বিশ্ব বই দিবস


বিশ্ব বই দিবস

“একজন মানুষ ভবিষ্যতে কী হবেন সেটি অন্য কিছু দিয়ে বোঝা না গেলেও তার পড়া বইয়ের ধরন দেখে তা অনেকাংশেই বোঝা যায়” বলেছিলেন বিশ্ব সাহিত্যের অবস্মরণীয় নাম  অস্কার ওয়াইল্ড । বিশ্ব যখন ঢুকে পড়েছে ইন্টারনেট জগতে তখন বইয়ের জগতে থাকা মানুষ খুঁজে বের করা  আর তাদের পড়ার বইয়ের ধরন বের করা আজকাল সত্যি কঠিন। এমন বাস্তবতায়  ২৩ এপ্রিল ২৬তম বারের মত পালিত হচ্ছে বিশ্ব বই দিবস । ১৯৯৫ সাল থেকে জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠান “”ইউনেস্কোর উদ্যোগে প্রতিবছর পালন করা হয় এই দিবসটি। বই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো পাঠকদেরকে বই পড়ায় আগ্রহী করে তোলা যারা বই ছাপেন তাদেরকে উৎসাহিত করা ও বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো।

বিশ্ব বই দিবসের মূল ধারণাটি আসে স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেসের কাছ থেকে। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান স্পেনের বিখ্যাত এক লেখক মিগেল দে থের্ভান্তেস। আন্দ্রেস ছিলেন মিগেল দে থের্ভান্তেসের একজন ভাবশিষ্য। নিজের প্রিয় লেখককে স্মরণীয় করে রাখতেই ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে আন্দ্রেস স্পেনে পালন করা শুরু করেন বিশ্ব বই দিবস। এরপর দাবি ওঠে প্রতিবছরই দিবসটি পালন করার। সে দাবি তখনও নজরে আসেনি কারো। বহুদিন পর ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো এইদিনটিকে বিশ্ব বই দিবস হিসবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এরপর থেকে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে এই দিনটি।

বই পড়ার গুরুত্ব বুঝতে হলে  পৃথিবীর সবচেয়ে সফল ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষ স্থানে থাকা ব্যক্তিদের জীবনের দিকে তাকালেও হয়। ওয়ারেন বাফেট প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পাঁচটি সংবাদপত্র এবং ৫০০ পৃষ্ঠার করপোরেট প্রতিবেদন পড়তে ব্যয় করেন। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস প্রতিবছর ৫০ টি বই পড়ে শেষ করেন। মার্ক কুবান প্রতিদিন ৩ ঘণ্টার বেশি সময় বই পড়েন। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ দুই সপ্তাহে কমপক্ষে একটি বই পড়েন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। তাঁর ভাই জানান, ছোটবেলা বাড়িতে রাখা দুটো পত্রিকা একেবারে গিলে খেতেন ইলন মাস্ক। ছোটখাটো কিচ্ছু বাদ দিতেন না। প্রতিদিন দুটো করে বই পড়তেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বন্ধকি ব্যবসার প্রতিষ্ঠান কুইকেন লোনসের প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক ৫৮ বছর বয়সী ড্যান গিলবার্ট মিশিগান প্রদেশের শীর্ষ ধনী। ড্যান গিলবার্ট তাঁর দিনের এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় পড়ার জন্য ব্যয় করেন। হোম ডিপোর সহপ্রতিষ্ঠাতা আর্থার ব্ল্যাঙ্ক প্রতিদিন দুই ঘণ্টা পড়েন। বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা ডেভিড রুবেনস্টাইন সপ্তাহে ছয়টি বই পড়েন।

ই–কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস কর্মীদের নিয়ে একসঙ্গে পড়েন। একবার এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটা সফল মিটিংয়ের মূলমন্ত্র হলো পড়া। অনেকটা স্টাডি হলের মতো। সবাই টেবিলের চারপাশে বসে থাকে। আমরা প্রায় আধা ঘন্টা নীরবে পড়ি। ডকুমেন্ট পড়তে আমাদের বেশি সময় লাগে। তারপরে আমরা এটি নিয়ে আলোচনা করি।’
জীবনের কোন অভ্যাস পৃথিবীর সবচেয়ে ধনীদের এমন সাফল্য এনে দিয়েছে, তা জানতে লেখক টমাস করলি প্রায় পাঁচ বছর ধরে প্রায় ১৭৭ জন ধনীর সারা দিনের জীবনযাপন দেখেছেন। এ বিষয়ে করলির বিখ্যাত একটি বইও রয়েছে ‘রিচ হ্যাভিটস: দ্য ডেইলি সাকসেস হ্যাবিটস অব ওয়েলদি ইনডিভিজুয়্যাল’। গবেষণা শেষে করলি যা বলেছিলেন তা হলো, ধনীরা টিভি খুব কম দেখেন। বেশির ভাগই দিনের বড় একটা সময় বই পড়েন।

বই ও বইপড়া সম্পর্কে খ্যাতিমান মনীষীদের অনেক বাণী রয়েছে যেমন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বলে গেছেন “বইয়ের মত এত বিশ্বস্ত বন্ধু আর নেই।”  মার্ক টোয়েন বলেছেন আদর্শ জীবনে বই থাকা আবশ্যক “ভাল বন্ধু, ভাল বই এবং একটি শান্ত বিবেক: এটি আদর্শ জীবন।” দেকার্ত বলে গেছেন-“ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর মহৎ লোকের সাথে আলাপ করা।”
সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত উক্তি “বই কিনে কেউ কোনদিন দেউলিয়া হয় না।” এরপরও হারিয়ে যাচ্ছে বই পড়া।  হয়তো এইসব দিবসও একটু খানি ইচ্ছা তৈরী করবে মানুষের মনে। সেই ছোট ছোট ইচ্ছাই আবার সবাইকে নেবে বইয়ের জগতে। বই পড়ার জগতে।