‘গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের চিকিৎসায় ভুল ছিলো’


‘গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের চিকিৎসায় ভুল ছিলো’

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান

কোভিড-১৯ ড্যামেজ করে দিয়েছিলো সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের ফুসফুস। মাত্র ৫৩ বছরের শরীরে তেমন কোন ক্রনিক অসুখ ছিল না। তবুও, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। ভুল চিকিৎসায় চলে যেতে হয়েছে এই সাংবাদিককে। এ রকম আক্ষেপের কথা জানিয়েছেন, এই সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যরা।

মিজানুর রহমান খানের ছোট ভাই দৈনিক শিক্ষার সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান অভিযোগ করেছেন, তার ভাইয়ের চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে মিজানুর রহমান খানের জানাজার আগে রাখা বক্তব্যে তিনি বলেন, “গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের চিকিৎসায় ভুল ছিল। তারা ভাইকে ভুল ওষুধ দিয়েছিল বলে আমাদের পারিবারিক চিকিৎসকরা জানিয়েছেন”।

তিনি জানান, এই হাসপাতালে ভর্তির সময় তার ভাইয়ের ফুসফুসে মাত্র ১০ পার্সেন্ট ইনফেকশন ছিল। রাতে হাসপাতালে যথেষ্ট চিকিৎসকও থাকতো না, শুধু একজন নার্স ছিল বলেও অভিযোগ করেন  তিনি।

জগন্মাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মিজানুর রহমান খানের ভাগ্নে কিশোয়ার সাম্য জানান, তার মামার অন্য কোন ক্রনিক ডিজিজ ছিল না। শুধু ডায়াবেটিস ছিল, সেটিও নিয়ন্ত্রিত।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ফেলেন সাংবাদিক, কলামনিস্ট ও লেখক মিজানুর রহমান খান।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

এদিকে, মিজানুর রহমান খানের মৃত্যুতে তার পরিবারের এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পক্ষ থেকেও পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মিজানুর রহমান খানের জানাজায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা গেছে। এ সময় হাতাহাতির উপক্রমও হয়। 

জানাজা শেষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দেখে জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মাইনুল আলম মাইকে বলেন, ‘গণস্বাস্থ্যের বিরুদ্ধে মিজানুর রহমান খানের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এসেছে। আমরা আশা করি আপনারা ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীলতা ও সাবধানতা অবলম্বন করবেন।’

জবাবে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এগিয়ে এসে মাইনুল আলমকে বলেন, ‘আপনারা জানেন না। না বুঝে কথা বলবেন না। যা বলবেন বুঝে শুনে কথা বলবেন।’

এর পরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। এ সময় সিদ্দিকুর রহমানকে জাফরুল্লাহর দিকে তেড়ে আসতেও দেখা গেছে। পাশাপাশি জাফরুল্লাহর সঙ্গে থাকা লোকজনকেও উত্তেজিত বাক্য ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

এ সময় জাফরুল্লাহ চৌধুরীও উপস্থিত সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতায় তিনি প্রেসক্লাব ত্যাগ করেন।

পরে মিজানুর রহমান খানের ভাই মশিউর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণস্বাস্থ্যে আমার ভাই ভর্তি ছিলেন। আমরা তাদের চিকিৎসা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অসন্তুষ্ট ছিলাম। এজন্য আমরা হাসপাতাল চেঞ্জ করেছি। এখন আমার কানে শব্দটা এসেছে যে আমরা হাসপাতাল পরিবর্তন করার কারণে ভুল করেছি, এটা জাফরুল্লাহ স্যার বলতে চেয়েছেন। উনি শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। আমাদের বিরুদ্ধে তিনি নানান ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত হচ্ছেন। আমরা মনে করি তিনি নিজের বয়স ও অবস্থান বিবেচনা করবেন। আমরা শোকাহত। এর বাইরে আমাদের এখন আর কিছু বলা সম্ভব না।’

গত ২ ডিসেম্বর কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসে সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের। পরে ৫ ডিসেম্বর তিনি ভর্তি হন গণস্বাস্থ্যকন্দ্র হাসপাতলে। সেখানে করোনা ইউনিটে রেখে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে ১০ ডিসেম্বর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপতালে নেয়া হয় তাঁকে। সেখানে ভর্তির সময় করা টেস্টের ফলাফলে দেখা যায়, মিজানুর রহমান খানের ফুসফুস ৮০ শতাংশ সংক্রমিত হয়ে গেছে।

এরপর ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর তার শরীর কিছুটা ভালোর দিকে গেলেও, হাসপাতালের পুরো সময়টাই অক্সিজেন দিতে হয়েছে তাঁকে।

এরও পরে, ২৮ ডিসেম্বর সিটি স্ক্যান করা হয় সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের। সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে তার ফুসফুসের ৯৬ শতাংশ সংক্রমণ দেখা যায়।

এরপর তার অক্সিজেন লেবেল কমতে থাকে। ৯ জানুয়ারি তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট (কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস) দেওয়া হয়। তার রক্তচাপও কম ছিল। এর মধ্যেই সন্ধ্যায় হার্ট অ্যাটাকে মারা যান সংবাদ জগতের এই পুরোধা।