ডাটা জার্নালিজম : সাংবাদিক, শিক্ষাবিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ৫ উপায়


ডাটা জার্নালিজম : সাংবাদিক, শিক্ষাবিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ৫ উপায়

ছবি : সংগৃহীত

 

প্রতিটি নিউজ রুমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ডাটা।  প্রায় সব নিউজরুম জুড়ে সাংবাদিকতার কাজকে আরো গতিশীল করে তুলছে ডাটা। প্রতিদিনই নতুন নতুন সংবাদ, গল্প। ডাটা নির্দিষ্ট গল্প বলার অন্যতম একটা হাতিয়ার হতে পারে। যেমন দ্য গার্ডিয়ান এবং ফাইভ থার্টি এইটের মতো প্রতিষ্ঠিত সংবাদ মাধ্যমগুলোর কাছে অন্যতম বিষয় এই ডাটা জার্নালিজম।

সাংবাদিকতাকে ব্যাপক পরিবর্তন করে দিয়েছে এই ডাটা জার্নালিজম। বর্তমান সময়ে গবেষণা সাংবাদিকতার অন্যতম হাতিয়ার।

গবেষক দল ও সাংবাদিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। দুপক্ষই ফ্যাক্ট এবং ডাটা নিয়ে কাজ করে।

ছবি : সংগৃহীত

ক্লাসরুম এবং নিউজরুমের মধ্যে অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে:

পল ব্র্যাডশো ডাটা সাংবাদিকতা নিয়ে কাজ করেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তিনি ডাটা জার্নালিজমে ক্লাসরুম এবং নিউজরুম কীভাবে একসাথে কাজ করে তার একটি স্বচ্ছ ধারণা দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটিতে ডাটা জার্নালিজমে এমএ করার অংশ হিসেবে পল এবং তার ছাত্ররা দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, বিবিসি, আইটিএন, ম্যানচেস্টার ইভিনিং নিউজ, দ্য গার্ডিয়ান এবং সেন্টার ফর নিউজ সংস্থার সাথে কাজ করেছেন। তারা একসাথে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় কাজ করেছেন।

গবেষণার উন্নতির জন্য এই নিউজরুম এবং ক্লাসরুমের মধ্যে দুই পক্ষের সম্পর্কের অংশীদারিত্বকে আরো সম্প্রসারিত করতে হবে। এজন্য সংবাদ সংস্থাগুলোকে তাদের ডাটা জার্নালিজমের প্রক্রিয়াগুলোকে আরো বাড়াতে হবে।  সেজন্য গণমাধ্যমগুলোকে কিছু বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে একাডেমিক গবেষণা প্রকাশনা বৃদ্ধি করতে হবে। যেমনটা কাজ করে টো সেন্টার ফর ডিজিটাল সাংবাদিকতা এবং রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব জার্নালিজম।

 

সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলোর জন্যে শ্রেণিকক্ষে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে:

পশ্চিম লন্ডনের কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এম এ কোর্স ম্যাগাজিন জার্নালিজম। এই কোর্সের  ডিরেক্টর জন গুডি, তিনি যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকারের সাথে মিশে কিছু সম্ভাব্য সমস্যা চিহ্নিত করেন। এরপর সেই কোর্সে প্রকল্পগুলোকে শুধু গবেষণার মাধ্যমে বাস্তব প্রতিবেদনে পরিণত করেন।

তাদের গবেষণার মধ্যে ৯৯ টি পৃথক ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেসন প্রশ্ন জমা দেয়া হয়। এই সকল প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে তারা সংবাদ প্রকাশ করে। এভাবেই ডাটা জার্নালিজমের মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ নিউজ পাওয়া গিয়েছিল এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়েছিল।

ছবি : সংগৃহীত

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক:

সাংবাদিকদের তথ্য পাওয়ার জন্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমগুলো বড় একটি উৎস হতে পারে। এতে এমন অনেক সংবাদ উঠে আসতে পারে যা যেকোনো নাগরিক সমস্যা সমাধানের অন্যতম প্রধান উৎস।

অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্টিভ ডাইগ, যিনি দ্য মায়ামি হেরাল্ড-এ পাবলিক সার্ভিসের জন্য ১৯৯৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছিলেন। একটি সিরিজের জন্য তিনি এই পুরস্কার পান। সেখানে উঠে এসেছিলো কীভাবে দুর্বল বিল্ডিং কোড এবং দুর্বল নির্মাণকাজ হয়েছিলো এবং তাতে করে হারিকেন অ্যান্ড্রু দ্বারা কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিল।

এছাড়া, তিনি ২০১২ সালে জর্জ পোলক পুরস্কার জিতেন।

আর তার এই পুরস্কারগুলোর পিছনে রয়েছে এক দল শিক্ষার্থী। যাদের পরামর্শ ও গবেষণায় উঠে আসে বিভিন্ন তথ্য।

ছবি : সংগৃহীত

গবেষকদের জন্য আরো উন্মুক্ত করতে হবে নিউজরুম:

সাংবাদিকরা খবরের জন্যে খুব দ্রুতই শিক্ষক, শিক্ষাবিদ এবং ক্লাসরুমের গবেষণার ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা একাডেমিক যাচাই বাছাইয়ের জন্য তাদের নিউজরুমগুলোকে উম্মুক্ত করতে কম স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এই সমস্যা আরো জটিল হচ্ছে অনুমতি ছাড়া বিভিন্ন জরিপ গবেষকদের সাথে কথা বলা বা তাদের গবেষণা প্রকাশ করা। এ ক্ষেত্রে অনেক সময়ই তাদের বিভিন্ন ধরণের আইনি ঝামেলাতেও পড়তে হচ্ছে।

সাংবাদিকদের যেমন তাদের কাজ করার জন্য ভালো তথ্য উপাদান প্রয়োজন, তেমনি শিক্ষাবিদদেরও সাংবাদিকতা সম্পর্কে ভাল গবেষণা করার জন্য নিউজরুম এক্সেস প্রয়োজন। এটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক কারণ গবেষকরা সাংবাদিকতার জন্য ডেটাফিকেশন বলতে কী বোঝেন আর সাংবাদিকরা কীভাবে মেট্রিক ব্যবহার করেন তা শিখতে হলে উভয়পক্ষকেই একে অপরকে সাহায্য করতে হবে, নিজেদের জায়গায় এক্সেস দিতে হবে।

সংবাদ সংস্থাগুলো আরো একটু নিরপক্ষ হলে এই গবেষণা কার্যক্রম আরো অনেক দূর যেতে পারে।

ছবি : সংগৃহীত

গবেষণায় প্রবেশাধিকার দিতে হবে:

অন্যদিকে, শিক্ষাবিদরা তাদের কাজ উন্মুক্ত করে সাংবাদিকদের জন্য তা সহজলভ্য করে দিতে পারেন। এখন পর্যন্ত, "সাংবাদিকতার ডেটাফিকেশন" সম্পর্কিত কয়েক ডজন একাডেমিক স্টাডি তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে ডেটা গল্প বলার সরঞ্জামগুলোর বিবর্তন, সাংবাদিকতার নীতিশাস্ত্র এবং এর প্রভাবের ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে।

সাংবাদিকরা যাতে সহজেই এসব গবেষণাকর্ম পেতে পারেন, সেজন্য এগুলো উম্মুক্ত করে দিতে হবে।  অনেক সময়েই এই গবেষণাকর্মগুলো পেতে সাংবাদিকদের কঠিন সময় পার করতে হয়। তাই একাডেমিক এই ব্যবস্থাকে আরো সহজ করতে হবে।

 

অনুবাদ : সিউল আহমেদ

সৌজন্য : জার্নালিজম ডট কো ডট ইউকে