ভ্যাকসিন নিয়ে কোন গুজব নয়


ভ্যাকসিন নিয়ে কোন গুজব নয়

সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছে ভারত সরকারের দেয়া ২০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন। অক্সফোর্ডের এস্ট্রেজেনেকার এই ভ্যাকসিন প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে ভারত। এছাড়া দুই/একদিনেও বাণিজ্যিকভাবে আরো ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে বাংলাদেশে। মোট ৭০ লাখ ডোজের মাধ্যমে ৩৫ লাখ লোককে প্রয়াথমিকভাবে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের আওতায় আনা যাবে।

মহামারি করোনা মোকাবেলায় এই টিকা কাজ করবে এবং সংক্রমণ কমাবে বলেই ধারনা করছে। কিন্তু টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া  নিয়ে গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে একটি মহল। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন সেরাম ইন্সটিটিউটের এই টিকা এখন পর্যন্ত কার্যকর। সকল পর্যায়ের ট্রায়াল শেষেই এই টিকা বাজারে আনা হয়েছে। টিকা নিয়ে গুজব ছড়ানো ভিত্তিহীন বলেও মনে করেন তারা।

টিকা বিশেষজ্ঞ ড: তাজুল ইসলাম এ বারি বিজেসি নিউজেক বলেন, এখন পর্যন্ত যে ধরনের ভ্যাকসিন তৈরী হয়েছে তার মধ্যে কোনটিরই আঠারো বছরের নিচে কাউকেই দেয়া হবেনা। শুধুমাত্র ফাইজারের ভ্যাকসিন ১৬ বছর থেকে দেয়া যাবে।

মি. বারি আরো বলেন, বাংলাদেশে যে এস্ট্রোজেনেকার যে ভ্যাকসিন আনা হয়েছে সেটা কার্যকরী। এই ভ্যাকসিন সঠিক তাপমাত্রায় প্রান্তিক পর্যায়ে রাখার সক্ষমতা আছে বাংলাদেশের। সব ভ্যাকসিনেরই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এই টিকার ক্ষেত্রেও সেরকম সামান্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া কিছু নয়। টিকা নেয়ার পরে কমপক্ষে ৩০ মিনিটি অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া ৭ দিন ধরেও অবজারভেশনে থাকতে হবে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া  হয় কিনা।  জ্বর ও মাথা ব্যাথা হতে পারে। তা নিয়ে উদ্বীগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বরং ভ্যাকসিন গ্রহনে সাধারন মানুষকে আগ্রহী হতে আহবান জানান তিনি ।

মি. বারি বলেন, যুক্তরাজ্য ও ভারতে একই ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হচ্ছে। দুই একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া নেতিবাচক কিছু মেলেনি । প্রথম ডজ ভ্যাকসিন দেয়ার পরে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্বিতীয় ডোজ না দেয়ার পরামর্শ তার। এছাড়া কোন ধরনের এলার্জিজনিত সমস্যা হলে ভ্যাকসিনে দেয়া যাবেনা। ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রে খাবার কিংবা ওষুধে এলার্জি আছে কিনা তাও জানাতে বলেন তিনি।

এছাড়া এক কোম্পানির ভ্যাকসিন নিয়ে অনয় কণ কোম্পনীর ভ্যাকসিন না নেয়াই ভালো। যেহেতু ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতদিন তা এখনো জানা যায়নি তাই ভ্যাকসিন দেয়ার পরেও সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ তার।

এদিকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এটা জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। মানুষকে বিভ্রান্ত না করার আহ্বান জানাব। যারা মানুষের জীবন নিয়ে ষড়যন্ত্র ও রাজনীতি করতে চান, তারা ভালো মানুষ না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ টিকাদান কর্মসূচির অনেক অভিজ্ঞতা আছে। টিকাদানের মাধ্যমে পোলিও, ধনুষ্টঙ্কারসহ বেশ কয়েকটি রোগ নির্মূল হয়েছে। প্রতি বছর দেশে কোটি কোটি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি মানুষ এ বিষয়ে সচেতন। ভ্যাকসিনের হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, এটা সবার জানা। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটি ভালো। এর গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। যদি হয়, সরকার সেক্ষেত্রে চিকিৎসা দেবে।

ঢাকা দক্ষিনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন,

টিকা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে টিকা পৌঁছে গেছে। এরপরও কেউ গুজব ছড়ালে কঠিন জবাব দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে টিকা দেয়া হবে বলে জানান তাপস।

এদিকে ভ্যাকসিন নিয়ে গুজব প্রতিরোধসহ টিকাদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা করতে সরকার গঠিত ৪ কমিটিকে সক্রিয় করা হচ্ছে।

২০২১ সালের মধ্যে টার্গেট বিশ্বের ১০০ কোটি জনকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার লক্ষ্য রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।