সাংবাদিকদের জন্য অনলাইন সুরক্ষার টিপস


সাংবাদিকদের জন্য অনলাইন সুরক্ষার টিপস

ছবিঃ সংগৃহীত

 

আজকের ডিজিটাল বিশ্বে, সাংবাদিকদের জন্য নিরাপত্তা বলতে শুধু শারীরিকভাবেই নিরাপদ থাকাকে বুঝায়না।  প্রতিদিনি তাদের  ইমেল, সোস্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট এবং সোর্সগুলো হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া সংবাদ মাধ্যমে কাজ করা বেশিরভাগ নারী অনলাইন আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বলেও  আইসিএফজে-ইউনেস্কো এর একটি জরিপে উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নেয়া ৭১৪ জন নারী সাংবাদিকের মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বলেছেন যে তারা তাদের পেশাগত কাজ করতে গিয়ে অনলাইন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। চলমান এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে জুলাইয়ে ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন (আইডব্লিউএমএফ) এবং আইসিএফজে অনলাইন ভায়োলেন্স রেসপন্স হাব চালু করে। অনলাইন সহিংসতার বিরুদ্ধে সহায়তা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে এই প্রকল্পটি।

এদিকে,  আইসিএফজে হেলথ ক্রাইসিস রিপোর্টিং ফোরাম ওয়েবিনার চলাকালীন ফ্রিডম অফ দ্য প্রেস ফাউন্ডেশনের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা পরিচালক হারলো হোমস সাংবাদিকদের কিছু পরামর্শ দেন যেন তারা ডিজিটালি নিজেদের রক্ষা করতে পারেন।

 

আপনার ঝুঁকি সম্পর্কে জানুন:

আপনি কোন বিষয়ে রিপোর্ট করছেন তার উপর নির্ভর করে হ্যাকাররা আপনার ইমেল, উৎস এবং জরুরি তথ্য উপাত্ত ঘেটে দেখতে আগ্রহী হতে পারেন। আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তা বাড়নোর কথা চিন্তা করার কথা ভেবে থাকলে প্রথমেই আপনার ব্যক্তিগত ঝুঁকি সম্পর্কে জানার পরামর্শ দিয়েছেন হোমস। কে বা কোন প্রতিষ্ঠান আপনার শত্রু হতে পারে সেটা নিয়ে ভাবতে বলেন তিনি।

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আপনাকে বিভিন্ন উপায়ে হ্যাক করতে চাইবে। এদের একদলকে ফ্রন্ট ডোর বলা হয় যাদের ডিজিটাল নজরদারি করতে ওয়ারেন্টের প্রয়োজন হয়। আবার, আরেক দলকে বলে ব্যাক ডোর, যেমন একক হ্যাকাররা যখন একজন ব্যক্তির পরিচয় বা অ্যাকাউন্টের তথ্য চুরি করার চেষ্টা করে।

কে আপনাকে সবচেয়ে বেশি টার্গেট করতে পারে তা বিবেচনা করার সময়, তাদের সময়, সংস্থান এবং দক্ষতার পরিমাণ সম্পর্কে জানতে বলেন হোমস। এরপর এই তথ্য অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে বলেন তিনি। যেমন, আইন প্রয়োগকারীদের কাছে প্রচুর সময় এবং বিভিন্ন সংস্থান থাকে, কিন্তু সর্বোচ্চস্তরে প্রযুক্তিগত দক্ষতা  নাও থাকতে পারে। অন্যদিকে, একজন একক হ্যাকার কিন্তু প্রযুক্তিগতভাবে অনেক দক্ষ হতে পারে। সেক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করে নিরাপত্তা নেয়ার কথা ভাবলে কোনটা বেশি উপকারী হবে তা বিবেচনা করতে হবে।

হোমস আরো বলেন যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা সকল সাংবাদিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি কাউকে প্রথমেই টার্গেট করার সম্ভাবনা না থাকে তবে  উচ্চতর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সময় এবং অর্থ ব্যয় করা উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি।

ছবিঃ সংগৃহীত

 

আপনার অ্যাসেট সম্পর্কে জানুন:

আপনার কাছে কোন রিপোর্টের জন্য কী তথ্য আছে তা সম্পর্কে ধারণা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হোমসের মতে, হ্যাকারের কাছে আপনার সোস্যাল মিডিয়া পোস্ট বা ব্রাউজিং ইতিহাসের মতো তথ্য  খুব গুরুত্বপুর্ণ নাও হতে পারে। অন্যদিকে, আপনার পাসওয়ার্ড, সোর্স কিংবা গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলোই টার্গেট হতে পারে। সেক্ষেত্রে, কোন নথিগুলো কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, কোনটা নিজের কাজে লাগবে, কোনটা অফিসের জন্য দরকারি এবং কোনটা হারিয়ে গেলে অনেক সমস্যা হতে পারে এসব বিবেচনা করে ডিজিটাল আক্রমণের বিরুদ্ধে কী ধরণের সতর্কতা  দরকার হবে তা ঠিক করতে পরামর্শ দেন হোমস।

 

অ্যাকাউন্ট নিরাপত্তা এবং এনক্রিপশন:

সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন সরঞ্জাম থাকে যা সবসময় হ্যাকিং থেকে রক্ষা করা যায় না।  দুটি সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার এবং টু- ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন।  পাসওয়ার্ড ম্যানেজার পাসফ্রেজ দিয়ে এমনভাবে সুরক্ষিত থাকে যা হ্যাক করতে কয়েক যুগ লেগে যাবে। আর এটা মনে রাখাও কঠিন না। এছাড়াও, সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি হিসেবে হার্ডওয়্যার টোকেনের কথাও বলেন হোমস।

এছাড়া,  টু- ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন এর মাধ্যমেও নিরাপত্তা জোরদার করা যায়। কিছু অ্যাপস, এসএমএস কোড, এক্সটার্নাল হার্ডওয়ারের ফর্মে টু- ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন করা যায়। তবে, হোমস এসএমএস ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে টু- ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন না করতে পরামর্শ দেন। সবশেষ, সাংবাদিকদের এনক্রিপ্টেড ওয়েবসাইট ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।

 

হোমওয়ার্ক করুন:

পরিশেষে, হোমস সাংবাদিকদের জন্য একটি হোমওয়ার্ক দিয়েছেন। তিনি  https://haveibeenpwned.com/  এই ওয়েবসাইটে সাংবাদিকদের সাইন আপ করার পরামর্শ দেন। এটি এমন একটি সাইট যা আপনাকে ইমেলের মাধ্যমে জানাবে যদি আপনার ব্যবহৃত কোনও সফ্টওয়্যার বা ওয়েবসাইট  থেকে ডেটা ব্রিচ হয়ে থাকে। সেইসাথে, তিনি বলেন যে যদি একই পাসওয়ার্ড সবসময় ব্যবহার করা হয় তবে হ্যাকার সহজেই ব্যাংক একাউন্ট, কিংবা টুইটারে ঢুকতে পারবে। তাই, একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন তিনি।

 

আই জে নেট অবলম্বনে সাবরিনা আফরোজ