স্মার্টফোন দিয়ে যেভাবে হোম স্টুডিও বানাবেন


স্মার্টফোন দিয়ে যেভাবে হোম স্টুডিও বানাবেন

ছবি : সংগৃহীত

 

বিশ্ব যখন মহামারিতে, তখন পেশার ধরণেও হয়েছে কিছুটা পরিবর্তন। করোনাকালীন সময়ে হোম অফিস প্রচলন অনেক গুণ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সাংবাদিকদের বাসা থেকে কাজ করার চাপ ছিলো অনেক বেশি। বাসাকেই বানাতে হয়েছে নিউজরুম। সেই রুপান্তরিত নিউজরুম ছিলো বিপদে পূর্ণ। যেকোনো সময় লাইভে অথবা রিপোর্টিংয়ে ঘটে যাচ্ছিলো ঘরোয়া কোনো ঘটনা। এতে অনেককেই হতে হয়েছে হাসির পাত্র। এছাড়াও সঠিক অডিও-ভিডিও নিয়েও হয়েছে অনেক সমস্যা।

তবে কীভাবে সেট আপ করলে আপনার ব্যবহার করা রুমটিও হতে পারে একটি প্রফেশনাল নিউজরুম তার উপায় বের করেছে জার্নালিজম ডট কো ডট ইউকে। সাংবাদিকদের সুবিধার্থে তা নিচে তুলে ধরা হলো।

সো হ্যান্ডির প্রতিষ্ঠাতা এবং অভিজ্ঞ টেলিভিশন সাংবাদিক, মোবাইল সামগ্রী নির্মাতা এবং ভিডিওগ্রাফার, বিয়ানকা-মারিয়া রাথে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। কীভাবে তিনি হোম স্টুডিও স্থাপন করেছেন। নিচের ছয়টি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমেই হোম নিউজরুম তৈরি করা সম্ভব।

 

ডিশিসান

প্রথমেই আপনাকে চিন্তা করতে হবে, আপনার স্টুডিও থেকে আপনার কী দরকার? আসলে এই স্টুডিও দিয়ে আপনি কী করতে চান? পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত নেয়া খুব জরুরি।

আপনি কোন প্ল্যাটফর্মের জন্য এটি তৈরি করছেন তা ঠিক করতে হবে। আউটপুট কী আসবে সেটিও চিন্তা করতে হবে। এরপর বাজেট কী হবে সেটিও উল্লেখ করে ফেলতে হবে।

উপস্থাপনা করার সময় আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন বা বসে থাকবেন সেটিও ঠিক করতে হবে। কারণ সে অনুযায়ী পরিবর্তন হবে আপনার বাজেট। কারণ আপনি দাঁড়িয়ে অথবা বসে গেলে কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন হবে নাকি সেটিও আগে ঠিক করে ফেলতে হবে। প্রাকৃতিক আলো বেশি হলে কতোটুকু আলো কমাতে হবে সেটি শুরুতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হবে।

 

প্রোডাকশন রুম

প্রথমেই ঠিক করে ফেলতে হবে কোন রুমে আপনি স্টুডিও বানাবেন। কোন জায়গা থেকে আপনি কাজ করবেন। যদি একটি অবস্থান থেকেই ধারাবাহিক ভিডিও করার পরিকল্পনা করে থাকেন তবে স্থানটি এক জায়গাতেই করে ফেলতে হবে। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে ফেলতে হবে। প্রয়োজনীয় যে সরঞ্জামগুলো আছে সেগুলো সেট-আপ করে ফেলতে হবে বাকিগুলো সংগ্রহ করে ফেলতে হবে।

যদি একটি ছোট ঘরে কাজ করার প্রয়োজন হয়, তাহলে ঘরের কোণে সাউন্ড রেকর্ড করাই উত্তম, এতে শব্দে কোনো ইকো আসবে না এবং শব্দের কোয়ালিটি ভালো হবে।

এছাড়াও শব্দের কোয়ালিটি ভালো পাওয়ার জন্যে একটি ভাল স্মার্টফোনে প্লাগ ইন মাইক্রোফোন অথবা এক্সট্রা মাইক্রোফোন ব্যবহার করা যেতে পারে।

রুমের যেখানেই অডিও রেকর্ডিং করা হোক না কেনো মনে রাখতে হবে আপনার ব্যবহার করা রুমটি যেনো রাস্তা থেকে দূরে হয়। এতে রাস্তার শব্দ থেকে রক্ষা পাবে আপনার অডিওটি। কাঠের মেঝে অথবা দেয়াল ইকো থেকে আপনার সাউন্ডকে রক্ষা করতে পারে।

এছাড়াও চিন্তা করতে হবে ঘরে যে আসবাবপত্রগুলো থাকবে। কারণ আপনার উপস্থাপনায় ডেস্ক, সোফা বা এমনকি একটি টেবিল সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন ডেস্ক লাইট, সো-পিস আপনার ফ্রেমটিকে আকর্ষনীয় করে তুলতে পারে।

 

ছবি : সংগৃহীত

লাইটিং

এরপরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে লাইটিং। একটি ভালো লাইটিং পারে আপনার ফ্রেমের অনেক অগোছালো জিনিসকে সুন্দর করে তুলতে। লাইটিং কেমন হতে পারে সেটির জন্যে আপনাকে আপনার মোবাইলের সেলফি মুডে যেতে হবে। এর আগে আপনার সিলিং লাইটটি বন্ধ করতে হবে। আপনি যখন 360 ডিগ্রী ঘুরবেন, আপনার মুখের দিকে মনোযোগ দিন। যখন এটি সবচেয়ে সমানভাবে আলোকিত হবে সেটি তখন খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন প্রাকৃতিক আলোর উৎস। এক্ষেত্রে আরো ভালোভাবে কাজ করা যেতে পারে যদি আপনার ব্যবহার করা রুমে একটি জানালা থেকে ডে-লাইট পেয়ে যান। যা আপনার শুটিংকে সহজ করে দেবে।

