জনকণ্ঠের সংকট সমাধানে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক


জনকণ্ঠের সংকট সমাধানে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে জনকণ্ঠ পত্রিকায় চলমান সংকটের সমাধান হতে পারে। আগামী ২০ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য এ বৈঠকে সরকার পক্ষ থেকে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া মালিকপক্ষ ও সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। 

প্রায় ৮ বছর ধরে দৈনিক জনকণ্ঠে কোনো পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধি না হওয়া, ওয়েজবোর্ড না মানার প্রতিবাদে গত ১৫ মার্চ জনকণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক-কর্মচারীর একটি অংশ বেতন বৃদ্ধি ও ওয়েজবোর্ড মানার দাবী জানায়। দাবীর প্রেক্ষিতে প্রায় ৬০ জনকে জনকণ্ঠ কর্তৃপক্ষ থেকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশ গ্রহণ না করায় পরবর্তীতে মেইলের মাধ্যমে এই নোটিশ পাঠানো হয়। 

জানতে চাইলে জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের দৈনিক জনকণ্ঠ ইউনিট চিফ রাজন ভট্টাচার্য বিজেসি’কে বলেন, “২০১৩ সালে অষ্টম ওয়েজবোর্ড চালু হলেও এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪০% সাংবাদিক-কর্মচারি এই ওয়েজ বোর্ডের আওতায় ছিল। আপনারা জানেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে আমরা যারা  ওয়েজবোর্ড পাচ্ছিলাম আমাদেরই চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল আর যারা পায়না তাদের জন্য মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। এই প্রেক্ষিতে আমরা কর্তৃপক্ষকে ১৫ মার্চের মধ্য বেতন বৃদ্ধি ও সবাইকে ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন দেয়ার দাবী জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে, শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১৫ তারিখ ভোরেই সমগ্র অফিস কর্ডন করেছে, প্রতিটি ফ্লোরে পুলিশ মোতায়েন করেছে, প্রায় শতাধিক বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। এবং সেদিন আমরা অফিসে প্রবেশ করতে চাইলে আমাদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। আমরা কোন টার্মিনেশন পেপার গ্রহণ না করায় যাদের মেইল ছিল তাদের মেইলে পাঠিয়েছে। প্রায় ৬০% ভাগ সাংবাদিক-কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হলেও কর্তৃপক্ষ বলছে ২৬%। কেউ টার্মিনেশন গ্রহণ না করায় সঠিক পরিসংখ্যানটি জানা নেই”। 

পুলিশ কেন মোতায়েন করা হল এমন প্রশ্নের উত্তরে রাজন ভট্টাচার্য বলেন, “কর্তৃপক্ষ সরকার এবং পুলিশকে নাশকতা হতে পারে বলে ভুল বুঝিয়ে পুলিশ মোতায়েন করেছে। কিন্তু আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ১৫ তারিখ মধ্যরাত পর্যন্ত আমাদের বিক্ষোভ জানিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আমাদের ওপর হামলা করা চেষ্টা করেছে কিন্তু পুলিশের উপস্থিতির কারণে হামলা করতে পারেনি। পরবর্তীতে মন্ত্রীর আশ্বাসে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচী শেষ করেছি”। 

আন্দোলন করার কারণে ছাঁটাই করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “প্রকৃতপক্ষে যাদের ছাঁটাই করা হয়েছে তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। মূলত তারাই তাদের চিন্তা ও লেখনি শক্তির মাধ্যমে পত্রিকাটিকে বাঁচিয়ে রেখেছিল এবং আন্দোলনের প্রথম সারির সৈনিকদেরকেই ছাঁটাই করা হয়েছে”। 

জনকণ্ঠে ছাঁটাইয়ের ঘটনায় বরেণ্য সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) লন্ডন থেকে জনকণ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে এই ছাঁটাইকে অন্যায় হিসেবে উল্লেখ করে এর প্রতিকারের দাবী জানিয়েছেন তিনি। অন্যথায় এ পত্রিকায় ভবিষ্যতে আর কলাম লিখবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। 

ছাঁটাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জনকণ্ঠ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

২০ তারিখ সরকার, মালিকপক্ষ ও সাংবাদিক-কর্মচারীর বৈঠকে সংকট নিরসনের আশ্বাসে ২০ তারিখ পর্যন্ত সকল কর্মসূচী স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের অফিস কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চলমান সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।