নতুন ভাইরাস: ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন ব্রিটেন


নতুন ভাইরাস: ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন ব্রিটেন

যুক্তরাজ্য জুড়ে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের তাণ্ডব চলছে। অতি দ্রুত ছড়াচ্ছে এই নতুন ভাইরাস।

করোনার প্রতিষেধক দেয়া যখন পুরোদমে চলছে, তখনই  লন্ডনসহ দক্ষিণ ইংল্যান্ডে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস। যার জেরে যুক্তরাজ্যে আবার শুরু হয়েছে লকডাউন। ইউরোপের অনেক দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বৃটেন।

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-কে এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। লন্ডনে নতুন করে যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ৬০ শতাংশই নতুন ভাইরাসের কবলে পড়েছেন। এই ভাইরাসকে আটকাতে লন্ডন এবং দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন জারি করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ''যত দিন যাচ্ছে, ততই এই ভাইরাস সম্পর্কে আমরা বেশি করে জানছি। ভাইরাস যদি চরিত্র বদল করে আক্রমণ করে, তবে আমাদেরও আত্মরক্ষার চরিত্র বদল করতে হবে।''

এদিকে, নতুন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের বহু দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এরই মধ্যে ব্রিটেনের সাথে ফ্রান্স তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে ইংলিশ চ্যানেলের তীরবর্তী ডোভারের ফেরি ও টানেল দিয়ে ফ্রান্সে কোন গাড়ি ঢুকতে পারছে না। 

এছাড়া, জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক এবং কানাডাসহ বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশ যুক্তরাজ্যের সাথে বিমান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। ভারতও যুক্তরাজ্য থেকে আসা বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বৃটেন।

ব্রিটিশ গবেষকরা লন্ডন এবং আশে-পাশের অঞ্চলে যে ভাইরাসের বিস্তার দেখছেন, সেটিকে তারা নিউ ভ্যারিয়েন্ট, অর্থাৎ নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাস বলে বর্ণনা করছেন।
তবে এটি যে আগেরটির চেয়ে অনেক বেশি প্রাণঘাতী বা মারাত্মক, সেরকম প্রমাণ তারা এখনো পাননি। এটি মোকাবেলার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের টিকা যে ভিন্ন ফল দিতে পারে - এমন কথাও তারা বলছেন না। 

ব্রিটেন ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডসেও এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে বলা হচ্ছে।

এদিকে, যুক্তরাজ্যের নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে বেশি শঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই বলে আশ্বস্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। নতুন ধরন একটি মহামারীর বিবর্তনের স্বাভাবিক অংশ বলে জানিয়েছে তারা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা ভাইরাসের এই ধরন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক দিকও খুঁজে পেয়েছেন, ভাইরাসটিকে অনুসরণ করার জন্য ব্যবহৃত নতুন সরঞ্জামগুলো কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তারা। 
এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিষয়ক প্রধান মাইক রায়ান বলেছেন, “আমাদের একটি ভারসাম্য খুঁজে পেতে হবে। স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা ঘটছে জনসাধারণকে তা জানানো দরকার। তবে এটিও পরিষ্কার করতে হবে যে এটি ভাইরাসের বিবর্তনের স্বাভাবিক অংশ। 
ব্রিটেন থেকে পাওয়া তথ্য উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ এর বর্তমান ধরনটি থেকে নতুন ধরনটি লোকজনকে বেশি অসুস্থ করছে বা এটি আরও প্রাণঘাতী, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি; তবে নতুন ধরনটি আরও সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
যেসব দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারা ঝুঁকি পর্যালোচনা করে অতিরিক্ত সাবধানতা থেকেই এটি করেছে এবং এটি দূরদর্শী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন রায়ান। 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জার তুলনায় এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের মিউটেশন অনেক ধীর আর যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন ধরনটি এখনও মাম্পসের মতো রোগের তুলনায় কম সংক্রামক। এটি ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ নয় বলেও জানিয়েছেন তারা।

বিজেসি নিউজ ডেস্ক