ফেসবুক ছাড়াও অন্যান্য প্লাটফর্মে সংবাদের ভিউয়ার বাড়ানোর টিপস


ফেসবুক ছাড়াও অন্যান্য প্লাটফর্মে সংবাদের ভিউয়ার বাড়ানোর টিপস

ছবি : সংগৃহীত

 

ফেসবুকের ডেমোগ্রাফিক সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো হলেও টিকটক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউব সংবাদ ব্র্যান্ডগুলোকে তরুণ ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছাতে বড় ভুমিকা রাখছে। 

 

বিভিন্ন নেতিবাচক কারণে সম্প্রতি ফেসবুক সংবাদ শিরোনাম হলেও এটি এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। এজন্য প্রকাশকরা নিজেদের কন্টেন্ট এখানে শেয়ার করবেন কী না তা নিয়ে সংশয়ে থাকেন। যদিও যেখানে বেশি ব্যবহারকারী আছেন সেখানে বিষয়বস্তু শেয়ার করা অর্থবহ হলেও, মানুষ খুব কমই সংবাদ পড়ার জন্য সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। রয়টার্স ইন্সটিটিউটের ডিজিটাল নিউজ রিপোর্ট অনুসারে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহারকারীরা তাদের বন্ধুদের ছুটির ছবি স্ক্রল করার সময় সংবাদ দেখতে পছন্দ করেন না।

 

ফেসবুক সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো। তবে, যেসব প্রকাশক তরুণ ব্যবহারকারীদের কাছে নিজেদের বিষয়বস্তু তুলে ধরতে চান তাদের কাছে এটি দিন দিন জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে।

 

এ বিষয়ে নিউজরিওয়্যারড কনফারেন্সের চারজন বক্তা কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন যে কীভাবে তারা ফেসবুক থেকে সরে যাচ্ছেন এবং নিজেদের শ্রোতা/পাঠক বাড়ানোর জন্য অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করছেন।

 

টুইটার

টুইটারে সংবাদের জন্য দর্শক বাড়ানো কঠিন। সিএনএন এবং বিবিসি নিউজ ওয়ার্ল্ডের মতো সংবাদ মাধ্যমগুলোতে  এরইমাঝে ৮৮ মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার্স আছে। সেজন্য, নতুন ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য ছোট সংস্থাগুলোকে অনেক বেশি সৃজনশীল হতে হবে বলে জানান ব্লুমবার্গের সামাজিক প্রযোজক এবং সম্পাদক কুইকটেক গ্লোরিয়া চেউং।

 

তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় আমাদের শ্রোতাদের আর কী বলতে পারি তা নিয়ে চিন্তা করি’। তিনি আরও যোগ করেন যে, টুইটগুলো ভিজ্যুয়াল এবং গল্প যোগ করার মাধ্যমে দর্শককে আকর্ষণ করতে সক্ষম। চার্ট, ছবি এবং ভিডিও ক্লিপগুলিও এখানে শেয়ার করা যায়। এমনকি কমেন্টে সাংবাদিকদের প্রশ্ন-উত্তরের অপশনও টুইটারে নিজের অবস্থান জোরদার করতে সহায়ক হতে পারে।

 

আর যেকোনো কন্টেন্টের জনপ্রিয়তা বাড়াতে শিরোনাম ভালো দিতে হবে বলেও মনে করেন গ্লোরিয়া। চেউং মনে করেন, ২৮০ অক্ষরের সীমা একটি সুযোগ, কোনও সীমাবদ্ধতা নয়। সবসময় টুইটারকে সংবাদের গন্তব্য হিসেবে ভাবেন বলেও জানান তিনি।

 

ইনস্টাগ্রাম

ফেসবুকের মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম যা কিনা ভিজ্যুয়াল পোস্ট এবং ভিডিওর জন্য বেশি জনপ্রিয় । এখানে প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যবহারকারীর বয়স ৩৫ বছরের কম। এটি জো মিডিয়ার জন্য একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম। জো মিডিয়া পুরুষদের লাইফস্টাইল নিয়ে কন্টেন্ট শেয়ার করে যেখানে খেলাধুলা থেকে রাজনীতি পর্যন্ত সব বিষয় থাকে। এদের ১ মিলিয়নের বেশি ফলোয়ার্স আছে এখন। @footballJOE এই প্ল্যাটফর্মে সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাকাউন্ট। এখানে ২.৩ মিলিয়ন ফলোয়ার্স আছে। 

