শুধু একটি ছবি থেকে নাম-ধাম-ঠিকানা কীভাবে বের করবেন?


শুধু একটি ছবি থেকে নাম-ধাম-ঠিকানা কীভাবে বের করবেন?

(এই পোস্ট প্রথম প্রকাশিত হয় কুইজটাইম ব্লগে। লেখক ইউরি ফন ডার ওয়াইড। তিনি একজন ওপেন সোর্স অনুসন্ধান বিশেষজ্ঞ এবং প্রশিক্ষক। নিয়মিত লেখালেখি করেন কুইজটাইমে, যারা টুইটারের মাধ্যমে সবাইকে ওপেন সোর্স টুল ও অনুসন্ধানের কৌশল শেখায়। তিনি বিবিসিসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের হয়ে অনুসন্ধান করেছেন। বিজেসি নিউজের পাঠকদের জন্য ইউরি ফন ডার ওয়াইডের সেই পোস্টটি এখানে তুলে ধরা হল।)

ওপেন সোর্স অনুসন্ধান বা OSINT এর কথা শুনেছেন? যদি না-ও ‍শুনে থাকেন, হয়তো নিজের অজান্তেই আপনি এই কাজ করে যাচ্ছেন। এখনো অনেকেই জানেন না OSINT কী, আর এই শব্দ সংক্ষেপের ব্যাখ্যা কী দাাঁড়ায়।

আজ আমি ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের এমন একটি টুলের কথা বলব, যা ইন্টারনেটে সংযুক্ত প্রতিটি ব্যক্তি, প্রায় প্রতিদিনই, কম-বেশি ব্যবহার করেন। জ্বি হ্যাঁ; আমি গুগলের কথাই বলছি। এই লেখায় আমি কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে দেখাতে যাচ্ছি, রিভার্স ইমেজ সার্চের সাথে গুগল সার্চ মেলালে আপনার অনুসন্ধান কতটা কার্যকর ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। (রিভার্স ইমেজ সার্চ মানে, একটি ছবি দিয়ে সার্চ ইঞ্জিনকে একই রকমের আরো ছবি খুঁজে বের করতে বলা।)

আমি একে একে উদাহারণগুলো তুলে ধরব। শুরু করা যাক ২০১৯ সালের ১১ই মার্চ, জুলিয়া বায়ার তাঁর টুইটার একাউন্ট কুইজটাইমে যেই ধাঁধাটি দিয়েছিলেন, সেখান থেকে।

সহজ প্রশ্ন, জটিল উত্তর

এই ধাাঁধায় জুলিয়া শুরুতেই আমাদেরকে সতর্ক করে দেন এই বলে, যে প্রশ্নটি দেখে প্রথমে খুব সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু উত্তর খোঁজা শুরু করলেই বুঝবেন বিষয়টি কতটা জটিল।

প্রশ্নটি ছিল: “এই ছবি কোন জায়গা থেকে তোলা?”

ছবিটি দিয়ে গুগল বা ইয়ান্ডেক্সে রিভার্স ইমেজ সার্চ চালিয়ে আমি তেমন কিছু পাইনি। হয়তো আপনি এই লেখা পড়তে পড়তে রিভার্স সার্চ চালালে, এর চেয়ে ভালো ফলাফল পাবেন, কারণ ছবি দিয়ে ছবি খোঁজার এই পদ্ধতি প্রতিনিয়তই একটু একটু করে উন্নত হচ্ছে। তাই একই বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের ফলাফল, সময়ভেদে আলাদা হতে পারে।

যাই হোক, আমি অনুসন্ধান চালিয়ে যে ফলাফল পেয়েছি, তা মেজাজ খারাপ হওয়ার মত। দেখুন ইয়ানডেক্সে সার্চ দিয়ে আমি কী পেয়েছি:

এবার দেখুন গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ দিয়ে পাওয়া ফলাফল:

ছবি বিশ্লেষণ এবং তথ্যকে ফিল্টার করা

তাহলে প্রশ্নটির উত্তর আপনি কীভাবে খুঁজে বের করবেন? প্রথমে দেখা দরকার, এই ছবির এলাকা সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায় কিনা। এই ছবিতে বেশ স্পষ্ট একটি ইঙ্গিত রয়েছে। আমি গুগলে ছবির নামের শেষে :orig লিখে সার্চ দিলাম। (:orig মানে হচ্ছে অরিজিনাল) এভাবে সার্চ দিলে প্রকৃত রেজ্যুলুশনের ছবিটি বেরিয়ে আসে। বড় আকারের মূল ছবিটির দিকে ভালো করে তাকালে, ভবনের সামনে পার্ক করা গাড়ীর নম্বর প্লেট দেখা যায়। নম্বর প্লেটগুলো জার্মান এবং প্রতিটি B অথবা BAR দিয়ে শুরু। এই সিরিজের নম্বর প্লেট সম্পর্কে তখনই অনলাইনে অনুসন্ধান চালাই।উইকিপিডিয়া থেকে জানা গেল, এমনটা দেখা যায় জার্মানির বার্লিন শহরে। এবার আমি শুধু বার্লিনের দিকেই মনোযোগ দিলাম।

ছবির দিকে ভালোমত নজর দিলে দেখবেন, অ্যাপার্টমেন্টগুলো একটু অন্যরকম। প্রতিটি ভবনেই কাঠের অস্তিত্ব চোখে পড়ে। তখন ভাবলাম, আমি ছবিতে যা দেখছি, তার বিবরণ লিখেই গুগলে সার্চ দিয়ে দেখি।

“কাঠের অ্যাপার্টমেন্ট বার্লিন”

ব্রাউজারে একটি নতুন ট্যাব খুলে, Wooden apartment Berlin — ঠিক এই কথা লিখে আমি গুগলকে অনুসন্ধান চালাতে বললাম। সার্চ ফলাফলে যত ছবি পেয়েছি সেগুলো একটি একটি করে দেখতে গিয়ে, নিচের ছবিতে আমার চোখ আটকে গেল:

তখন আমি নিশ্চিত, ঠিক এই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকই খুঁজছি। সার্চের সূত্র ধরে, স্টক ছবির জন্য বিখ্যাত সাইট অ্যালামিতে গিয়ে আরো জানা গেল, ভবনগুলোর অবস্থান বার্লিনের ওয়েডিগ নামের এলাকায়।এখন আমার হাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটো সূত্র আছে: প্রথমত ছবিটি বার্লিনের, আর দ্বিতীয়ত, শহরের কোন এলাকায়।
এবার আমি ‍গুগলে সার্চ দেয়ার আরেকটি কৌশল চিন্তা করলাম। “কাঠের অ্যাপার্টমেন্ট বার্লিন“ লেখাটিকে গুগল ট্রান্সলেটে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে নিলাম এবং তার সাথে এলাকার নাম ওয়েডিগ যোগ করে দিলাম। এরপর জার্মান ভাষায় সার্চ প্রশ্ন দাঁড়ালো: berlin weddig holzwohnung (ধন্যবাদ গুগল ট্রান্সলেট)। এখানে holzwohnung মানে কাঠের অ্যাপার্টমেন্ট।
এভাবে সার্চ দেয়ার পর ভবনগুলো যেখানে অবস্থিত, সেই রাস্তার ঠিকানাও খুঁজে পেলাম। দেখুন নিচে:

অবশ্য ছবির ধরন ভেদে আপনাকে হয়তো এর চেয়ে কয়েক ধাপ বেশি অনুসন্ধান চালাতে হতে পারে। আপনি একমাস আগে সার্চ দিয়ে যে ফলাফল পেয়েছিলেন, এখন একই সার্চ দিয়ে আলাদা ফলাফলও পেতে পারেন।

পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে। 

নিউজঃ GIJN BANGLA