ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার ৪৩৩ জন; মামলা ১৩'শ


ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার ৪৩৩ জন; মামলা ১৩'শ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০২১ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪শ ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রায় ২ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১ হাজার ৩শ টি মামলা করা হয়েছে।

লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ‘বাংলাদেশ: ভিন্নমতের কোনো স্থান নেই—অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অভিযান’ শিরোনামে ২৬ জুলাই সোমবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদনের আলোকে অনলাইনে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ’ বন্ধের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান ও মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন অথবা বাতিলের আহ্বান জানায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

লেখক মোশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় আটক ১০ জনের ঘটনার পর্যালোচনা করে ২৪ পৃষ্ঠার ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কর্তৃপক্ষকে এতটাই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে শুধু ‘ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সমালোচনা’ করার কারণে তাদের বিনা বিচারে আটক ও নির্যাতনের মত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হতে হয়েছে।  

৪শ ৩৩ জনের বেশিরভাগই অনলাইনে ‘ভুয়া ও আক্রমাণাত্মক’ বক্তব্য প্রকাশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন বলে জানায় এ মানবাধিকার সংস্থা।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে লেখক মুশতাক আহমেদ ১০ মাস কারাগারে থেকে সেখানেই মারা যান। কারাবন্দি একজনের বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করে কারাগারে মুশতাক আহমেদ ‘নির্যাতনের শিকার’ হয়েছিলেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, গায়ক, অধিকারকর্মী, উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী, লেখাপড়া না জানা কৃষকও রয়েছেন। তাদের মধ্যে মুশতাক আহমেদ ছাড়াও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক রুহুল আমিন, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের কৃষক আবু জামান, বাউল শিল্পী রিতা দেওয়ান,  আলোকচিত্র সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, ব্যবসায়ী এমদাদুল হক মিলন, সুনামগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক মাহতাব উদ্দিন তালুকদার এবং চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের নেতা দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটার কথা এসেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের ক্যাম্পেইনার সাদ হামাদি বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় কর্তৃপক্ষ যে ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতেই স্পষ্ট বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করা বা ভিন্নমত প্রকাশ করা কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।”

“মতপ্রকাশে এমন অন্যায্য বিধিনিষেধ বাংলাদেশের সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে এবং স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ও সুশীল সমাজের কাজের পরিসর সঙ্কুচিত করেছে।”

গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে সাদ হামাদি বলেন, ‘শুধুমাত্র মতপ্রকাশের অধিকারের চর্চা করায়’ যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মুক্তি দেওয়া হোক’।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনলাইনে কোনো মন্তব্য শেয়ার করার কারণেও বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করা এবং গ্রেপ্তারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার আগেই জাতিসংঘের বিশেষ দূত এর খসড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র সে সময় বাংলাদেশ সরকারকে এই আইন সংশোধনেরও আহ্বান জানিয়েছিল। “এসব সুপারিশ গ্রহণ করার পরও সরকার এখন পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে।”

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে ডিজিটাল নিরপাত্তা আইনে মানহানির অপরাধকে যেভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাতে ‘মারাত্মক ত্রুটি’ রয়েছে। এর মাধ্যমে আইনটিকে ‘ভিন্নমত দমনের হাতিয়ারে’ পরিণত করা হয়েছে।

মানহানির অভিযোগকে ফৌজদারি আইনের বদলে দেওয়ানি আইনে বিচারের জন্যও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।