মেঘাচ্ছন্ন দিনগুলোতে আমাদের অতিরিক্ত লাইটের প্রয়োজন হবে। কৃত্রিম আলো একটি ধারাবাহিক পরিমাণ আলো সরবরাহ করে এবং যদি আপনি ডিমার ব্যবহার করেন তবে একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য পরিমাণ আলো এই ডিমার সরবরাহ করবে। এর জন্যে জানালাবিহীন একটি রুমকে স্টুডিও হিসাবে ব্যবহার করতে হবে।

কৃত্রিম আলো ব্যবহার করলে অনেক সময় আপনার ছবি হলুদাভ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কম ভোল্টেজের বাল্ব বা নীল রঙয়ের বাল্ব ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

ব্যাকগ্রাউন্ড

স্টুডিওর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ব্যাকগ্রাউন্ড। এমন কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নেয়া যাবে না যার সাথে আপনার চেহারা মিশে যায়। এছাড়াও ব্যাকগ্রাউন্ডের রঙ নিয়েও বিশেষভাবে খেয়াল করতে হবে।

যেমন সাদা কোনো ব্যাকগ্রাউন্ডে সাবজেক্টের ছায়া পড়তে পারে। এছাড়াও ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা বিশৃঙ্খল বইয়ের তাক এবং ডেস্কগুলো বিভ্রান্তিকর হতে পারে। ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রাকৃতিক হালকা লাইট বা অন্যান্য কৃত্রিম লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে দেয়ালে সুন্দর একটি আলোর আবহ সৃষ্টি হবে।

এছাড়াও আপনি চশমা পরিধান করলে সেক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে। যাতে চশমার রিফ্লেকশনে আপনার সামনে রাখা বস্তুগুলো যাতে ধরা না পড়ে।

 

ক্যামেরা এবং ভিডিও প্রোডাকশন

ক্যামেরায় ভালো ও সুন্দর শট পেতে হলে প্রথমেই কিছু মৌলিক বিষয় মেনে চলতে হবে। প্রথমেই ক্যামেরার লেন্স পরিস্কার করে নিতে হবে। এছাড়া, মাইক্রোফোনটি কোথায় রাখলে দেখতে সুন্দর হয় সেটিও নির্বাচন করে ফেলতে হবে।

মোবাইল ব্যবহার করার সময় ব্যাটারি বাঁচাতে, কল এবং বিজ্ঞাপনের বাধা এড়াতে এয়ারপ্লেন মুডে রাখতে হবে। এছাড়াও ডোন্ট ডিস্টার্ব মি মুডে রাখতে হবে।

এছাড়া, ভিডিও করার ক্ষেত্রে ফ্রেমের দিকেও সমানভাবে নজর দিতে হবে। পর্যাপ্ত হেডস্পেস রাখতে হবে। ঠিক করতে হবে ফ্রেমের কোন পাশে আপনি থাকছেন। তাছাড়া, উপস্থাপনা করার সময় কোথায় তাকিয়ে কথা বলতে হবে, দর্শকদের সাথে আই কন্টাক্ট কেমন হবে সে বিষয়গুলোকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। ফোকাস এবং এক্সপোজার লক করতে হবে। অন্যথায় ক্যামেরা রেকর্ডিংয়ের সময় রুমের আলো পরিবর্তনের সাথে ফোকাস এবং এক্সপোজার পরিবর্তন হয়ে যাবে। আইফোনের ক্ষেত্রে AE/AF লক ব্যবহার করা যেতে পারে।

ভালো এবং স্থিতিশীল শটের জন্য সবসময় ভালো একটি ট্রাইপড ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও স্টুডিওর বিভিন্ন জায়গা ব্যবহার করেও ট্রাইপডের কাজ চালানো যেতে পারে।

 

অডিও

খুব সহজেই ভুল অডিও পাওয়া যায়, তবে সঠিক অডিও পেতে হলে আপনাকে সেটি নিয়ে মনোযোগী হতে হবে। খারাপ অডিও যেকোনো ভিডিওকে মূহুর্তেই নষ্ট করে দিতে পারে।

সেক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ড যত সাউন্ড আছে তার দিকে নজর দিতে হবে। সেগুলো অফ করে দিতে হবে। ভয়েসওভার বা সাক্ষাৎকার নেয়ার আগে সবসময় সাউন্ড চেক করে নিতে হবে। রুমের ফ্যান, এসি ইত্যাদি বন্ধ করে সাউন্ড রেকর্ডিং করতে হবে।

সবচেয়ে ভালো হচ্ছে বদ্ধ কোনো জায়গায় সাউন্ড রেকর্ড করা। ভয়েস দেয়ার সময় মাইক্রোফোন শিল্ড ব্যবহার করতে হবে।

অ্যাপল ইয়ারফোন বা এরকম কোনো ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে বদ্ধ কোনো জায়গায় ভয়েস দিতে হবে। অডিও দেয়ার সময় যেসকল শব্দ বাতাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সে শব্দগুলোকে রেকর্ড করার সময় সাবধানে রেকর্ড করতে হবে। এছাড়াও মাইক্রোফোনে মোজা ব্যবহার করেও এক্সট্রা সাউন্ড প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়াও পপিং সাইন্ড যেমন, প, ফ, ভ ইত্যাদি শব্দগুলো উচ্চারণের সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।