বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সাংবাদিক জোসেফ গ্যালোওয়ে আর নেই


বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সাংবাদিক জোসেফ গ্যালোওয়ে আর নেই

জোসেফ গ্যালোওয়ে (ছবি : সংগৃহীত)

 

একাত্তরের বর্বরতার সাক্ষী বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু, লেখক ও ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনালের সাংবাদিক জোসেফ গ্যালোওয়ে মারা গেছেন।

১৮ আগস্ট, বুধবার নর্থ ক্যারোলিনার কনকর্ড সিটির একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

বাংলাদেশ তার এক বিশ্বস্ত বন্ধুকে হারাল উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

একাত্তরের স্মৃতিচারণ করে গ্যালোওয়ে নর্থ ক্যরোলিনায় প্রবাসীদের এক আয়োজনে বলেছিলেন, “পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পঁচিশে মার্চ রাত থেকে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নৃশংসতা চালানোর পর কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিক নিয়ে এক সফরের ব্যবস্থা করে দেখানোর চেষ্টা করে যে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।”

গ্যালোওয়ে বলেছিলেন , “তারা সাংবাদিকদের ছোট একটি বিমানে দূর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের কিছু এলাকা দেখায়, বলে সর্বত্র স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। এজন্য আমি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের আড়ালে চলে যাই, আশ্রয় নিই ঢাকার মার্কিন কনস্যুলেটে।”

কনস্যুলেটে অবস্থানের পর যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করে পাঠানোর কাজ শুরু করেন তিনি।

সেসময় ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে ও কনস্যুলেটের কর্মচারিদের কাছ থেকে হত্যাযজ্ঞ, নির্মমতা ও বর্বরতার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিকগুলোয় পাঠাতে থাকেন জোসেফ গ্যালোওয়ে।

এরপর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই ফিরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে। ডিসেম্বরে আবার ঢাকায় ফেরেন গ্যালোওয়ে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণের বিভিন্ন পর্যায়ের সাক্ষী মার্কিন এই সাংবাদিক।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালকে রেডক্রসের আওতায় নেয়ার পর এর পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন সাংবাদিক গ্যালোওয়ে। সেসময় সেখানে সামরিক বাহিনীর শেষ সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল নিয়াজিকে তার সামরিক ব্যাজ ও অস্ত্র বাইরে রেখে ঢুকতে বাধ্য করার মত দুঃসাহসিক কাজ করেন এই সাহসী সাংবাদিক। এসময় ক্ষুব্ধ নিয়াজি তাকে গুলি করার হুমকিও দিয়েছিলেন বলে জানান গ্যালোওয়ে।

 

একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়েও কাজ করেছেন বাংলাদেশের এই বন্ধুপ্রতীম সাংবাদিক।

১৬ ডিসেম্বর বাঙালির অবিস্মরণীয় বিজয়ের পর রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী হত্যার স্থান পরিদর্শন করেন এবং এই নৃশংসতার সমালোচনা করে লেখেন এই সাংবাদিক।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের ওপর তার লেখা একটি বইয়ের গল্পে হলিউডে চলচ্চিত্রও হয়েছে। দীর্ঘ সময় তিনি ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনালের ব্যুরো চিফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯১ সালে পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়েও সাংবাদিক হিসেবে যুদ্ধের ময়দানে ছিলেন গ্যালোওয়ে।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি রাশেদ আহমেদ এবং সেক্রেটারি রেজাউল বারি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি ড. খন্দকার মনসুর, সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া এবং কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর লাবলু আনসার।

১৯৪১ সালের  ১৩ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের বন্ধু সাংবাদিক জোসেফ গ্যালোওয়ে।