“আনফরগটেন”:খুন হওয়া ৫১ নারীর গল্প তুলে আনলেন শিক্ষার্থী-সাংবাদিক


“আনফরগটেন”:খুন হওয়া ৫১ নারীর গল্প তুলে আনলেন শিক্ষার্থী-সাংবাদিক

গোয়েনডোলিন উইলিয়ামস। ছবি: শ্যারন প্রিচেট

গোয়েনডোলিন উইলিয়ামস বেড়ে উঠেছিলেন সাউথ সাইড শিকাগোতে।

তিনি ছিলেন ফ্যাশন অনুরাগী, একজন নৃত্যশিল্পী, ও প্রবল পশুপ্রেমী। খুব পছন্দ করতেন ঘরে বানানো গ্রিট ও ভুট্টার রুটি। ৪৪ বছর বয়সী এই নারী ছিলেন ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবচে বড়। একলা মায়ের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠা উইলিয়ামসই ছিলেন পরিবারের অন্য সবার দেখভালকারী।

২০০২ সালে, উইলিয়ামসকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় রক্তাক্ত অবস্থায়, একটি ডলার স্টোরের পাশে।

২০০১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে পুরো শিকাগোজুড়ে বিভিন্ন পরিত্যক্ত বাড়ি, গলি, হাইওয়ের ধারে ফেলে রাখা অবস্থায় পাওয়া গেছে এমন ৫১ নারীর লাশ, যাদের বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ। অনেকের মৃতদেহই পাওয়া গেছে ছিন্নভিন্ন অবস্থায়। সেগুলো ফেলে রাখা হয়েছিল ময়লা ফেলার ব্যাগে বা ঝুড়িতে। উইলিয়ামস ছিলেন তাদের একজন।

এভাবে হত্যার শিকার হওয়া আধ ডজনের বেশি নারীর “মানবিক স্বরূপ” তুলে ধরে সম্প্রতি একটি অনুসন্ধান করেন কয়েকজন তরুন শিক্ষার্থী-সাংবাদিক। এটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে নিহতদের বোন, খালা ও মায়েরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন।

রুজভেল্ট ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক জন ডব্লিউ. ফাউন্টেন অক্সিজেন ডট কমকে বলেছেন, “তাদেরকে হত্যার দিনক্ষণের চেয়ে, মৃত্যুর আগে তাদের যাপন করা জীবনটি আরো অনেক ঘটনাবহুল ছিল। ‘যদি রক্ত ঝরে, তাহলে পাঠকের আকর্ষণ বাড়ে,’ এই নীতি আমি জানি; কিন্তু এভাবে মানবিক অনেক দিক আমরা হারিয়ে ফেলি।”

নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টের সাবেক সাংবাদিক ফাউন্টেন, “আনফরগটেন: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব মার্ডারড শিকাগো উইমেন” শিরোনামের এই অনুসন্ধানে নেতৃত্ব দেন। বিষয়টি নিয়ে বেশিরভাগ মিডিয়া কাভারেজের কেন্দ্রে ছিল হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর বিবরণ এবং একজন সিরিয়াল কিলারের অস্তিত্ব খোঁজা। এগুলো দেখেই শেষমেষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে এই রিপোর্টিং প্রকল্প শুরু করার উদ্যোগ নেন ফাউন্টেন।

তিনি বলেন, “বেশিরভাগ প্রতিবেদনের মূল মনোযোগ ছিল সিরিয়াল কিলার ধাঁচের চাঞ্চল্যকর বিবরণে। আমি যদি শুধু ‘সন অব স্যাম’, বা ‘জ্যাক দ্য রিপার’, জন ওয়েন গেসি বা রিচার্ড স্পেকের কথা চিন্তা করি, তাহলে ভিকটিমদের নাম মনে রাখা কষ্ট হয়ে যায়। তখন সিরিয়াল কিলারই সব মনোযোগ কেড়ে নেয়।”

সংবাদ ও ট্যাবলয়েড প্রতিবেদনে প্রায়ই এসব হত্যাকাণ্ডের শিকার নারীদের অন্তিম মুহূর্তগুলো তুলে আনা হয়েছে যৌনতাকে জড়িয়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোটা দাগে লিখে দেওয়া হয়েছে, তারা যৌনকর্মী বা মাদকসেবী। কিছু ক্ষেত্রে তা ভুলও ছিল।

ফাউন্টেন বলেছেন, “এই নারীদের যৌনকর্মী ও মাদকসেবী হিসেবে এমন অসঙ্গতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেন তারা ফেলনা। বিষয়টি কিন্তু মোটেও এরকম নয়। তারাও মানুষ। আমরা আমাদের রিপোর্টিংয়ের মধ্য দিয়ে দেখেছি, তাদের সবাই যৌনকর্মী বা মাদকসেবী নন। আর যদি সেটাও হন, তাতেই বা কী যায় আসে?”

২০২০ সালের জানুয়ারিতে ফাউন্টেনের শিক্ষার্থীরা জোটবদ্ধ হন হত্যাকাণ্ডের শিকার এই ৫১ জন নারীর পরিচয় পুনরুদ্ধারের জন্য। পরবর্তী তিন সেমিস্টার ধরে তারা ১০ জন ভিকটিমকে নিয়ে পডকাস্ট তৈরি করেন। সেসব গল্প বেরোয় ছাপা সংস্করণেও। সিরিজটি প্রথম প্রকাশিত হয় গত বছরের শেষে।

২০০৩ সালে, ৫৫ বছর বয়সী যোগ-ব্যয়াম প্রশিক্ষক ও হাইস্কুলের সাবেক চিয়ারলিডিং ক্যাপ্টেন, ন্যান্সি ক্যারোলিন ওয়াকারের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল ছিন্নভিন্ন অবস্থায়, একটি হাইওয়ের পাশে। শিক্ষার্থী রিপোর্টাররা ন্যান্সির স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রেখেছেন নাচের প্রতি তাঁর “নেশা”র জন্য। তারা আরো তুলে এনেছেন রিও রেনি হোলিফিল্ডের জাদুকরী কণ্ঠের কথা, ফোর্থ অব জুলাইয়ের প্রতি তার ভালোবাসার কথা, এবং তার প্রিয় খাবার, পুরোনো ধাঁচের পিনাট বাটার ও জেলি স্যান্ডউইচের কথা। ২০১৮ সালে, হোলিফিল্ডের বিকৃত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় আবর্জনা ফেলার জায়গা থেকে।

ফাউন্টেন বলেছেন, “আমরা এই কেসটি সমাধান করার চেষ্টা করিনি। আমরা শুধু তুলে আনার চেষ্টা করেছি, এই ঘটনায় নিহতরাও মানুষ। আমরা কোনো সিরিয়াল কিলারের দিকে মনোযোগ দেইনি; দেখতে যাইনি, ভিকটিমরা কী কী ভুল করেছেন। আমরা শুধু বলতে চেয়েছি: তারা কে ছিলেন, কিভাবে পরিবার-পরিজন তাদের মনে রেখেছেন। আমরা তাদের মৃত্যুর গল্প নয়, জীবনের গল্প বলতে চেয়েছি। এসবের সঙ্গে অনেক কান্না জড়িয়ে ছিল।”

“আনফরগটেন” প্রকল্পটি গড়ে উঠেছে মার্ডার অ্যাকাউন্টিবিলিটি প্রজেক্টের নির্ভুল, ডেটাভিত্তিক গবেষণাকে কেন্দ্র করে। অলাভজনক এই সংগঠন  কম্পিউটার অ্যালগরিদমের সাহায্যে অমিমাংসিত, কিন্তু নতুন করে তদন্ত করা যায়, এমন হত্যাকাণ্ড সনাক্ত করে। ২০১৯ সালে দক্ষিণ ও পশ্চিম শিকাগোজুড়ে তুলনামূলক কাছাকাছি দূরত্বে যে ৫১ নারীর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল, সেই হত্যাকাণ্ডগুলো এক বা একাধিক সিরিয়াল কিলার করেছে বলে মন্তব্য করেছিল সংগঠনটি। এফবিআইয়ের ডেটা ব্যবহার করে, অ্যালগরিদমের সাহায্যে তারা হত্যাকাণ্ডের “ক্লাস্টার” সনাক্ত করে এবং দেখে যে সেখানে কোনো সিরিয়াল কিলার সম্পৃক্ত থাকার “উচ্চ সম্ভাবনা” আছে কিনা।

মার্ডার অ্যাকাউন্টিবিলিটি প্রজেক্টের প্রতিষ্ঠাতা, থমাস হারগ্রোভ অক্সিজেন ডট কমকে বলেছেন, “৫১ জন নারীকে ৫১ জন আলাদা আলাদা ব্যক্তি খুন করেননি। সাধারণভাবেই এমনটা ঘটেনি।”

