প্রফেসর নজিবুর রহমানকে খুঁজে ফেরার গল্প


প্রফেসর নজিবুর রহমানকে খুঁজে ফেরার গল্প

৩০শে জানুয়ারি ২০২১ পশ্চিমবাংলার অ্যামেচার রেডিও ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জনাব অম্বরিশ নাগবাবু একটি খুদে বার্তা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালেন। যেখানে একজন রহমানের নাম রয়েছে-তিনি আশির দশকে ঢাকা কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপনা করতেন। তার সহধর্মিণী ডক্টর নূরুন্নাহার রহমান কলকাতাস্থ উপহাইকমিশনের কর্মরত ছিলেন।

তাদের পারিবারিক বন্ধু একজন সিনিয়র সাংবাদিক অর্ণব দাস গুপ্ত এই পরিবারকে খুঁজছেন।

অর্ণব দাস গুপ্ত, রহমান পরিবারের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন, দীর্ঘদিন তাদের কোন যোগাযোগ না থাকায় পশ্চিমবাংলায় অ্যামেচার রেডিও ক্লাব কাছে সাহায্য চান। পরবর্তীতে ডাবলু বি এস সি সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বাবু আমাকে বিষয়টি জানালে আমি  রহমান পরিবারকে খোঁজার চেষ্টা করছি।

প্রথমে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর সহকারি এমদাদ এর শরণাপন্ন হই। তাকে পুরো বিষয়টা অবহিত করা হলে নজিবুর রহমানের স্ত্রী ডক্টর নূরুন্নাহার রহমানের তথ্য দেবার কথা জানান। পাশাপাশি আমি ঢাকা কলেজে বাংলা বিভাগ যোগাযোগ করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি।

ঢাকা কলেজের ওয়েবসাইট থেকে চলতি দায়িত্বে থাকা বাংলা বিভাগের প্রধান মোটো ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে তার সঙ্গে কথা বলি, তিনি নজিবুর রহমান এর বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

পরদিন সকালে ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধানের অফিসে গেলে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখা প্রধানদের নামের তালিকা থেকে নজিবুর রহমান নামে একজন অধ্যাপক ১৯৮৫ সাল থেকে সপ্তাশি সাল পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন‌। আমি যে রহমানকে খুঁজছি ইনি সেই রহমান কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ি। একজন সহযোগী অধ্যাপক এর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি রহমান সাহেবের পরেই বাংলা বিভাগের দায়িত্বে আসেন আমাদের শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার। স্যারের মুঠোফোনে পরপর তিনদিন যোগাযোগ করেও তার ফোনে সংযোগ স্থাপন করতে পারিনি। বাংলা বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক গত ১০ বছর আগে বাংলা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক সানজিদা আক্তার এর ফোন নাম্বার দেন। অধ্যাপক ম্যাডামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আমি যে রহমান সাহেবকে খুঁজছি তার ব্যাপারে কোন প্রকার তথ্য দিতে পারেননি।

এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে আবারো কলকাতায় জনাব অর্ণব দাস গুপ্ত কে ফোন করে রহমান সাহেবের কোন ছবি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে খানিক পরেই তিনি দুটি ছবি পাঠিয়ে দেন। তা নিয়ে বাংলা বিভাগে আবার ফেরত গেলে কাউকে খুঁজে পাইনা ‌। হঠাৎ করে মনে হল এখন যারা কর্মরত রয়েছেন তারা সবাই নতুন জনাব রহমান ৩৫ বছর আগে চাকরিরত ছিলেন সে কারণে পুরনো একজন কাউকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি। অবশেষে শিক্ষকদের লাউঞ্জে একজন সহকারি জনাব কাশেমের দেখা পাই। তার বয়স ৭০এর কাছাকাছি। কলকাতা থেকে প্রাপ্ত ছবিটি কাসেমকে দেখালে উনি নিশ্চিত করেন এই রহমান সেই নজিবুর রহমান যিনি বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে ১৯৮৫-৮৭ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ছবিটি দেখে জনাব কাশেম আবেগ তাড়িত হয়ে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান সম্পর্কে অনেক স্মৃতিচারণ করেন। কথা বলেন তার ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে। জনাব কাশেম আমাকে আরো তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সাহায্য করবেন এই আশ্বাস নিয়ে ফিরে আসি।এক সপ্তাহ গত হলেও কোনো রকম তথ্য কাশেম ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া গেল না।

একদিন ঢাকা কলেজের কাশেম আমাকে ফোন করে জানালেন যে প্রফেসর আইরিন ম্যাডাম নজিবুর রহমান সম্পর্কে জানতে পারেন।আইরিন ম্যাডাম ঢাকা কলেজে চাকরি ছেড়ে মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে জয়েন করেছেন।সরকারি বাংলা কলেজের ওয়েবসাইট থেকে অধ্যক্ষ আইরিন ম্যাডামের নাম্বার খোঁজার চেষ্টা করি কিন্তু সেখানে কোন নাম্বার না থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হলো না। পরে ফেসবুকে কলেজের সাংবাদিক সমিতির পেজ থেকে সাধারণ সম্পাদকের একটি নাম্বার  পাই ।তার কাছে অধ্যক্ষ ম্যাডামের নাম্বারটা চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, নজিবুর রহমান এর কোন তথ্য অধ্যক্ষ ম্যাডামের কাছ থেকে পাওয়া যাবে কিনা জেনে আমাকে জানাবেন। ২৪ ঘন্টা পর তাকে ফোন করলে উনি অধ্যক্ষ ম্যাডামের কথা বলেছেন এবং মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তার কাছে কোনো তথ্য নেই তাও জানিয়ে দিলেন।

অবশেষে আজ ১৬ ই ফেব্রুয়ারি একটি টি এন্ড টি নম্বরের সূত্র ধরে নীলক্ষেত এক্সচেঞ্জ এগিয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করি। দীর্ঘদিন সেই নাম্বারটি ব্যবহৃত না হওয়ায় বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। পরে বিশেষ অনুরোধে ব্যবহারকারীর বাসার ঠিকানাটা সংগ্রহ করে নেই। সংগৃহীত ঠিকানা অনুসারে ৪৬ মিরপুর রোডের "সাগরিকা"নামে ভবনে উপস্থিত হই। সেখানে দায়িত্বপালনরত দারোয়ান মাহফুজ এর কাছ থেকে জানতে পারি যে প্রায় ১০  বছর আগে ডাক্তার নুরুন্নাহার এই বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। তথ্য সংগ্রহ কালে জানা যায় নুরুন্নাহার ম্যাডাম যে ফ্ল্যাটে বসবাস করছিলেন সেটি তার ভাইয়ের তবে তার ভাই ঢাকায় থাকেন না থাকেন দেশের বাইরে। তবে বর্তমানে কচি নামে এক ভদ্রলোক সেই ফ্লাটে দেখাশোনা করেন।

কতর্ব্যরত নিরাপত্তা প্রহরী মাহফুজ কচি সাহেবের ফোন নাম্বার দিলে তাকে ফোন করা  হয়-কোনো  উত্তর পাওয়া যায়নি। আলোচনার এক পর্যায়ে জানা যায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন থেকে নিয়মিত চিঠি আসতো। নুরুন নাহারের সদস্য নাম্বার আ১১১৭। ঠিকানা খুঁজে ধানমন্ডি ৫/এ এর অফিসে কল্যাণ ও ঝুঁকি বিভাগের প্রধান জনাব জালাল উদ্দিনকে বিস্তারিতভাবে জানালে তিনি নিজে থেকে তার ঠিকানা বের করে দেন আমি যে ঠিকানায় গিয়ে ফিরে এসেছি সেই ঠিকানাই সেখানে লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেখানে কোন মোবাইল নাম্বার নেই।

এখন শুধু সেই ফ্ল্যাটের তত্ত্বাবধায়ক জনাব কচি সাহেবকে ফোনে পাওয়াই শেষ ভরসা।