ভালো ডকুমেন্টরি বানানোর ৯টি টিপস


ভালো ডকুমেন্টরি বানানোর ৯টি টিপস

ছবি : সংগৃহীত

 

একজন ফিল্মমেকার হিসেবে হয়তো আপনি বিভিন্ন বিষয়ে এরইমধ্যে শর্ট রিপোর্ট তৈরি করেছেন। এই বিষয়ে অভিজ্ঞ হবার পর নিশ্চয়ই একটু বড় ডকুমেন্টরি তৈরি করার কথা ভাবছেন? বড় কোন ডকুমেন্টরি তৈরি করার কথা ভাবলে নিজেকে তৈরি করার পাশাপাশি কিছু জিনিস অবশ্যই মনে রাখতে হবে।

আই জে নেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ভালো ডকুমেন্টরি তৈরির খুব দরকারি ৯টি টিপস উল্লেখ করা হয়েছে। টিপসগুলো বিজেসি নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

 

. পরিকল্পনা করুন:

বড় ডকুমেন্টরি মানেই অনেক বেশি কাজ। আর তাই আগে থেকেই করতে হবে পরিকল্পনা। সময় নিয়ে বসুন এবং শ্যুটিংয়ের আগে পূর্ণ-পরিকল্পনা করুন। কী গল্প আপনি দর্শকদের শোনাতে চান সেটা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখুন। অনেকগুলো বিষয় দেখাতে গিয়ে মূল বিষয়বস্তু থেকে যেন সরে না আসেন সেদিকে খেয়াল রাখুন। কতোদিন ধরে শ্যুটিং করবেন, কবে থেকে শুরু করবেন, এডিট করতে কতোদিন লাগতে পারে সেগুলোর শিডিউল বানিয়ে নিন। ইন্টারভিউ এবং বি-রোলের পাশাপাশি ইনফোগ্রাফিক্স লাগবে কী না ঠিক করুন। কোথা থেকে মিউজিক তৈরি করবেন আগেই ঠিক করে ফেলুন। এছাড়া, কারা আপনার দর্শক, তাদের চাহিদা, গল্প, কতোদিনের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে, ডকুমেন্টরির সময় কতোটুক হবে, কোনো এপিসোড থাকবে কী না এবং প্রতিটি এপিসোডের দৈর্ঘ্য কতোটুকু হবে সেগুলোর পরিকল্পমা করুন।

 

. মূল চরিত্র খুঁজে বের করুন:

আপনার ডকুমেন্টরির মূল চরিত্র ঠিক করুন। ক্যামেরার সামনে কথা বলার জন্য আপনি কি কোনো রিপোর্টারকে বেছে নিবেন নাকি যার সাথে ঘটনা ঘটেছে তাকে নিবেন তা ঠিক করুন। মূল চরিত্রের সাথে আর কাদের দেখাবেন সেটাও ঠিক করে রাখুন।

 

. সাউন্ড কোয়ালিটি নিয়ে সতর্ক থাকুন:

আজকাল স্মার্টফোন দিয়েই অনেকে শ্যুটিংয়ের কাজ করে ফেলেন। আপনি ডিএসএলআরও ব্যাবহার করতে পারেন। যাই ব্যবহার করেন না কেন মনে রাখবেন বড় ডকুমেন্টরির জন্য বেশি ফুটেজ দরকার। আর আপনার ফুটেজ সংগ্রহ করার পর এর ব্যাকআপ ফাইল রাখতে ভুলবেন না। তবে, ফুটেজ যতো ভালোই হোক না কেন যদি আপনার ফুটেজের অডিও ভালো না হয় তবে তা দর্শককে ধরে রাখতে পারবে না। মনে রাখবেন, ভালো অডিওই দর্শককে মূল চরিত্রকে বুঝতে সাহায্য করে।

ছবি : সংগৃহীত

. আপনার মূল চরিত্রের ইন্টারভিউ একাধিকবার নিন:

ছোট কোনো রিপোর্ট করার সময় বা ছোট ডকুমেন্টরিতে হয়তো একবার ইন্টারভিউ যথেষ্ট। কিন্তু বড় ডকুমেন্টরির সময় একাধিকবার নেয়া ভালো। ইন্টারভিউয়ের আগেও একবার কথা বলে নিন যেনো মূল চরিত্রের সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারেন। বি-রোল শ্যুটের জন্য এটা দরকার হবে। প্রথম ইন্টারভিউটা শ্যূটিংয়ের শুরুতেই করে ফেলুন। আর সাথে সাউন্ড চেক করতে ভুলবেন না। ফাইনাল ইন্টারভিউয়ের আগে আবার বসুন। সবকিছুর সারসংক্ষেপ করুন। আর পরিকল্পনা মাফিক এই কাজগুলো করলে এর প্রতিফলন আপনার ডকুমেন্টরিতে দেখা যাবে।

 

. বেশি করে বি-রোল শ্যুট করুন:

ডকুমেন্টরিতে শুধু ইন্টারভিউ দেখাতে থাকলে তা খুবই একঘেয়ে লাগবে। তাই প্রাণবন্ত করে তুলতে বি-রোল শ্যুটের বিকল্প নেই। মূল চরিত্র ইন্টারভিউয়ের পাশাপাশি কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে কথা বলছে ইত্যাদি আপনার ডকুমেন্টরিকে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে।

 

.  এডিটিংয়ের সুবিধায় টাইমকোড লিখে রাখুন:

আপনার শ্যুটিং শেষ হওয়া মাত্রই ট্রান্সক্রাইব করুন এবং টাইমকোড লিখে রাখুন। এটা খুব সময়সাপেক্ষ কাজ হলেও এডিটের সময় অথবা যখন সময় কম থাকে হাতে, সেসময় ইন্টারভিউয়ের খুব দরকারি অংশের প্রয়োজন হলে আপনাকে তখন আর একঘন্টা ধরে ইমটারভিউ শুনতে হবেনা। সহজেই টাইমকোড দেখে বের করতে পারবেন।

 

 . অধ্যায় অনুযায়ী ভাবুন:

একসাথে গল্পের সবগুলো দিক তুলে ধরার চেষ্টা করবেন না। পুরোটা সময় ধরে ধীরে ধীরে গল্পটা তুলে ধরুন। একটার পর একটা সিকোয়েন্স তুলে ধরুন। মনে রাখবেন, আপনি ডকুমেন্টরি বিশেষজ্ঞদের জন্য না, সাধারণ দর্শকের জন্য কাজ করছেন। তাই তারা যেন সহজেই বুঝতে পারে সেভাবেই নির্মাণ করুন।

ছবি : সংগৃহীত

. টুইস্ট রাখুন:

ক্যামেরায় শ্যুটিংয়ের সময় এমন অনেক মুহুর্ত আসতে পারে যেটার জন্য আপনি এবং মূল চরিত্র প্রস্তুত ছিল না। এমন অপ্রত্যাশিত এবং স্বত:স্ফূর্ত  মুহুর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করুন যেখানে আপনার মূল চরিত্র ঘটনার সাথে এক হয়ে গেছে। এই মুহুর্তগুলো দর্শককে ঘটনা ও মূল চরিত্রকে বুঝতে সাহায্য করে।

 

. ফ্যাক্ট চেকিং:

ডকুমেন্টরির খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ফ্যাক্ট চেকিং। সব কাজ শেষ হবার পরও কিছু কাজ থেকে যায়। কোন নম্বর ব্যবহার করলে কিংবা তথ্য ব্যবহার করলে তা ঠিক আছে কী না অনএয়ারের আগে আবার চেক করুন। আপনার প্রথম সোর্সের পাশাপাশি দ্বিতীয় সোর্সের কাছ থেকেও তথ্যগুলো মিলিয়ে নিন। প্রয়োজনীয় সবকিছু আবারো দেখে নিন।

আর এই টিপসগুলো কাজে লাগাতে পারলে, দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে আপনার বানানো ডকুমেন্টরি।

 

আই জে নেট অবলম্বনে সাবরিনা আফরোজ