সাবেক সাংবাদিক হারগ্রোভ, তাদের তৈরি অ্যালগরিদমকে বর্ণনা করেছেন “সিরিয়াল কিলার ডিটেকটর” হিসেবে।

তিনি আরো বলেছেন, “এক দশক ধরে, [এই অ্যালগরিদম] “সতর্কবার্তা দিচ্ছিল শিকাগোর একটি মার্ডার ক্লাস্টার নিয়ে। যেখানে হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের হার খুবই কম। যখন আপনি হত্যাকারীদের নাম ও ভাষ্য অ্যালগরিদমে যোগ করছেন, তখন এটি চেঁচিয়ে বলছে যে, এখানে সিরিয়াল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আছে। এই নারীদের প্রায় সবাইকেই হত্যা করা হয়েছে বাড়ির বাইরে। এবং তাদের মৃতদেহ ফেলে রাখা হয়েছে আবর্জনা ফেলার ঝুড়িতে, গলিতে, ফাঁকা ভবনে, পরিত্যক্ত জায়গায়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে, ময়লা ফেলার ঝুড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

মার্ডার অ্যাকাউন্টিবিলিটি প্রজেক্টের গবেষণা অনুসারে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ৫১ নারীর মধ্যে মাত্র ১৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ফলে, সেখান থেকে কোনো সাধারণ প্রবণতা ধরা পড়েনি।

কর্তৃপক্ষ এরপরই, সিরিয়াল কিলার জড়িত থাকার সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়।

অক্সিজেন ডট কমকে দেয়া বিবৃতিতে শিকাগো পুলিশ বিভাগের (সিপিডি) এক মুখপাত্র বলেছেন, “প্রতিটি কেসই গোয়েন্দারা পর্যালোচনা করে দেখছেন। তারা এফবিআইয়ের ভায়োলেন্ট ক্রাইমস টাস্ক ফোর্সের কাছে রিপোর্টও করেছেন। ঘটনাগুলো যে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত- এমন কোনো প্রমাণ নেই। এমন কিছুও নেই যা থেকে কোনো সিরিয়াল কিলারের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। গোয়েন্দারা আলাদা আলাদাভাবে প্রতিটি মামলা তদন্ত করছেন। নিহত ও তাদের পরিবারের পক্ষে ন্যায়বিচারের জন্য সিপিডি কাজ করছে।”

তবে, হারগ্রোভ বলেছেন, ২০০০ সাল থেকে শিকাগোতে হাজারো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অমিমাংসিত থেকে গেছে। এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করে, তিনি রুজভেল্টের সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।

“ঘটনাগুলোর মানবিক দিক তুলে আনা এবং এই হাজারো অমিমাংসিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বেদনাদায়ক সত্য তুলে আনাকে আমাদের একটি ভালো কাজ বলে মনে হয়েছিল। আমরা আসলে এটি দেখে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম যে, কত সহজেই হত্যাগুলো অমিমাংসিত থেকে যায়। এবং ভয়ের ব্যাপার যে, এই অমিমাংসিত থাকার ঘটনাই বেশি। শিকাগোতে বেশিরভাগ হত্যায় কেউ গ্রেপ্তার হয় না। এভাবেই চলে আসছে লম্বা সময় ধরে,” বলেছেন হারগ্রোভ।

গোয়েনডোলিন উইলিয়ামসকে দেখা যাচ্ছে একটি পারিবারিক ছবিতে। ২০০২ সালে তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই মৃত্যু রহস্যের বদলে বরং তাঁর জীবনের নানা গল্প তুলে এনেছেন ২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী সামান্থা ল্যাটসন। ছবি: শ্যারন প্রিচেট

গোয়েনডোলিন উইলিয়ামস জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৫৭ সালে, অ্যালাবামার বার্মিংহামে। জাতিগত বৈষম্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে, ১৯৬৫ সালে, তিনি ও তাঁর মা শিকাগোতে স্থায়ী বসতি গড়েন। তাদের বাড়িটি ছিল পুরোনো কোমিস্কি পার্কের বিশাল বেসবল স্টেডিয়ামটির পাশের রাস্তায়।

১৯৭০-এর দশকে তিনি বিয়ে করেন ভিয়েতনাম যুুদ্ধফেরত এক সৈনিককে। পরবর্তীতে তিনি বিধবা হন। জীবনের শেষপর্যায়ে, উইলিয়ামস মানসিক স্বাস্থ্যজনিত ইস্যুতে ভুগছিলেন বলে জানায় তার পরিবার।

উইলিয়ামসের ছোট বোন শ্যারন প্রিচেট অক্সিজেন ডট কমকে বলেন, “তার মতো বড় বোন যে কোনো মেয়েই পেতে চাইবে। তিনি আমার জন্য যে কোনো কিছু করতেন। তিনি নিজের ভাই-বোনদের জন্য সবসময় যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত থাকতেন। প্রয়োজনের সময় সব সময় তাকে কাছে পাওয়া যেত। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক যেমনই থাকুক, যখনই তাকে দরকার হয়, তিনি হাজির হয়ে যান।”

২০০২ সালের ১২ জুন, গোয়েনডোলিন উইলিয়ামসের মৃতদেহ পাওয়া যায় শিকাগোর একটি ডলার স্টোরের পাশে। ৪৪ বছর বয়সী এই নারীকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

“আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম,” বলেছেন প্রিচেট।

তিনি উইলিয়ামসকে মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগেও দেখেছিলেন। সেসময় ৩০-এর ঘরে থাকা প্রিচেট একটি সার্জারির পর বাড়িতে বিশ্রাম করছিলেন। বড় বোন উইলিয়ামস তাকে দেখতে আসেন। একটি ফোন কল পেয়ে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যান উইলিয়ামস। দরজা থেকে বেরোনোর সময় তিনি বোনের ডালমেশিয়ান কুকুরটিকে আদর করে যান। বোনের সাথে এটাই শেষ দেখা প্রিচেটের।

পরের দিন, এক গোয়েন্দা তাকে কল করে খবরটি জানান। প্রিচেট স্পষ্টভাবে মনে করতে পারেন, তিনি ফোন রেখে তার কুকুরের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। সাদা কুকুরটির গায়ে তখনও তার বোনের লাল লিপস্টিকের ছোপ লেগে ছিল।

“আমার কুকুরের গায়ে তার লিপস্টিক লেগে ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল এটি কত তাজা। ২৪ ঘন্টারও কম সময় আগে তিনি কুকুরটিকে চুমু খেয়েছিলেন,” বলেছেন প্রিচেট।

পরবর্তী দিনগুলিতে, পুলিশ বেশ কিছু সূত্র খুঁজে পায়। উইলিয়ামসের নখের নিচ থেকে পাওয়া যে ডিএনএ এবং অন্যান্য জেনেটিক প্রমাণ তার সম্ভাব্য খুনিকে ইঙ্গিত করে, সেগুলো গোয়েন্দারা সংগ্রহ করেছিলেন।

“তিনি হত্যাকারীর সঙ্গে লড়েছিলেন। তিনি তাকে অনেক আঁচড় দিয়েছেন। গোয়েন সবাইকে রক্ষা করতেন। তিনি লড়াকু ছিলেন। এবং কাউকে ভয় পেতেন না।”

কিন্তু এরপর কেসটি চাপা পড়ে যায় এবং প্রায় দুই দশক ধরে সেভাবেই থাকে।

১৬ বছর পর, এবং হাজার মাইল দূরে, নতুন সম্ভাবনা দেখা দেয়। শিকাগোয় অমিমাংসিত মামলার গোয়েন্দারা উইলিয়ামসের ফাইলটি আবার খোলেন। উইলিয়ামসের শরীর থেকে পাওয়া অসনাক্ত ডিএনএর ডেটা দিয়ে সার্চ দেন এফবিআই ডেটাবেজে। মিল খুঁজে পাওয়া যায় ফ্লোরিডার টাম্পায় বসবাসরত ৫৬ বছর বয়সী এক গৃহহীন মানুষের সঙ্গে।

সন্দেহভাজন এই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় ফার্স্ট ডিগ্রী মার্ডারের অভিযোগে। গোয়েন্দারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, কিন্তু ফের ছেড়ে দেন। উইলিয়ামসকে হত্যার অভিযোগ বিচারের জন্য তাকে কখনোই ইলিনয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।

