বস্তিবাসীর করোনা হবে কম?


বস্তিবাসীর করোনা হবে কম?

রাজধানী ঢাকার ৭১ শতাংশ বস্তিবাসী ও চট্টগ্রামের ৫৫ শতাংশ বস্তিবাসীর শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। বিগত পাঁচ মাসে ৩ হাজার ২২০ জনের ওপর চালানো এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে বলে জানায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।

এ বিষয়ে ঢামেক চিকিৎসক ও করোনা গবেষক ডাঃ সালেহ মাহমুদ তুষার বিজেসি নিউজকে বলেন, যদিও গবেষণাটি মাত্র ৩২২০ জনের উপর করা হয়েছে। কিন্তু এটা সত্য যে, বস্তিবাসীর ওপর যেহেতু এই গবেষণা করা হয়েছে অতএব এই জনবসতিতে থেকে লকডাউন না মেনেও সুস্থ থাকা এটাই প্রমাণ যে আমরা হার্ড ইম্যুনিটি অর্জন করেছি। গত একবছরে কোনো না কোনোভাবে আমরা সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে হয়তো ৩০ জনের ক্ষেত্রে উপসর্গ প্রকাশ পেয়েছে বাকিদের ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়নি। আমরা ধরে নিতে পারি আমরা হার্ড ইম্যুনিটি অর্জন করেছি।

এই ইম্যুনিটির উপর নির্ভর করে কি লকডাউন উঠানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যেহেতু করোনার অনেক ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে এবং বর্তমানে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি এগ্রেসিভ এবং দ্রুত ছড়ায়। তাই সচেতন থাকতে হবে শুধু ইম্যুনিটির উপর ভরসা যাবে না। কারণ আমরা এখনও নিশ্চিত না এই ইম্যুনিটি সব ভ্যারিয়েন্টে কার্যকর কিনা। আবার দেখা গেছে যিনি আক্রান্ত হয়েছেন তার ওপর হয়তো করোনা ভাইরাস তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি বা তার কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায়নি কিন্তু তার দ্বারা অন্য কেউ হয়তো আক্রান্ত হয়েছেন যার উপর করোনা অনেক প্রভাব ফেলেছে। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

আইসিডিডিআরবি সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বস্তি এবং বস্তিসংলগ্ন এলাকায় করোনা সংক্রমণের বিস্তার নির্ণয়ের জন্য এক গবেষণা চালায়। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এসব এলাকায় বসবাসকারী মোট ৩ হাজার ২২০ জন করোনার উপসর্গযুক্ত ও উপসর্গহীন ব্যক্তি উক্ত গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন। গবেষণাটি আন্তবিভাগীয় গবেষণা হিসেবে পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় গৃহস্থালি পর্যায়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ, রক্তচাপ ও শরীরের পুষ্টি পরিমাপ এবং রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল বস্তি এবং বস্তির বাইরে বসবাসকারী মানুষের রক্তে কোভিড-১৯–এর উপস্থিতি এবং তার সম্ভাব্য কারণ নির্ণয় করা। সম্ভাব্য যে কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সেগুলো হলো শরীরে অন্য কোনো শ্বাসকষ্টজনিত ভাইরাসের উপস্থিতি, শরীরে পুষ্টিগত অবস্থা (যেমন: ভিটামিন ডি, জিংক, সেলেনিয়াম) এবং রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। এ সমীক্ষার মাধ্যমে রক্তে SARS-CoV-2 এর উপস্থিতি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, বয়স্ক ও তরুণদের মধ্যে অ্যান্টিবডির হার প্রায় সমান। কিন্তু নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে অ্যান্টিবডির হার তুলনা মূলক কম। নারীদের ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পুরুষদের ৬৬ শতাংশ। যা নারীদের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কম।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকায় অ্যান্টিবডির হার বেশি। অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকায় ৭১ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ ব্যক্তির মধ্যে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশের ব্যক্তির ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ দেখা গিয়েছিল।

স্বল্পশিক্ষিত, অধিক ওজন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস যাঁদের আছে, তাঁদের মধ্যে অধিক মাত্রায় সেরোপ্রিভ্যালেন্স (রক্তে কোভিড উপস্থিতির হার) দেখা গিয়েছে।

বারবার হাত ধোয়ার প্রবণতা, নাক-মুখ কম স্পর্শ করা, বিসিজি টিকা গ্রহণ এবং মাঝারি ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করা ব্যক্তিদের রক্তে কোভিডের উপস্থিতি হার কম দেখা গেছে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বস্তির বাইরে, বস্তিসংলগ্ন এলাকার নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের তুলনায় করোনা অ্যান্টিবডি হার বস্তিতে বেশি। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যে ঘন ঘন হাত ধোয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রভাব ফেলেছে। রক্তে কোভিডের উপস্থিতির সঙ্গে যুক্ত অন্য প্রভাবক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ।

এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন আইসিডিডিআরবির ডা. রুবহানা রাকিব ও ড. আবদুর রাজ্জাক। আর্থিক সহায়তা দিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় সাহয্য করে ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এবং জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এ গবেষণায় অ্যাডভোকেসি পার্টনার হিসেবে কাজ করেছে।

উল্লেখ্য, সোমবার ২১জুন বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, দেশে রবিবার সকাল আটটা থেকে সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের দাঁড়ায় সংখ্যা ১৩ হাজার ৬২৬। এ ছাড়া ২৪ হাজার ৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় দেশে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও ৪ হাজার ৬৩৬ জনের। শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। মোট করোনা শনাক্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াল ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩০৪। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৮২৭ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৮৫ হাজার ৪৮২ জন।