“আদালত ছাড়া জব্দ আলামত প্রদর্শনের সুযোগ নেই’’


“আদালত ছাড়া জব্দ আলামত প্রদর্শনের সুযোগ নেই’’

 

সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে চিত্রনায়িকা পরীমণিকে প্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ৪ আগস্ট, বুধবার বিকেলে তার বনানীর বাসায় প্রায় ৩ ঘণ্টার অভিযানের পর প্রথমে আটক করে পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসময় বাসা থেকে কিছু বিদেশি মদ ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় র‍্যাব।

পরীমণি ছাড়াও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে গ্রেপ্তার করা হয়। নজরুল ইসলামের রাজের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনসহ সকলের বিরুদ্ধেই মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা করা হয়।

 

চিত্রনায়িকা পরীমণি

র‍্যাবের পক্ষ থেকে পরীমণির বাসা থেকে জব্দকৃত আলামত হিসেবে বিপুল পরিমাণ মদের বোতলের ছবি সাংবাদিকদের সামনে প্রদর্শন করা হয়। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন কী বলছে এসব আলামতের বিষয়ে জানতে বিজেসি নিউজ কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুমের সাথে। এ বিষয়ে হাসনাত কাইয়ুম জানান, “আইনের হিসাবে মদ এবং মাদক ভিন্ন শব্দ। মদ বাংলাদেশে বৈধ, লাইসেন্স করে যে কেউই মদ কিনতে পারেন। মদসহ কাউকে ধরা হলে কোথা থেকে কিনেছে, কীজন্য কিনেছে বিস্তারিত বলতে না পারলে সর্বোচ্চ ৫০-১০০ টাকা জরিমানা হতে পারে”।

তবে মাদক অবৈধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ড্রাগের বাংলা হচ্ছে মাদক। কত পরিমাণ মাদকের জন্য কী পরিমাণ সাজা হবে সেটা আলাদা করে উল্লেখ আছে।

বাংলাদেশে ২০১৮ সালে অনুমোদিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০২০ সালে কিছুটা সংশোধন করা হয়। আইন অনুযায়ী বিভিন্ন অপরাধে এক বছর থেকে পনের বছরের কারাদণ্ড এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্তও শাস্তির বিধান রয়েছে।

পর্নোগ্রাফির আইন অনুযায়ী কেউ যদি পর্নোগ্রাফি বহন করেন সেটা তেমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয় বলে মন্তব্য করেন হাসনাত কাইয়ুম। তবে কাউকে ব্যবহার করে বা পর্নোগ্রাফিতে কাজ করতে বাধ্য করলে তার সর্বোচ্চ শাস্তিও হতে পারে বলে জানান তিনি।

 

মডেল মৌ ও পিয়াসা 

বাংলাদেশে ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২’ অনুযায়ী,  ‘কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে কোনো নারী, পুরুষ বা শিশুকে প্রলোভন দিয়ে জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে স্থির, ভিডিও বা চলচ্চিত্র ধারণ করলে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড আরোপ করা যাবে। এই বিলে আরো বলা হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে কারও সম্মানহানি করেন বা কাউকে ব্ল্যাকমেইল করেন বা করার চেষ্টা চালাযন তবে বিচারক ২ থেকে ৫বছর মেয়াদী কারাদণ্ড আরোপ করতে পারবেন এবং তদুপরি, ১ থেকে ২লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড আরোপ করতে পারবেন। শিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি উৎপাদন ও বিতরণকারীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং অধিকন্তু ৫ লাখ টাকা জরিমানা আরোপের বিধান রাখা হয়েছে’।

 

নজরুল ইসলাম রাজরাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজ

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ব্যতীত গ্রেপ্তার করাটা কতোটা আইনসম্মত এমন প্রশ্নে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “সাধারণ ফৌজদারি আইন, দণ্ডবিধি আইন অনুযায়ী তল্লাশির ওয়ারেন্ট ব্যতীত আইন শৃঙ্খলাবাহিনী কোন তল্লাশি চালাতে পারবে না। এসব আইনে পুলিশের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করা হলেও কিছু বিশেষ আইন যেমন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, শিশু নির্যাতন ও দমন আইন, মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী তারা তল্লাশি চালাতে পারে। আইনের মাধ্যমে পুলিশকে এই ধরনের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এ সকল আইনে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ক্ষমতা সীমাহীন”।

চিত্রনায়িকা পরীমণিকে আটকের পর সাংবাদিকদের সামনে জব্দকৃত মালামাল প্রদর্শন করে র‍্যাবব। এ ধরনের জব্দকৃত আলামত প্রদর্শনের ব্যাপারে আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “জব্দকৃত কোন মালামাল কিংবা আসামিকে প্রদর্শন করার কোন আইনী অধিকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেই। জব্দকৃত আলামত তারা শুধু আদালতে জমা দিতে পারে। এছাড়া কোন আসামিকেই তারা প্রদর্শন করতে পারেন না”। 

তিনি বলেন, “আসামি বিচারের আগ পর্যন্ত নির্দোষ। কিন্তু বিচারের আগে প্রদর্শনের মানে হচ্ছে তাকে মব জাস্টিসের হাতে ছেড়ে দেয়া। পুলিশের দায়িত্ব মব জাস্টিস থেকে নাগরিককে রক্ষা করা। এসব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নাগরিক চাইলে মানহানী মামলা করতে পারেন। চাইলে কেউ রিট করতে পারেন এবং ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন”।