“আমাদের জন্য এটি ছিল একেবারে ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি। আমরা কখনো এর সমাপ্তি দেখতে পাইনি। ন্যায়বিচার না পেলে আপনি সমাপ্তিও পাবেন না। আমরা তার কবরের কাছে যাই এই জেনে যে, যার কারণে তার এই পরিণতি, সেই মানুষটি বেঁচে গেছে। এটা খুব কষ্টকর। এটি আপনাকে খুব অস্থির করে তোলে। আপনি এমন সব মানুষদের দেখছেন যাদের কাছে এগুলো কিছু যায়ই আসে না,” বলেছেন প্রিচেট।

শেষপর্যন্ত, বিচারকরা উইলিয়ামসের সেই সম্ভাব্য খুনির ডিএনএ প্রমাণকে “অপর্যাপ্ত” বলে রায় দেন।

কুক কাউন্টি স্টেটের অ্যাটর্নি অফিস এক বিবৃতির মাধ্যমে অক্সিজেন ডট কমকে বলেছে, “ঘটনার সময়ে এবং ২০১৯ সালের মতো সাম্প্রতিক সময়েও ঘটনাটি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত পর্যালোচনার পর, আমরা এই উপসংহারে পৌঁছেছি যে, ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ সমর্থনের মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই। এছাড়াও, ২০১৭ সালে ইলিনয় আপীল আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসারে, শুধুমাত্র ডিএনএ প্রমাণের ভিত্তিতে কোনো ফৌজদারি অভিযোগ গঠনের ব্যাপারে বিধিনিষেধ আছে। এটি এই কেসের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার জন্য কাজ করতে সিসিএসএও বদ্ধ পরিকর। আমরা অপরাধীদের ধরতে ও সাজা দিতে থাকব, প্রমাণ ও আইনের ভিত্তিতে।”

এদিকে, প্রিচেট এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হচ্ছিলেন। কুক কাউন্টির বিচারকদের “সমবেদনা বোধের অভাব” আছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

“আমার মনে হয়েছে তারা আমাদের ব্যর্থ করে দিল,” বলেছেন প্রিচেট।

৫০ বছর বয়সী এই ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্র্যাটেজিস্ট অবাক হয়ে গিয়েছিলেন, যখন ফাউন্টেনের শিক্ষার্থীরা গত বছর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।

“আমরা খুবই উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলাম,” বলেছেন তিনি, “আমরা খুবই কৃতজ্ঞ যে তারা এই ঘটনাটি নিয়ে লিখছে। মানুষের এসব ঘটনা সম্পর্কে জানা দরকার।”

উইলিয়ামসের প্রোফাইলটি তৈরি করেন ২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী রিপোর্টার, সামান্থা ল্যাটসন। হত্যাকাণ্ডের শিকার এই নারীর মধ্যে নিজ পরিবারের ছায়া দেখতে পেয়ে তাকে “মানবিকভাবে” তুলে আনার তাগিদ অনুভব করেন সামান্থা।

অক্সিজেন ডট কমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিকাগোর রুজভেল্ট ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী ল্যাটসন বলেন, “আমি এই নারীদের সাথে নিজেকে মেলাতে পারি। গোয়েনডোলিন উইলিয়ামসের সঙ্গে আমি আমার খালার মিল পাই। সত্যি বলতে, আমি এই নারীদেরই একজন হতে পারতাম।”

পুলিশ ও সংবাদমাধ্যম যেভাবে উইলিয়ামসের স্মৃতিকে “কলঙ্কিত” করেছে, তা দেখে খুব বিরক্ত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ল্যাটসন।

তিনি বলেছেন, “আমার কাছে গোয়েন উইলিয়মসকে মানবিকভাবে তুলে আনাটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, কারণ আমি তার বোনদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তারা তখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। প্রতিবেদনে আমরা বলেছি যে, তিনি কত ভালো রান্না করতে পারতেন, সবার দেখভাল করতেন, বোনদের আগলে রাখতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেই রাতে তাকে রক্ষা করার মতো কেউ সেখানে ছিল না। এটি যে কোনো নারীর সঙ্গে ঘটতে পারত।”

প্রিচেটও আশা করেন যে, “আনফরগটেন” সিরিজটি পুলিশ ও কাউন্টির বিচারকদের ওপর নতুন করে চাপ তৈরি করবে তার বোনের হত্যা রহস্য সমাধানের জন্য।

“আমরা এখনো ন্যায়বিচারের জন্য লড়ে যাচ্ছি,” বলেছেন প্রিচেট।