ছবি : সংগৃহীত

 

ইনস্টাগ্রামে জনপ্রিয়তা পেতে, জো মিডিয়ার সম্পাদকীয় পরিচালক সেরেনা কুচিনস্কি সাংবাদিকদের একটি ‘ফরম্যাট ফ্যাক্টরি’ তৈরি করতে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি ধারাবাহিক, হাস্যরসাত্মক বিষয়বস্তু এবং যা বার বার দেখা যায় এমন বিষয়কে প্রাধান্য দিতে বলেন। এছাড়া, তিনি বায়োতে রিল ও পোলের মতো ফিচারগুলোর সাথে লিঙ্কও ব্যবহার করতে বলেন।

 

টিকটক

এটি মুলত নাচের ভিডিও, মিউজিক এবং সৃজনশীলতার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে। সংবাদের জন্য এর কোন জনপ্রিয়তা নেই। তারমানে এই নয় যে সংবাদের জন্য এখানে কোনো সুযোগ নেই। প্ল্যাটফর্মটি জেনারেশন Z ইউজারদের কাছে বেশি জনপ্রিয় যারা সবসময় নতুনত্ব খোঁজে।

 

স্পেইনের Ac2uality টিকটকে সবচেয়ে বড় সংবাদমাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাদের ‘এক মিনিটের সংবাদ’-এর জন্য। বিবিসি এবং ওয়াশিংটন পোস্টের ফলোয়ার্স যোগ করে যা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি ফলোয়ার্স আছে এদের।

 

Ac2uality-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও ড্যানিয়েলা ম্যাকএরিনা বলেন, সংবাদ সংস্থাগুলোকে সবসময় কিছু না কিছু প্রকাশ করতে হবে। শুধু সুন্দর ছবির দিকে মানোযোগ না দিয়ে ভালো কন্টেন্ট দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি। সেইসাথে, এই প্ল্যাটফর্মটিতে অনেক সময় দেয়ার কথাও বলেন ড্যানিয়েলা ম্যাকএরিনা যেন সবসময় আপটুডেট থাকা যায়।

 

ইউটিউব

ভাইস মিডিয়া প্রকাশনার ভাইস প্রেসিডেন্ট অলি অসবর্ন বলেন যে ইউটিউব চ্যানেলটি ২০০৫ সালে তৈরি হওয়ার পর থেকে ভাইসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। তিনি জানান এর প্রধান কারণ হলো ধারাবাহিকতা ধরে রাখা, অথেন্টিক সংবাদ এবং সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধিতে সময় দেয়া।

 

কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ইউটিউবে ভাইসের সাবস্ক্রাইবার প্রায় ১৫ মিলিয়ন পর্যন্ত দাঁড়ায়। গত বছরে, অ্যাকাউন্টটিতে ১ বিলিয়ন ভিউ ছিল।

 

ভিউয়ারশিপ বাড়ানোর জন্য ডেটা এবং ফর্ম্যাটগুলো বিশ্লেষণ করে কোনটা ভালো কাজ করছে তা দেখার পরামর্শ দিয়েছেন অসবর্ন। 

 

সেইসাথে, চ্যানেলগুলোকে তাদের প্রকাশনার বিষয়ে কৌশলী এবং ধারাবাহিক হবার পরামর্শ দেন। অথেন্টিক কন্টেন্টের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেন তিনি।

 

তিনি মনে করেন টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামের সংক্ষিপ্ত ফর্মের ভিডিওতে গুরুত্ব দিলেও, ইউটিউব বড় ফর্ম কভারেজে গুরুত্ব দেয়। তিনি ইউটিউবকে টিভির বিকল্প বলে চিহ্নিত করেন। অনেক প্রকাশকের মতো, ভাইস তাদের বিষয়বস্তু স্ন্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রামের মতো অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোতে শেয়ার করছে।

 

তবে তিনি মনে করেন একাধিক সামাজিক নেটওয়ার্কে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরো জানান, কন্টেন্ট তৈরির সময় ব্র্যান্ড হিসেবে তারা কী করতে চায়, তার চেয়ে তারা অনেক বেশি প্রাধান্য দেন প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের কাছে কী চায় সেই বিষয়ে।

 

জার্নালিজম ডট কো ডট ইউকে অবলম্বনে সাবরিনা আফরোজ