কি থাকছে ভাসান চরে...কি বলছে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো...


কি থাকছে ভাসান চরে...কি বলছে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো...

১৩ হাজার একর আয়তনের ভাসান চর, এই চরে নেই কোনো বসতি, চর নিয়ে আছে গুজব। তবে সব কিছুকে পেছনে ফেলে এই চরেই গড়ে উঠেছে শহর। যেই শহরের বাসিন্দা- মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা রোহিঙ্গারা।

ভাসান চরে থাকছে আধুনিক জীবনযাপনের সকল ব্যবস্থা। বাংলাদেশের টেকনাফ ও উখিয়ায় পালিয়ে আসলে চরটিতে অবকাঠামো গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়৷ সেই উদ্যোগের ভিত্তিতে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। যেখানে থাকছে স্কুল, হাসপাতা থেকে শুরু জীবনযাপনের সকল সুযোগ সুবিধা।

তবে বাংলাদেশ সরকারে এমন উদ্যোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যগুলো।

কি বলছে আল-জাজিরা …

কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে বলছে, জোর করেই রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয়, অনেক রোহিঙ্গাই ভাসান চরে যেতে চাচ্ছে না।

এছাড়াও সেখানে বলা হয়, মারধরের মাধ্যমেও রোহিঙ্গাদের নেয়া হচ্ছে ভাসান চরে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপটি'তে সংকা আছে বণ্যা ও জলচ্ছাসের।

কি আছে ভাসান চরে!

১৩ হাজার একর আয়তনের এই দ্বীপের মধ্যে ১৭০২ একর জমির চারপাশে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে জোয়ার ও জলোচ্ছাসের ঝুঁকি থেকে রক্ষার জন্য।

কি বলছে বিবিসি…

"ভাসানচর প্রায় তৈরি, কিন্ত সেখানে যেতে চান না রোহিঙ্গারা" এরকম শিরোনামে সংবাদ প্রচার করেছে বিবিসি বাংলা। এছাড়া বিবিসি'র ইংরেজী মাধম্যেও সংবাদ করা হয়

"বাড়ি থেকে দূরে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা প্রত্যন্ত দ্বীপে একটি নতুন বিপদের মুখোমুখি" এই নামে। এই সংবাদে আরো বলা হয়, কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারা ভাসান চরে যেতে আগ্রহী হচ্ছে না। কারন হিসাবে উল্লেখ করা হয় দূরত্ব এবং বন্যার ভয়।

এদিকে নতুন এই জায়গায় পৌছানোর পর রোহিঙ্গারা খুশি প্রকাশ করেছে বলেও সংবাদ প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা। তারা জানায়, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে দুই দশক আগে জেগে ওঠা দ্বীপ ভাসানচরে একটি দিন পার করে সেখানে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা,

সেখানকার পরিবেশ নিয়ে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।

কি আছে ভাসান চরে!

এখানে আছে রোহিঙ্গাদের আবাসন ও অন্যান্য স্থাপনার জন্য ৪৩২ একর জমি। ভবিষ্যতে প্রকল্পের সম্প্রসারণ ও বনায়নের কথা চিন্তা করে ৯১৮ একর এলাকা রাখা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রতিটি কক্ষে রয়েছে চারজনের একটি পরিবারের থাকার ব্যবস্থা।

কি বলছে সিএনএন…

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম সিএনএন তাদের প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশের কয়েক শতাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বঙ্গোপসাগরে একটি বিতর্কিত দ্বীপস্থানে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। কিছু রোহিঙ্গাকে সেখানে যেতে বাধ্য হচ্ছে এবং

যাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা যায়। তবে একই সাথে তারা বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়েও সংবাদ প্রকাশ করেন। এতে ভাসান চরের সুযোগ সুবিধা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

কি আছে ভাসান চরে!

ক্লাস্টার হাউজ ও শেল্টার স্টেশনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে ভূমি থেকে চার ফুট উঁচু করে, কংক্রিটের ব্লক দিয়ে। প্রতিটি ক্লাস্টারে থাকছে ১২ টি হাউজ। প্রতিটি ক্লাস্টারের জন্য আছে একটি করে চারতলা কম্পোজিট স্ট্রাকচারের শেল্টার স্টেশন। ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার গতিবেগের ঘূর্ণিঝড় হলেও টিকে থাকতে সক্ষম এই শেলটার স্টেশন।

কি বলছে ডয়েচে ভেল…

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেল। অবশ্য সেই সংবাদেও ভাসান চরের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও চরের কাজের সাথে জড়িত বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতামতও প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, বসবাসের জন্য কতটুকু উপযুক্ত ভাসান চর।

কি আছে ভাসান চরে…

জাতিসংঘের আদর্শ মান অনুযায়ী, আবাসনের ক্ষেত্রে যেখানে মাথাপিছু ৩৭ বর্গফুট জায়গার কথা বলা হয়েছে, এসব কক্ষে তার চেয়ে বেশিই জায়গা রাখা হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

কি বলছে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম…

এছাড়াও হলিউডের সিনেমার কল্পিত দৃশ্যের কাট-পিস জোড়া লাগিয়ে ভাসানচর নিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেছে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন সিনেমার সুনামি দৃশ্যকে তারা ভাসানচরের বলে চালানোর চেষ্টা করছে।

কি আছে ভাসান চরে…

মোট ১২০টি ক্লাস্টার এবং ১২০টি শেলটার স্টেশন নিয়েই গড়ে উঠেছে ভাসান চরের আশ্রয়ণ প্রকল্প, যা সরকারিভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩ নামে পরিচিত।

প্রতিটি হাউজে বসবাসকারী নারী-পুরুষদের জন্য করা হয়েছে আলাদা গোসলখানা ও টয়লেট। সেই সঙ্গে থাকছে আলাদা রান্নাঘর। আছে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগার।

এদিকে কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তরের যৌক্তিকতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে জেনেভায় জাতিসংঘ দপ্তরে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

স্থানান্তরের পেছনে কিছু কারনও তুলে ধরেন তিনি। সীমিত জায়গায় বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান, জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তা, স্থানীয় আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত অবস্থার চরম বিপর্যয় এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।

রাষ্ট্রদূত মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও উন্নত জীবনমান, জীবিকা ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ইচ্ছায় ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে।” 

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন।

এদিকে ভাসান চরে প্রতিটি হাউজের ওপরে রয়েছে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। ঘরে আছে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। শিশুদের জন্য দুটি খেলার মাঠ তৈরি করা হয়েছে এই প্রকল্পে। থাকছে এতিমখানা, ডে-কেয়ার, সুপারশপ, সেলুন, মসজিদ ও বাজার। প্রকল্পে একটি করে এবং প্রকল্প এলাকায় পুকুর এবং লেক কাটা হয়েছে। ২০ শয্যার দুটি হাসপাতাল এবং চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক করা হয়েছে এই প্রকল্পে।

সরকারি কর্মকর্তা, জাতিসংঘ প্রতিনিধি, আরআরআরসি প্রতিনিধি, রেডক্রস, আন্তর্জাতিক এনজিও প্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্যও আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে।

বিঃদ্রঃ সকল তথ্য-উপাত্ত ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত।