টুইন টাওয়ার হামলার ২০ বছর, যা ঘটেছিল সেদিন


টুইন টাওয়ার হামলার ২০ বছর, যা ঘটেছিল সেদিন

ছবি : সংগৃহীত

 

২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ইতিহাসের অন্যতম নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকৃত বিমানকে ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে হামলা করা হয় টুইন টাওয়ারের নর্থ টাওয়ার, সাউথ টাওয়ার ও পেন্টাগনের সদর দপ্তরে। ইতিহাসে এ ঘটনা নাইন ইলেভেন নামে পরিচিত।

 

কী ঘটেছিল?

ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী আল-কায়েদা আফগানিস্তান থেকে এই হামলার পরিকল্পনা করে। মুসলিম বিশ্বে সংঘাত সৃষ্টির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলোকে দায়ী করে এই হামলা পরিচালনা করে তারা। হামলার পরিকল্পনা হিসেবে তারা চারটি বিমান ছিনতাই করে। ছিনকারী দলের মোট সদস্য ছিল ১৯ জন। তিনটি দলে পাঁচজন করে ও একটি দলে চারজন উগ্র ছিনতাইকারী অবস্থান নেয়।

 

ছবি : সংগৃহীত

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা ৪৬ মিনিট। নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুইন টাওয়ার ভবনের নর্থ টাওয়ার বরাবর উড়ে যেতে থাকে একটি বিমান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সরাসরি ভবনে আঘাত হানে বিমানটি। সমগ্র নিউইয়র্কের আকাশ ছেয়ে যায় ধোঁয়ার কুণ্ডুলিতে। অলিতে গলি ছড়িয়ে পড়ে ভয়ার্ত, হতবিহব্বল মানুষের চিৎকার। তখনও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জন্য অপেক্ষা করছিল আরও অনেক কিছু।

সকাল ৯ টা ৩ মিনিটে সাউথ টাওয়ারে আঘাত হানে আরেকটি বিমান। আঘাতের সাথে সাথে আগুন ধরে যায় ভবনে। কিছুক্ষণের মধ্যে চোখের সামনে ধসে পড়ে  ভবন দুটি। দুটি টাওয়ার ভবনই ছিল ১১০ তলা। ধূলার ঝড়ে ঢেকে যায় নিউইয়র্ক। তৃতীয় বিমানটি তখনও ঘুরছে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে।

স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠে প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগন ভবনে আঘাত হানে ছিনতাই করা তৃতীয় বিমান। সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবার অপেক্ষা।

 

ছবি : সংগৃহীত

চতুর্থ বিমানে ছিনতাইকারীর সংখ্যা ছিল চারজন। চারজনের বিরুদ্ধে বিমানের যাত্রীরা বিদ্রোহ করেন। প্রবল প্রতিরোধের মুখে সকাল ১০টা ৩ মিনিটে বিমানটি যাত্রীসহ আছড়ে পড়ে পেনসিলভেনিয়ায়। ধারণা করা হয়, ছিনতাইকারীরা চতুর্থ বিমানটি দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল ভবনের ওপর আঘাত হানতে চেয়েছিল।

হামলাকারী প্রতিটি দলে একজন করে প্রশিক্ষিত পাইলট ছিলেন। দু:খজনক হলেও সত্য যে ছিনতাইকারীরা তাদের পাইলটের ট্রেনিং নেন খোদ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লাইং স্কুলে। হামলাকারী ১৫ জন ছিলেন সৌদি আরবের নাগরিক, দুজন সংযুক্ত আরব আমিরাতের, একজন মিশরের এবং একজন লেবাননের।

 

হতাহতের সংখ্যা

মর্মান্তিক নারকীয় এই হামলায় ১৯ ছিনতাইকারী বাদ দিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা ২,৯৭৭ জন। টুইন টাওয়ারের দুটি ভবনে তাৎক্ষণিকভাবে ও পরে আহত অবস্থায় নিহত হোন ২৬০৬ জন। পেন্টাগনের হামলায় প্রাণ হারান ১২৫ জন।  চারটি বিমানের ২৪৬ জন যাত্রী এবং ক্রুর প্রত্যেকে মারা যান। প্রথম বিমানটি যখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত করে, তখন ভেতরে আনুমানিক ১৭ হাজার ৪০০ জন লোক ছিল।

নিহতদের মধ্যে ৭৭টি দেশের নাগরিক ছিলেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন ৭ জন। এই ২৯৭৭ জনের বাইরেও নিউইয়র্ক শহরে যারা প্রথম ঘটনাস্থলে জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় দৌঁড়ে যান, তাদের মধ্যেও মারা যান ৪৪১ জন।

 

ছবি : সংগৃহীত

নর্থ টাওয়ারের যে অংশে বিমান আঘাত করে, তার উপরের কোনো তলার মানুষই প্রাণে বাঁচেনি। তবে সাউথ টাওয়ারে যেখানে বিমান আঘাত করে, তার উপরের অংশ থেকে ১৮ জন প্রাণ নিয়ে বেরুতে পেরেছিলেন। আর হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন যার সঠিক সংখ্যাটা এখনও বলা সম্ভব হয় না।

 

হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া

হামলার এক মাসেরও কম সময়ে আল-কায়দাকে নিশ্চিহ্ন করতে এবং ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করতে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ আফগানিস্তান আক্রমণ করেন।  মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই অভিযানে যোগ দেয় আন্তর্জাতিক মিত্র জোট। ঘটনার দশ বছর পর ২০১১ সালে মার্কিন সৈন্যরা অবশেষে পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে পায় এবং হত্যা করে। নাইন ইলেভেন হামলার অভিযুক্ত পরিকল্পনাকারী, খালিদ শেখ মোহাম্মদকে পাকিস্তান থেকে ২০০৩ সালে গ্রেপ্তার করা হয় । এরপর থেকে তাকে গুয়ান্তানামো বে'র বন্দীশিবিরে আটক করে রাখা হয়। এখনও তিনি বিচারের অপেক্ষায় আছেন।

 

ছবি : সংগৃহীত

হামলার ঘটনার পর থেকে সারা বিশ্বে বিমান ভ্রমণের নিরাপত্তা জোরদার করে যুক্তরাষ্ট্র। নিউইয়র্কে হামলার স্থান, যেখানে টুইন টাওয়ার বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেই ‘গ্রাউন্ড জিরো’র ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করতে সময় লেগেছিল আট মাসেরও বেশি। ওই স্থানে এখন তৈরি হয়েছে একটি যাদুঘর এবং একটি স্মৃতিসৌধ। ভবনগুলো নতুন করে ভিন্ন নকশায় নির্মাণ করা হয়। সেখানে মধ্যমণি হিসেবে নির্মিত হয়েছে ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা ‘ফ্রিডম টাওয়ার’- যা উচ্চতায় আগের নর্থ টাওয়ারের চেয়েও বেশি। নর্থ টাওয়ারের উচ্চতা ছিল ১,৩৬৮ ফুট আর নতুন ফ্রিডম টাওয়ার ১,৭৭৬ ফুট উঁচু। পেন্টাগন পুনর্নিমাণে সময় লেগেছিল এক বছরের কিছু কম। ২০০২ সালের আগস্টের মধ্যে পেন্টাগনের কর্মচারিরা আবার তাদের কর্মস্থলে ফিরে যান।