সংবাদ প্রকাশের আগে ভয় দূর করবেন যেভাবে


সংবাদ প্রকাশের আগে ভয় দূর করবেন যেভাবে

ছবি : সংগৃহীত

 

একটা সংবাদ প্রকাশ কিংবা সম্প্রচারের পেছনে থাকে সাংবাদিকদের অক্লান্ত পরিশ্রম। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ থেকে শুরু করে লেখা এবং পরবর্তীতে প্রকাশ করা পর্যন্ত থাকে বেশকিছু ধাপ। এই সংবাদ শেষপর্যন্ত মানুষের কাছে পৌছে দেয়া যতোটা আনন্দের ঠিক ততোটাই ভীতিকর হয়ে থাকে অনেক সাংবাদিকের জন্য। এমনকি খুব সুন্দর এবং গোছানো লেখা হবার পরও অনেক সাংবাদিকের মধ্যে ভয় কাজ করে তার কাজের মান নিয়ে। পাঠক কিংবা দর্শক সংবাদটি কীভাবে গ্রহণ করবে সেটা নিয়েও থাকে ভীতি।

এফিনিটি কোচিং এবং সুপারভিশনের মনোবিজ্ঞানী এমা ডোনাল্ডসন-ফিল্ডার মনে করেন, একদিকে সাংবাদিকদের অনেকে যেমন নিজেদের লেখা প্রকাশ করার জন্য খুব আনন্দিত থাকেন সেইসাথে তাদের লেখাটি প্রকাশ হবার পর পাঠকের কাছে কতোটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে সেটা নিয়েও ভয়ে থাকেন।

সোস্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে একটি সংবাদ প্রকাশের সাথে সাথেই মানুষ মতামত দেয়া শুরু করে। সারাক্ষণই সাংবাদিকের কাজগুলো পর্যবেক্ষণ হতে থাকে। কেউ হয়তো সমালোচনা করে, কেউবা ভুল ধরে এমনকি কেউ আক্রমনাত্মক মন্তব্যও করে। একজন সাংবাদিকের অবশ্যই নিজের কাজের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার বিষয় থাকে যা ইতিবাচক। কিন্তু মাঝেমাঝে এই ধরণের মন্তব্য সাংবাদিকদের জন্য মানসিক চাপের কারণও হতে পারে।

ছবি : সংগৃহীত

গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে লিখে সমালোচনের মুখে পড়েন সাংবাদিক  মানসি কল্যাণ। তিনি জানান সেসময় অনেক হুমকিও পেয়েছিলেন। এরপর নিজের মেধা এবং কাজের প্রতি আস্থা থাকা সত্বেও কোন প্রজেক্ট শুরু করার সময় ভীতি কাজ করে বলে জানান মানসি।

এমা ডোনাল্ডসন মনে করেন, অনেক সময় নতুন সাংবাদিকরা কোনো সংবাদ প্রকাশের পর কী ধরণের সমালোচনা হতে পারে সেই বিষয়গুলো না বুঝে চাপমুক্ত থাকেন। সেইসাথে, অনেকেই হয়তো শুরুতে বুঝে উঠতে পারেন না যে কোনো সমালোচনা কিংবা নেতিবাচক মন্তব্য কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে।

তবে, সময়ের সাথে সাংবাদিকরা এই বিষয়গুলোতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করেন জ্যাম প্রেসের সম্পাদক এলমারা আবগারিয়ান। এই বিষয়ে তিনি জানান যে তার লেখা পছন্দের একটি বিষয় সোস্যাল মিডিয়ায় সমালোচিত হয়েছিলো। তিনি সেসময়ের অভিজ্ঞতার কথাও জানান।

রাজনীতি নিয়েও তিনি অনেক লিখেছেন যা সমালোচিত হয়েছিলো। তিনি মনে করেন সাংবাদিকরা ট্রলের সহজ টার্গেট। মানুষ সাংবাদিকদের যেভাবে বাজে কথা বলে সেটা অনেক দু:খজনক বলে মত দেন তিনি। বিশেষ করে নারী সাংবাদিকরা তুলনামুলক বেশি খারাপ মন্তব্যের শিকার হন বলেও জানান তিনি।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মের নেতিবাচক দিক বিবেচনা করে কীভাবে সাংবাদিকরা ভালো কাজ করতে পারবেন এবং নিজের কাজের ওপর আস্থা রেখে যেকোনো প্রকাশনার পুর্ববর্তী ভীতি মোকাবিলা করতে পারবেন সেবিষয়ে কিছু টিপস দেন তারা।

 

নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন:

এমা বলেন যেকোনো ভীতি দূর করার প্রথম উপায় হলো নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। কোনো ভুল হলে নিজেকে ক্ষমা করতে এবং নিজের খেয়াল রাখতে পরামর্শ দেন তিনি। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করে সারারাত জেগে নিজের লেখাটি বার বার ঠিক না করে  ঘুমকে প্রাধান্য দিতে বলেন তিনি।

জানান কোনো কিছু নিয়ে ভয় পাওয়া কিংবা দুশ্চিন্তা করা খুব সাধারণ বিষয়। অনেক মানুষেরই এমন হয়। কঠিন পরিস্থিতি সবার জীবনেই আসে, আর মানুষ হিসেবে ভুলও সবাই করে। তাই শুধু নিজেকে দোষারোপ না করে বিষয়গুলোকে স্বাভাবিকভাবে নেয়ার পরামর্শ দেন এমা।

ছবি : সংগৃহীত

 

বিশ্বস্ত কারো সহায়তা নেয়া:

কোনো লেখা প্রকাশের আগে যদি ভীতি কাজ করে তবে বিশ্বস্ত কারো সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দেন আবগারিয়ান। কোনো কাছের বন্ধু, সহকর্মী, প্রশিক্ষক যাকে বিশ্বাস করা যায় তাকে নিজের লেখার ড্রাফট পড়তে দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তবে এমন কাউকে বেছে নিতে বলেন যিনি লেখার গঠনমুলক সমালোচনা করতে পারবেন। আবগারিয়ান নিজেও এমন করেছেন বলে জানান।

আবগারিয়ানের সাথে একমত এমা ডোনাল্ডসনও। তিনি বলেন বিশ্বস্ত কারো সাথে কথা বলে কিংবা সহায়তা নিলে তা ভীতি কাটানোতে সহায়তা করে।

মানসি কল্যান জানান তিনি এখনো  সাংবাদিকতার বিভিন্ন বিষয় শেখার চেষ্টা করছেন। সেজন্য লেখা নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেন তিনি। কোনো লেখা প্রকাশের পর সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত না হতে পরামর্শ দেন তিনি।

মানসি মনে করেন মানুষের কোনো প্রতিক্রিয়া একজন সাংবাদিককে সবার শত্রু বানিয়ে দেয়না। মানুষ সাংবাদিকের নামের চেয়ে তিনি কোন ঘটনা উন্মোচন করেছেন সেটাই বেশি খেয়াল করে বলে মনে করেন মানসি কল্যান।

বার বার সোশ্যাল মিডিয়ায় কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সেটা না দেখে নিজেকে পর্যাপ্ত সময় দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

 

নিখুঁত হবার চিন্তা থেকে দূরে থাকা:

সবসময় নিজের কাজ নিখুঁত এবং পরিপূর্ণ হতে হবে এমন চিন্তা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন এমা ডোনাল্ডসন। লেখাকে নিখুঁত করার চেষ্টায় বার বার লিখতে যেয়ে ডেডলাইন মিস করা, কিংবা ৩০ মিনিট ধরে একটা বাক্যকে ঠিক করার প্রবণতা থেকে সরে আসতে বলেন তিনি। যেকোনো লেখার আগেই একটা প্ল্যান করার কথা বলেন তিনি।

যেমন কখন লেখা শেষ করা হবে, কখন লেখাটা পাঠানো হবে ইত্যাদি। লেখাটা যদি সম্পাদক প্রকাশের জন্য ঠিক মনে করেন তাহলে সেখানে যদি কোন ছোট খাটো বানান ভুলও চোখে পড়ে সেটা নিয়েও না ভাবার পরামর্শ দেন এমা ডোনাল্ডসন। প্রতিটি লেখা নিয়ে দুশ্চিন্তা করাকে তিনি নিজের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন।

সাংবাদিকদের জন্য কোনটা সহজ, কীভাবে করলে বা লিখলে ভালো লাগে সেটা খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন আবগারিয়ান। যেমন ঠিকমতো ঘুমালে যদি লিখতে সহজ মনে হয় তবে ঘুমের আগে লেখার বিষয় নিয়ে পড়ে, সকালে ঘুম থেকে উঠে লিখতে পরামর্শ দেন তিনি। তবে, ডেডলাইন অনুযায়ী নিজের প্ল্যান করতে বলেন আবগারিয়ান।

তিনি বলেন কোনো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে লিখলে সেই বিষয়ে অন্যদের লেখা পড়ারও সুযোগ থাকে। সেক্ষেত্রে পাঠকের মন্তব্যগুলোর উত্তর কীভাবে দেয়া হয়েছে সেটাও বুঝতে পারা যাবে বলে জানান তিনি।

সবশেষ, নিজের সেরা লেখাগুলো বাসার দেয়ালে লাগিয়ে রাখার পরামর্শও দেন তিনি। যদি কখনো নিজের দক্ষতা ও মেধা নিয়ে আত্মবিশ্বাস কমে যায় তবে নিজের সেরা কাজগুলো সেসময় আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে বলে যোগ করেন তিনি।

 

আই জে নেট অবলম্বনে সাবরিনা আফরোজ