গ্রীষ্মে প্রকোপ কমবে করোনার ?


গ্রীষ্মে প্রকোপ কমবে করোনার ?

সারা বিশ্বের মানুষের মত করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কিত বাংলাদেশের মানুষও। আতঙ্কের সাথে সাথে ছড়াচ্ছে নানা বিভ্রান্তি। এমনি একটি হলো- ‘গরম বাড়লে করোনার প্রকোপ কমে যাবে।’ তবে নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণারতরা বলেছেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত টানার সময় এখনও আসেনি।

করোনা পরিবারে ডজনখানেক ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে। এর মধ্যে মাত্র ৭ ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ বলে এখন পর্যন্ত জানা গেছে। ৪টি ভাইরাসের উপসর্গ হিসেবে সর্দি, কাশি, জ্বর দেখা যায় এবং এগুলো সাধারণ। বাকি ৩টি নতুন এবং প্রাণঘাতী। ধারণা যে, SARS ও MARS’র সর্বশেষ ধরণ কোভিড-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাস।  SARS বাদুড় থেকে ও MARS উট থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তবে নতুন করোনাভাইরাসের উৎপত্তি কোন প্রাণী থেকে হয়েছে, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় গবেষকরা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিন কয়েক আগে টুইটারে লিখেছিলেন, গরমে করোনাভাইরাসের প্রকোপ আর থাকবে না। তার এ মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যমে। কিন্তু, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণায় এমন কোন প্রমাণ এখনও মেলেনি। করোনাভাইরাসকে সাধারণ ফ্লুর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলায় এমন মন্তব্য করেছেন তিনি বলে ধারণা করা যায়। সাধারণ ফ্লু সাধারণত শীতকালেই হয় এবং গ্রীষ্মে এর প্রকোপ কমে যায়।

মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিনের গবেষক স্টুয়ার্ট ওয়েসটন বলেছেন, ‘আমার ধারণা, নতুন করোনাভাইরাসটিও সিজনাল (ঋতুভিত্তিক)। কিন্তু সেটি এখনও নিশ্চিত নয়।’

গবেষকরা জানান, বেশিরভাগ ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকে অক্টোবর থেকে মার্চ অথবা এপ্রিল পর্যন্ত। ঠান্ডা ও শুস্ক বাতাসে ভাইরাসের জীবাণু বেশি সক্রিয় থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ তাপমাত্রা ও বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ইনফ্লুয়েঞ্জার জীবাণুর সক্রিয়তা কমে যায়।

করোনাভাইরাস নিয়ে এখনও বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। গবেষকরা SARS ও MARS ভাইরাসের সঙ্গে নতুন করোনাভাইরাসের মিল-অমিল খতিয়ে দেখছেন। SARS ভাইরাসের ডিএনএ-র সঙ্গে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসের মিল রয়েছে ৯০ শতাংশ। ২০০২ সালের নভেম্বরে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বব্যাপী, যার প্রকোপ শেষ হয়েছিল ২০০৩ সালের জুলাই মাসে। অর্থাৎ গরমের সময়ে এর প্রাদুর্ভাব কমেছিল। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও সেটি হবে কিনা, এ নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন গবেষকরা।

অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে উৎপত্তি হওয়া MARS ভাইরাসের সঙ্গে আবহাওয়ার বিষয়টি সম্পৃক্ত নয়। কারণ, তুলনামূলকভাবে গরম অঞ্চলে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল এবং এখনও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর মেলে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মার্ক লিপস্টিচ বলেছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে এ ভাইরাসের প্রকোপ কমা বা বাড়ার সম্পৃক্ততা আছে বলে তিনি মনে করেন না। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ডেভিড হেইম্যান বলেছেন, ‘গ্রীষ্মে কমছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ – এমনটা বলার সময় এখনও হয়নি। কারণ, আমাদের প্রাপ্ত তথ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টানার জন্য যথেষ্ট নয়।’