১৩ আগস্ট গণমাধ্যমের দুই নক্ষত্র হারানোর দিন


১৩ আগস্ট গণমাধ্যমের দুই নক্ষত্র হারানোর দিন

তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর

 

আমেরিকাতে আয়েসি জীবনেই ছিলেন তিনি। তবুও দেশ, মাটির কথা চিন্তা করে দেশে চলে এসেছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্রকার।

এই দুর্ঘটনায় শুধু তারেক মাসুদই নন, মারা যান এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা-সিইও আশফাক মিশুক মুনীর। তাদের সঙ্গে আরও  নিহত হন, চালক মুস্তাফিজ, তারেক মাসুদের  প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামাল।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে নতুন আঙ্গিকে নেয়ার পিছনে যাদের  ভুমিকা অন্যতম তাদের মধ্যে ‘অন্যতম’ তারেক মাসুদ। তরুণ নির্মাতাদের কাছে তারেক মাসুদ ছিলেন এক স্বপ্নের নাম। যেই স্বপ্ন বোনার কারিগর ছিলেন তারেক মাসুদ।

‘সিনেমার প্রতি ভালোবাসা’, এর মাঝেই মারা যান তারেক মাসুদ। নতুন সিনেমা ‘কাগজের ফুল-এর লোকেশন দেখতে মানিকগঞ্জে যান তিনি, তার সহধর্মিণী ক্যাথরিন মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ নয় সদস্যের একটি দল। সেখান থেকে ফেরার পথেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’র জন্য ২০০২ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ডিরেক্টর ফোর্টনাইট খ্যাতি অর্জন করেন এই গুণী শিল্পি। ১৯৮৯ সালে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে ‘আদম সুরত’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন তারেক মাসুদ। এছাড়াও ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর তার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’ ও ১৯৯৬ সালে ‘মুক্তির কথা’ প্রশংসিত হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। তাঁর নির্মিত অন্য পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো— অন্তর্যাত্রা ও রানওয়ে। এছাড়া আ কাইন্ড অফ চাইল্ডহুড, নারীর কথা, মুক্তির কথা, আদমসুরত, মুক্তির গানসহ আলোচিত কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন তিনি।

ক্যামেরা ‘ডিরেক্টর’ হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশি যে ক’জন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছেন, তাদের মধ্যে আশফাক মিশুক মুনীর ছিলেন অন্যতম। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আশফাক মিশুক মুনীর। দীর্ঘদিন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিবিসির ভিডিও গ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন। সবার কাছে মিশুক মুনীর নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। তারেক মাসুদের সিনেমা ‘রানওয়ের’ প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন তিনি।

তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে তাদের দু’জনকে একুশে পদক-মরণোত্তরে ভূষিত করে সরকার।

তাদের মারা যাওয়ার একদিন পর ১৪ আগস্ট মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চৌগাছা থেকে ডিবি পুলিশ চালক জামিরকে আটক করে। মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে ঘোষিত রাতে বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সম্প্রতি বাসচালক জামির হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে হৃদরোগে মারা যান।

বাংলাদেশের সিনেমার যে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছিলো তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যুর পর তাতে কিছুটা অন্ধকার নেমে আসে।

সিনেমাযোদ্ধা তারেক মাসুদ ভালোবাসতেন চলচ্চিত্রকে। খুব সাধারণ জীবনযাপন করা মেধাবী এই মানুষ যতদিন বেঁচে ছিলেন, সিনেমা নিয়ে লড়াই করে গেছেন ততদিন।

দেশের গণমাধ্যমের এই দুই নক্ষত্র হারানোর ক্ষতি কোনোদিন পোষাবার নয়।