বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সায়মন ড্রিং আর নেই


বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সায়মন ড্রিং আর নেই

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও কিংবদন্তি সাংবাদিক সায়মন ড্রিং মারা গেছেন। শুক্রবার রুমানিয়ার একটি হাসপাতালে তলপেটে অস্ত্রোপচারের সময় মৃত্যু হয় তার। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর নিধনযজ্ঞের খবর প্রথম বহির্বিশ্বে পৌঁছে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের পরম বন্ধু সাংবাদিক সায়মন ড্রিং।

১৯৭১’র ভয়াল ২৫মার্চ মধ্যরাতে গণহত্যা শুরুর আগে, ঢাকায় অবস্থানরত প্রায় দুইশ বিদেশি সাংবাদিককে সরাসরি বিমানে তুলে দিয়ে তাদের ঢাকা ছাড়তে বাধ্য করে পাকিস্তানি বাহিনী৷ গণহত্যার কোনো খবর যাতে সংগ্রহ এবং প্রচার করতে করতে না পারেন কেউ। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক আইন না মেনে ব্রিটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিং তখনকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে লুকিয়ে থাকেন। শ্বাসরুদ্ধকর ৩২ ঘণ্টা সময় কাটান হোটেলের লবি, ছাদ, বার, কিচেনের আবার পাশের ড্রেনের মতো জায়গায়৷

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই রাতেই গণহত্যার বাস্তব চিত্র সংগ্রহ করেন তিনি। সংকট ও নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ভয়াল সেই রাতের চিত্র ও সংবাদ তুলে ধরেন তিনি। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ ব্রিটিশ দৈনিক “ডেইলি টেলিগ্রাফে” প্রকাশিত হয় সেই হত্যাযজ্ঞের খবর। সেই সংবাদ নাড়া দিয়েছিলো বিশ্ববাসীকে। এটিই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম কোন খবর।

৭৫ বছর বয়সী প্রখ্যাত এই সাংবাদিক রয়টার্স, বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক বহু গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। পেশাগত জীবনে ২২টি যুদ্ধ ও অভ্যুত্থান কাভার করেছেন সায়মন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে এসে প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নেন যমুনা টেলিভিশনের। তাঁর হাত ধরেই সংবাদ ভিত্তিক এই টেলিভিশনটির যাত্রা শুরু। এছাড়া বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন স্টেশন হিসেবে একুশে টেলিভিশনের শুরুতে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে ব্রিটিশ এই সাংবাদিকের হাত ধরেই বাংলাদেশের টেলিভিশন সাংবাদিকতা নতুন মাত্রা পেয়েছে।

তার মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি তার শোক বার্তায় বলেন, সায়মন ড্রিং বাংলাদেশে গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন খবরা-খবর ও ঘটনা প্রবাহ বিশ্বের গণমাধ্যমে তুলে ধরার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানাতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। তার প্রচারিত সংবাদ মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ও পরীক্ষিত বন্ধুকে হারালো। প্রধানমন্ত্রী তার শোকবার্তায় বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ভয়াবহ গণহত্যার তথ্য ও প্রতিবেদন তিনি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত সৃষ্টিতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বিকাশেও তাঁর অবদান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এছাড়া শোক জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ব্রিটিশ এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোকাহত যমুনা টেলিভশন পরিবারও।

২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সায়মন ড্রিং’কে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননায় ভূষিত করেন।

১৯৪৫ সালের ১১ জানুয়ারি ইংল্যান্ডে জন্ম গ্রহণ করেন সায়মন ড্রিং।