আফগানিস্তানে কাজ করা সাংবাদিকদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেয়ার আহ্বান


আফগানিস্তানে কাজ করা সাংবাদিকদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেয়ার আহ্বান

ছবি : সংগৃহীত

 

প্রায় দুই দশক পর আফগানিস্তান তালেবানের দখলে চলে যাওয়ার পর আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আফগানিস্তানের সাধারণ নাগরিকরা। তালেবান শাসনের ভয়ঙ্কর পরিণতি আঁচ করতে পেরে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে আপ্রাণভাবে চাইছেন দেশ ছাড়তে।

তালেবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করায় ঝুঁকির মুখে পড়েছেন দেশটিতে কাজ করা শত শত সাংবাদিকও। এদের মধ্যে কিছু বিদেশী সাংবাদিক আছেন তবে বেশিরভাগই আফগান, যাদের অনেকেই গত ২০ বছর ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাথে কাজ করেছেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে আফগানিস্তানের সাংবাদিকদের নিরাপদে বের করে আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জরুরি ভিসা দেয়ার দাবি জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট-সিপিজে। ১৬ আগস্ট, সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠনটি।

সম্প্রতি আফগানিস্তান তালেবান নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রকে আফগান সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আরও কাজ করতে হবে।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এবং দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সঙ্গে কর্মরত আফগান সাংবাদিকরা এখনো দেশ ছেড়ে যেতে পারেননি। এ কারণে মার্কিন অভিযানে সাহায্য করা সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের আফগানিস্তান থেকে বের করে আনতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে যৌথ বিবৃতি পাঠিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো।

 

ছবি : সংগৃহীত

 

এ বিষয়ে সিপিজে'র নির্বাহী পরিচালক জোয়েল সাইমন বলেন, 'আফগান সাংবাদিকদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দায়িত্ব আছে। 'বাইডেন প্রশাসনের উচিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং বিপদগ্রস্ত আফগান সাংবাদিক, ফটোসাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো।'

বলেন, 'আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আফগানিস্তানে কী হচ্ছে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে হলে এককালের সুসংহত ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাসনে থেকে হলেও সংবাদ সংগ্রহ ও প্রতিবেদন তৈরির কাজ চালিয়ে যেতে হবে।'

এর আগে নিরাপদ স্থানে যেতে ইচ্ছুক কয়েকশ সাংবাদিকের নিবন্ধন ও তাদের আবেদনের সত্যায়ন করেছে সিপিজে। উচ্চপর্যায়ের ঝুঁকিতে আছেন ৪৫ জন, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঝুঁকিতে আছেন ১২৭ জন আফগান গণমাধ্যম সদস্য এবং মার্কিন সংবাদ সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত আরও ১১৯ জন গণমাধ্যমকর্মী।

সিপিজে জানিয়েছে, অনেক নারী সাংবাদিক ঝুঁকিতে রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন সময় নারী অধিকার নিয়ে লেখালেখি করেছেন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় অল্প কিছু সাংবাদিক আফগানিস্তান ত্যাগ করতে পেরেছেন। ঝুঁকিতে থাকা বেশিরভাগ সাংবাদিক আত্মগোপনে আছেন। তালিকায় সাংবাদিকদের যুক্ত করা হলেও তাদের পরিবারের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত নন। তবে তাদেরকেও সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

 

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট-সিপিজে

 

সিপিজে'র গবেষণা অনুযায়ী গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে প্রায় ৫৩ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে এক বছরেই পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তানে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের সময় এগিয়ে আসা এবং দেশটির বেশিরভাগ অংশে তালেবানের দখল প্রতিষ্ঠার কারণে শুরু থেকেই আফগান সাংবাদিকরা সিপিজে'র কাছে সাহায্য চেয়ে আসছিলেন, যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে ঝুঁকিতে থাকা সাংবাদিকদের জন্য জরুরি ভিসার স্বপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে সিপিজে। সম্প্রতি সিপিজে আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জরুরি সহায়তা ও আফগান সাংবাদিকদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়ার কাজের গতি বাড়িয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্যান্য দেশের সরকার সাংবাদিকদের সরিয়ে নেয়া ও আশ্রয় দেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।