের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হলো : মর্মর সাগর তীরে পোতাশ্রয়ে অপূর্ব মর্মর মূর্তি, আঙ্কারাতে ইন্ডিপেনডেন্স টাওয়ারের পাদদেশে তুরস্কের জাতীয় সংস্কৃতির ধারক তিন নারী মূর্তি ও আন্তালিয়ায় এডুকেশন অ্যাক্টিভিস্ট তুরকান সায়লানের মূর্তি।
তুরস্কজুড়ে প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্কের অগণিত মূর্তি
হারনেসিং দ্য ওয়ার্ল্ডে দৃষ্টিনন্দন কাতার!
পারস্য উপসাগরের একটি দেশ কাতার। প্রায় সাড়ে সাত লাখ অধিবাসীর দেশটি পেট্রোলিয়ামের আয় থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি। মোট জনসংখ্যার ৭৭.৫ শতাংশ মুসলিম। শাসন ব্যবস্থা রাজতন্ত্র। উচ্চ আয়ের জন্য কাতারেও দেখা যায় ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন সব ভাস্কর্য ও স্থাপত্য। কাতারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হলো ‘হারনেসিং দ্য ওয়ার্ল্ড’, মানে হচ্ছে বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ। কাতারের রাজধানী দোহায় কাতার সংস্কৃতি কেন্দ্রে কাতারা আম্পি থিয়েটারের সামনে স্থাপিত হয় পুরো পৃথিবীকে সংযোগ স্থাপন করা নারী প্রতিমূর্তির অবয়বের এই ভাস্কর্য।
কাতারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হলো ‘হারনেসিং দ্য ওয়ার্ল্ভ্র’
ইসলাম কি বলে!
“তোমরা পরিহার করো অপবিত্র বস্তু অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।” (সূরা হজ্জ : ৩০)। উপরের কোরআনের আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনো প্রাণীর-মূর্তি নির্মাণ করা ইসলামী শরীয়তে কঠিন কবীরা গুনাহ ও হারাম। মূর্তি সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বেচাকেনা বিষয়ও কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। মূর্তিপূজার কথা তো বলাই বাহুল্য, মূর্তি নির্মাণেরও কিছু কিছু পর্যায় এমন রয়েছে যা কুফরী। কেউ কেউ মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে বিধানগত পার্থক্য দেখাতে চান। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোই পরিত্যাজ্য। এই আয়াতে পরিষ্কারভাবে সব ধরনের মূর্তি পরিত্যাগ করার এবং মূর্তিকেন্দ্রিক সকল কর্মকান্ড বর্জন করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আরো লক্ষণীয় বিষয় এই যে, উপরের আয়াতে সকল ধরনের মূর্তিকে ‘রিজস’ শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘রিজস’ অর্থ নোংরা ও অপবিত্র বস্তু। বোঝা যাচ্ছে যে, মূর্তির সংশ্রব পরিহার করা পরিচ্ছন্ন ও পরিশীলিত রুচিবোধের পরিচায়ক। এদিকে সূরা নূহঃ ২৩ আয়াতে কাফের সম্প্রদায়ের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছেঃ ‘এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে।’ এখানে কাফের সম্প্রদায়ের দুটো বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হয়েছে : ১. মিথ্যা উপাস্যদের পরিত্যাগ না করা। ২. মূর্তি ও ভাস্কর্য পরিহার না করা। তাহলে মিথ্যা উপাস্যের উপাসনার মতো ভাস্কর্যপ্রীতিও কোরআন মাজীদে কাফেরদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত। অতএব এটা যে ইসলামে গর্হিত ও পরিত্যাজ্য তা তো বলাই বাহুল্য। উপরের আয়াতে উল্লেখিত মূর্তিগুলো সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, এগুলো হচ্ছে নূহ আ.-এর সম্প্রদায়ের কিছু পুণ্যবান লোকের নাম। তারা যখন মৃত্যুবরণ করেছে তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে এই কুমন্ত্রণা দিয়েছে যে, তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে মূর্তি স্থাপন করা হোক এবং তাদের নামে সেগুলোকে নামকরণ করা হোক। লোকেরা এমনই করল। ওই প্রজন্ম যদিও এই সব মূর্তির পূজা করেনি কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকৃত বিষয় অস্পষ্ট হয়ে গেল এবং পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পূজায় লিপ্ত হলো। (সহীহ বুখারী হাদীস : ৪৯২০)। কোরআন মাজীদে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে পথভ্রষ্টতার কারণ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। সূরা ইবরাহীম, আয়াত ৩৬’এ বলা হয়েছে,‘ইয়া রব, এরা (মূর্তি ও ভাস্কর্য) অসংখ্য মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে!’। অন্য আয়াতে এসেছে : ‘আর তারা বলেছিল, তোমরা পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদের এবং পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ সুওয়াকে, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে। অথচ এগুলো অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে।’ (সূরা নূহ : ২৩-২৪)। কোরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে উপাসনা কর (অসার) মূর্তির এবং তোমরা নির্মাণ কর ‘মিথ্যা’। (সূরা আনকাবুত : ১৭)। মূর্তি ও ভাস্কর্য যেহেতু অসংখ্য মিথ্যার উদ্ভব ও বিকাশের উৎস তাই উপরের আয়াতে একে ‘মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আয়াতগুলো থেকে পরিষ্কার জানা যাচ্ছে যে, মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোই সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য।
** সকল তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত।