অনলাইনে তথ্য এবং গণমাধ্যমের দায়িত্ব


অনলাইনে তথ্য এবং গণমাধ্যমের দায়িত্ব

 

বর্তমান সময়ে সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর মাধ্যমে অনেক সংবাদ, তথ্য খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। আর এর ফলেই বিশ্বে প্রায়ই ভুয়া সংবাদ, তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। যার ফলে তৈরি হয় বিভাজন।

বর্তমান সময়ে কোভিড নিয়েও এরকম বিভিন্ন ভুল তথ্য, সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছিলো। আর এ নিয়েই যুক্তরাজ্যে চলে গবেষণা। সম্প্রতি জার্নালিজম ডট ইউকে তাদের এক প্রতিবেদনে অফকম ডিজিটাল হ্যাবিটের এ নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে। প্রায় অর্ধেক ব্রিটিশ নাগরিক মহামারি চলাকালীন সংবাদ এবং তথ্য দেখতে অনলাইনে গিয়েছে। গতবছর কোভিড নিয়ে ভুল তথ্য পেয়েছিলো প্রায় ৪৬ শতাংশ। অফকম ডিজিটাল হ্যাবিট তাদের নতুন জরিপে এসকল তথ্য দেয়।

বর্তমান সময়ে মানুষ ক্রমাগত সংবাদ আপডেটের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে ঝুঁকছে। তবে এই গবেষণা বলছে, মহামারি সম্পর্কে তথ্য পেতে যারা ফেসবুক ব্যবহার করেছিল তাদের মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ এসকল তথ্য বিশ্বাস করেছে। আর প্রায় অর্ধেক ৪৩ শতাংশ পাঠক তথ্য বিশ্বাস করেনি।

মহামারির সময়েও শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া আউটলেটগুলোতে সম্মিলিত সাইট ট্র্যাফিক গত বছরের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। যদিও কোভিড সংকটে যুক্তরাজ্য সরকারের সরাসরি দৈনিক ব্রিফিংয়ে এটি হতে পারে। তবে সরাসরি সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য দেয়াতে জাতি অনেক উপকৃত হয়েছিলো।

সোস্যাল মিডিয়ার তাত্ক্ষণিক যেকোনো ঘটনা যেকোনো সময় মানুষ তা শেয়ার করতে পারে। ফলে এসকল তথ্যে সাধারণ মানুষ যাচাই করার সুযোগ পায় না। ফলে কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা তা নিয়ে বিভাজন সৃষ্টি হয়। তবে বিভাজন হলেও কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের বেশি বৈচিত্র্যময় সংবাদ গ্রহণের অভ্যাস রয়েছে।

প্রায়ই ভুল তথ্যগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে পাঠকদের কাছে পৌঁছায় এবং অনেকেই তা বিশ্বাস করে। ফলে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া সাধারণ ঘটনাগুলোও কঠিন থেকে কঠিনতম হয়ে উঠে। অনেক সময়ই আমাদের পরিবার ও কাছের মানুষ এ সকল তথ্য বিশ্বাস করে ফেলে। বিশ্বে সোস্যাল মিডিয়া একই সাথে পরিচালিত হয়। সুতরাং শেয়ারিং এবং কানেকশন হওয়া পোস্টগুলো অনেক দ্রুত বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে। আর এ সকল তথ্য রুখে দেয়া অনেকটা কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং।

আর এই কারণগুলোর জন্য, মহামারি করোনা শুরুর দিকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পরে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যে ২০২০ সালের মার্চ মাসে "করোনাভাইরাস ষড়যন্ত্র তত্ত্ব" অনলাইনে অনুসন্ধানের সংখ্যা প্রায় ১৩২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, এরইমধ্যে এরকম অনেক কিছুই অনুসন্ধান বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন "করোনাভাইরাস বায়ু -অস্ত্র" নামে অনুসন্ধান ৩৭৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। , "করোনাভাইরাস জাল" অনুসন্ধান ৪৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি এবং "করোনাভাইরাস কি বাস্তব?" এই অনুসন্ধান বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪৫৬ শতাংশ। এসকল কারণেই দিন দিন ডেটা সাংবাদিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গণমাধ্যমগুলোর অন্যতম প্রধান কাজ ইন্টারনেট থেকে তথ্যগুলো নিয়ে সেগুলোর মিথ্যা সংবাদ সনাক্ত করা এবং যাচাই করা। ভুল এবং বিভ্রান্তি ছড়ানো তথ্যগুলোকে সঠিক করে সেগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া প্রেসের অপরিহার্য দায়িত্ব।

একই সাথে গণমাধ্যমকে ডিজিটাল দুনিয়াতে সববসময় আপ টু ডেট থাকতে হবে, যাতে ভুল এবং মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে না পড়ে। তবে এরপরেও অনেক গণমাধ্যম মিথ্যা তথ্যগুলো যাচাই না করে সেগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে চলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। তাই স্বনামধন্য মিডিয়া আউটলেটগুলোর প্রধান চাবিকাঠি হওয়া উচিত পাঠক ও দর্শকদের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরা।