পরীমণির গাড়িবৃত্তান্ত ও দায়হীন সাংবাদিকতা


পরীমণির গাড়িবৃত্তান্ত ও দায়হীন সাংবাদিকতা

 

২০২০ সালের ২৪ জুন আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণির সাদা রঙের হ্যারিয়ার গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। ঘটনার ২৪ ঘন্টা পার হবার আগেই প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার রয়েল ব্লু রঙের মাসেরাতি গাড়ির ছবি প্রকাশ করেন পরীমণি। ছবি প্রকাশের পরপরই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। পরীমণি দাবি করেন, ব্যাংক লোন নিয়ে তিনি গাড়িটি কিনেছেন।

সম্প্রতি বহুল নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে পরীমণিকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান-র‍্যাব। গ্রেপ্তারের পর পরীমণি বিষয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসতে থাকে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে। সেই সূত্র ধরেই আবার আলোচনায় আসে সেই সাড়ে তিন কোটি টাকার রয়েল ব্লু রঙের মাসেরাতি গাড়ি।

তবে র‍্যাবের দাবি গাড়িটি ব্যাংক লোন বা ক্যাশ টাকা দিয়ে ক্রয় করেননি পরীমণি বরং একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে গাড়িটি উপহার পেয়েছেন।

 

 

এ বিষয়ে র‍্যাবের সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, পরীমণির সঙ্গে সম্পর্ক থাকা ওই ব্যাংক চেয়ারম্যানের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তিনিও নজরদারিতে রয়েছেন। এছাড়া ওই ব্যাংকে পরীমণির বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেগুলো এরইমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে।

এসব ঘটনার মধ্যেই জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকে উপাহারদাতার নাম হিসেবে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিনের নাম উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পরপরই তা সত্য নয় বলে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পালটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন মাশরুর। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘নায়িকা পরীমণির সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে হলুদ সাংবাদিকতা’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

স্ট্যাটাসে তিনি ইত্তেফাকের সংবাদকে মিথ্যা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘ইত্তেফাক লিখে দিল: “একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনের সঙ্গে পরীমণির অডিও রেকর্ডে একটি গাড়ি উপহার দেওয়ার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত রুবেলের সঙ্গে পরীমণির গভীর সখ্যের বিষয়টি কথোপকথনে উঠে এসেছে”।’

 

 

স্ট্যাটাসে পরীমণির সাথে তার কখনো কোন ধরনের কথা হয়নি উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমি এই মর্ত্যের পৃথিবীতে, এই ধরাধামে পরীমণি নামের কাউকে দেখিনি। অতএব তার নম্বর আমার কাছে থাকার প্রশ্নই আসে না। এমনকী ‘বোট ক্লাব’ ঘটনার আগে পর্যন্ত পরীমণি নামটাও শুনিনি। আমার তখন মানুষকে জিজ্ঞাসা করতে হয়েছিল যে, কে এই পরীমণি?’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি লিখেন, ‘সাংবাদিক ভাইয়েরা, কী লিখেছেন আপনারা এসব? মানুষ ও তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন আপনাদের কাছে এতই ফেলনা যে, নামটাও ঠিক জেনে লিখবেন না? প্রিয় ইত্তেফাক, আমার ব্যাংকের চেয়ারম্যানের নাম আলাদা। সেটা শওকত রুবেল না’।

মাশরুর আরেফিনের এই স্ট্যাটাসের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে আবারও আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বশীল হবার আহবান জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন।

জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।