২৬ মার্চের মধ্যে ডিজিটাল আইন বাতিলের আলটিমেটাম


২৬ মার্চের মধ্যে ডিজিটাল আইন বাতিলের আলটিমেটাম

২৬ মার্চের মধ্যে ডিজিটাল  আইন বাতিলের আল্টিমেটাম দিয়েছে নাগরিক সমাজ। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে গড়ে তোলা প্ল্যাটফর্ম ‘নাগরিক সমাজ’ বুধবার এই ঘোষনা দিয়েছে।

কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে এই দাবি জানানো হয়।

সকাল ১১ টায় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রেসক্লাবে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১১টা শুরু হয়ে প্রায় সোয়া ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন  গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী,নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতা ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

জোনায়েদ সাকি বলেন, "ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বর্তমানে গদি নিরাপত্তা আইনে পরিণত হয়েছে'। আদালতের কাছে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “সরকার স্বৈরাচার হয়ে গেলে মানুষ আদালতের কাছে যায় কিন্তু আদলত কেন লেখক মুশতাকের জামিন মঞ্জুর করলেন না?”

সভাপতির বক্তব্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী আদলতকে কার্টুনিস্ট কিশোরকে জামিন দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান।

আন্দোলনকারীরা সমাবেশে শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। পদযাত্রাটি তাদের যাত্রাপথে তিনবার পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে এগিয়ে যায়।

নাগরিক পদযাত্রা শাহাবাগ পার হয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পৌঁছলে পুলিশ দুই স্তর ব্যারিকেড দিলে আন্দোলনকারীরা সেখানে সমবেত হয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে থেকে ২৬ শে মার্চের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুশিয়ারি দেন বক্তারা।

ব্যারিকেডের সামনে পদযাত্রার সভাপতি জাফরুল্লাহ চৌধুরী পুলিশদের উদ্দেশ্য করে বলেন, "আপনাদের জন্য, আমাদের জন্য, সকল সাধারণ মানুষের জন্য এই আইন বাতিল প্রয়োজন''। তার বক্তব্যে তিনি পুলিশকে রাস্তা ছেড়ে দেয়ার আহবান জানালেও পুলিশ সাড়া দেয়নি।

 

রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘"আমরা তাদের কোথাও বাঁধা দেইনি। এখানে ব্যারিকেড দিয়েছি, কারণ এটা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা। আমরা তাদের বুঝিয়েছি। তারা সেটা মেনে নিয়ে তাদের বক্তব্য দিয়ে এখান থেকে চলে গেছেন''।

দুপুর ২ টার দিকে আন্দোলনকারীরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে থেকে তাদের নাগরিক সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

এ সময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ২০ জনের প্রতিনিধি দলকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যেতে দিতে পুলিশকে অনুরোধ করেন। তবে তাতে সায় দেয়নি পুলিশ। পরে সেখানে আবারও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। 

এ সমাবেশ থেক নেতারা অভিযোগ করেন, ক্ষমতা পাকপোক্ত করতে এবং সমালোচনা দমনের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ব্যবহার করছে সরকার। বক্তারা দ্রুত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। 

সমাপনী বক্তব্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, "অতীতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ চড়াও হলেও আজকে ধৈর্যধারণ করেছে। আমরা আজ তাদের কাছে অনুরোধ রেখে ফিরে যাচ্ছি। তবে আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে যদি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না করা হয়, তবে সেদিন কোন অনুরোধ রক্ষা করা হবে না। আমরা আশা করব সরকার আমাদের দাবি মেনে নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করবে।"

পদযাত্রায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বাবলু, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড মহাসচিব কাউন্সিলের নঈম জাহাঙ্গীর, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা চৌধুরী, বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমগীতের সংগঠক বীথি ঘোষ, লেখক ও প্রাবন্ধিক অরূপ রায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিরাপত্তা আইনে কারাগারে থাকা রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল আলম ভূঁইয়া, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানসহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

উপস্থিত না থাকলেও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই কর্মসূচির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন।