"অনুসন্ধানে সেরা ৩"


"অনুসন্ধানে সেরা ৩"

‘টিআইবি ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড ২০২০ কোভিড-১৯ রেসপন্স’ পুরষ্কার পেলেন তিন সাংবাদিক পারভেজ রেজা, সৈকত ভৌমিক ও আবু রায়হান তানিন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বীকৃতি হিসাবে প্রতি বছর এই পুরষ্কার দেয় করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

প্রিন্ট মিডিয়া আঞ্চলিক, প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয়/অনলাইন, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এই তিন ক্যাটাগরিতে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো থেকে বাছাই করে সেরা প্রতিবেদন নির্বাচিত করেছে টিআইবি। ২২ জুন, মঙ্গলবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় সেরার পুরষ্কার পেয়েছেন একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও বিজেসি নির্বাহী সদস্য পারভেজ  রেজা। প্রিন্ট মিডিয়া আঞ্চলিকে দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের আবু রায়হান তানিন এবং প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয়/অনলাইনে সারাবাংলার সৈকত ভৌমিক এ পুরষ্কার জিতেছেন।

‘হ্যান্ড স্যানিটাইজারে বিষাক্ত মিথানল’ শিরোনামে ৪ অক্টোবর ২০২০ সালে একাত্তর টেলিভিশনে প্রচারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে হ্যান্ড স্যানিটাইজে ব্যবহৃত বিষাক্ত মিথানলের বিষয়টি তুলে ধরেন বিজেসি নির্বাহী সদস্য ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি নাদির পারভেজ রেজা। প্রচারিত প্রতিবেদনটি সেসময় দর্শক মহলে ব্যপক সাড়া ফেলে এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারকারীদের সচেতন করে তোলে। এর ফলে প্রতিবেদনটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে সেরা প্রতিবেদনের পুরষ্কার জিতে নেয়।

পুরষ্কার পাওয়া নিয়ে নাদির পারভেজ রেজা আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, “পুরষ্কার পাওয়া মানে এক ধরনের স্বীকৃতি। এই ধরনের পুরষ্কার অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য এক ধরনের অনুপ্রেরণা। তবে এই পুরষ্কারটা যতোটা আমার তারচাইতেও বেশি আমার প্রতিষ্ঠানের। কেননা যেসব বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে গণমাধ্যম কাজ করে আমার প্রতিবেদনটা এরকমই একটা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গিয়েছে। এক্ষেত্রে আমার প্রতিষ্ঠানের জন্যেও এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। একাত্তরের মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও যদি তার সংবাদকর্মীদের জন্য এরকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সংবাদ প্রকাশ করে তাহলে তারাও আরও বড় প্রতিষ্ঠান আকারে নিজেদেরকে হাজির করতে পারবে”।

করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে নানা অনিয়মের সাথে জড়িত জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণার বিষয়টি ধারাবাহিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরেন সারাবাংলার সিনিয়র প্রতিনিধি সৈকত ভৌমিক। সারাবাংলা থেকে প্রকাশিত সংবাদের জের ধরেই জেকেজি হেলথকেয়ারের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি বাতিল হয় এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেসময় জনমনে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী প্রতিবেদন প্রকাশের স্বীকৃতি স্বরুপ প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয়/অনলাইন ক্যাটাগরিতে ২০২০ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পুরষ্কার পেয়েছেন সৈকত।

কাজের স্বীকৃতি পাওয়াটা আনন্দের উল্লেখ করে বিজেসিকে সৈকত ভৌমিক বলেন, “আমি এই স্বীকৃতিটা একটু ভিন্নভাবে নিচ্ছি। সামনে আরও ভালো কাজ করতে এবং কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এই পুরষ্কারকে আমি নতুন চ্যানেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছি। সামনে আমি এই পুরষ্কার আরও জিততে চাইবো। আর আমি আমার প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত সহযোগিতা এবং সমর্থন ছাড়া এ ধরনের কাজ করা সম্ভব ছিল না”।

ভবিষ্যতের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, “আমাদের আশে পাশেই অনেক সংবাদ পড়ে আছে। কোন ঘটনা চোখে পড়লে সময় নিয়ে সে ঘটনাটা কী, কেন হচ্ছে তা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাটা শানিত করা এবং সমস্যাটার ভেতরে গিয়ে দেখা যে তারা কীভাবে সমস্যা সৃষ্টি করছে, দেশের জন্য তা কতোটা ক্ষতিকর তার গুরুত্ব বিবেচনা করে যদি সংবাদটা প্রকাশ করা যায় তাহলে যেকোন তরুণই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাতে ভালো করতে পারবে”।  

দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার আবু রায়হান তানিনের প্রতিবেদন ‘চট্টগ্রামে করোনা রোগী আইসিইউ পায় না, ১২ হাসপাতালের গল্প পুরোটাই ফাঁকি!’ প্রিন্ট মিডিয়া আঞ্চলিক ক্যাটাগরিতে সেরা অনুসন্ধানী পুরষ্কার জিতেছে। করোনায় চট্টগ্রামের ১২টি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বেড ব্যবহারের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও সে হাসপাতালগুলো আইসিইউ সুবিধা প্রদান করতে পারেনি। অনেক রোগী সে হাসপাতালগুলোতে ঘুরে ঘুরে আইসিইউ না পেয়ে মৃত্যুবরণও করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি অনেক মানুষকে ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করেছে যার ফলে নিয়ে সংবাদটি প্রিন্ট মিডিয়া আঞ্চলিক ক্যাটাগরিতে এই পুরষ্কার জিতে নিয়েছে।

গত ২২ বছর ধরে দুর্নীতি বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার দিয়ে আসছে টিআইবি। সারাদেশ থেকে মোট ২৯টি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা পড়ে এই পুরষ্কারের জন্য। সেখান থেকে বিচারকরা যাচাই বাছাই করে তিনটি প্রতিবেদনকে নির্বাচিত করেছে। বিজয়ীরা পুরষ্কার হিসেবে পাবেন ক্রেস্ট ও এক লাখ ২৫ হাজার টাকার চেক।

‘টিআইবি ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড ২০২০ কোভিড-১৯ রেসপন্স’ পুরষ্কারের বিচারক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আফসান চৌধুরী, বৈশাখী টেলিভিশনের প্ল্যানিং কনসালটেন্ট জুলফিকার আলী মাণিক এবং এমআরডিআইয়ের ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম হেল্প ডেস্কের হেড মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বাবু।