"বাবা"


"বাবা"

বাবা কে নিয়ে লেখার মাঝে কি আবেগ কিছুটা কম পাওয়া যায়! এমন প্রশ্ন বা সন্দেহ কারন, মা’কে নিয়ে লেখার মাঝে আবেগ খুব বেশী পাওয়া যায়। হতে পারে সেটির মূলকারণ নাড়ির টান। তবে বাবা শব্দটিতে পাওয়া যায় ভরসা। বাবাকে ভালোবাসে সব সন্তানই, তবে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিন্নতা। মা দিবসে যতটা হৈচৈ খেয়াল করা যায়, বাবা দিবসে কিছুটা কম। তবে ভালোবাসার ক্ষেত্রে এসব কোনো কিছুই বাবা-মা’র পার্থক্য বোঝে না।

জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করা হয়। তবে কিভাবে আসলো এই বাবা দিবস? অথবা কবে থেকেই বা শুরু হলো বাবা দিবস? আজকের লেখায় পাঠকদের জন্যে থাকবে বাবা দিবসের ইতিহাস।

বিশ্ব জুড়ে মা দিবসের মতো বাবাদের প্রতি ভালোবাসা উদযাপনেও রয়েছে বিশেষ দিন। তবে বিভিন্ন দেশে রয়েছে এই দিবস পালনের ভিন্নতা। বিশ্বের অধকাংশ দেশেই জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করা হয়। অবশ্য সেপ্টেম্বরের প্রথম রবিবার অস্ট্রেলিয়ায় বাবা দিবস পালন করা হয়

এদিকে স্পেন, পর্তুগালে ১৯ মার্চ, 'সেন্ট জোসেফ ডে'-তে বাবা দিবস পালন করা হয়। আবার আগস্ট মাসের আট তারিখে, যা কি না বছরের অষ্টম মাসের অষ্টম দিন তাইওয়ানিজরা বাবা দিবস পালন করে। আবার থাইল্যান্ডে প্রয়াত রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের জন্মদিন ৫ ডিসেম্বর। থাইল্যান্ডবাসীরা সেই দিন পালন করে বাবা দিবস।

জুন মাসের তৃতীয় রবিবার, মেক্সিকোয় বাবা দিবস বা ডিয়া ডেল পেড্রো উদযাপিত হয়। ঐদিন মেক্সিকো সিটিতে ক্যানেরা ডিয়া ডেল পেড্রো নামে তের মাইল লম্বা একটি দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। যেই দৌড়ে বাবাদের সঙ্গে সঙ্গে ওই দৌড়ে অংশ নেন সন্তানরাও।

বাবা দিবসের ইতিহাস নিয়ে রয়েছে বেশ কিছু গল্প। ১৯০৮ সালে গ্রেস গোল্ডেন ক্লাইটন নামে এক নারী ধর্মযাজকের সাথে আলোচনা করে, ৫ জুলাই তার বাবার জন্মদিনে সকল পিতার স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে বছরগুলাতে আর এ দিনটি উদযাপন করা হয়নি। তবে বিশ্বব্যাপী বাবা দিবসকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রবল ইচ্ছা নিয়ে সবচেয়ে সচেষ্ট মেয়েটির নাম ছিল সোনোরা।

সোনোরার মাধ্যমেই বাবা দিবসের প্রচলন হয়। সোনোরা স্মার্ট ডোডের মা অ্যালেন নিজের ষষ্ঠ সন্তান জন্মদানের সময় মারা যান। সেই থেকে নিজের ছয় সন্তানের লালন-পালনের ভারটা একাই নিজের কাঁধে তুলে নেন সোনোরার বাবা উইলিয়াম জ্যাকসন স্মার্ট।

১৯০৯ সালে একদিন গির্জার একটি অনুষ্ঠানে মা দিবস সম্পর্কে বক্তৃতা শুনতে শুনতে হঠাৎ তার মনে হলো, তার বাবা নিজের জীবনের অনেক সুখ ত্যাগ করেছেন শুধুমাত্র সব ভাই-বোনকে বড় করতে। বাবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা থেকেই সোনোরা ভাবলেন, প্রতি বছর মায়েদের স্মরণে মা দিবস পালন করা যেতে পারে, তাহলে বাবা দিবস পালন করা কেনো যাবে না?

সোনোরা তার এই ভাবনা স্থানীয় কয়েকজন ধর্মযাজককে জানান। ৫ জুন তার বাবার জন্মদিনকে বাবা দিবস পালনের কথা থাকলেও ধর্মযাজকদের প্রস্তুতি না থাকায় তা পরিবর্তন করে নেয়া হয় জুন মাসের তৃতীয় রবিবারে। এরপর, ১৯১০ সালের ১৯ জুন ওয়াশিংটনের স্পোকান শহরে সোনোরা প্রথমবারের মতো বাবা দিবস পালন করেন। কিন্তু এই দিন নিয়ে পরবর্তীতে আর কিছুই হয় নি।

১৯৩০ সালে পড়াশোনা শেষ করে নিজ শহর স্পোকানে ফিরে আসেন ডোড। আবারও বাবা দিবস পালনের প্রচারণা চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। প্রথমদিকে খুব বেশি অগ্রগতি দেখা না গেলেও, ধীরে ধীরে তার এই প্রচারণা জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। একটা পর্যায়ে, গোটা আমেরিকা জুড়ে দিনটি পালন করা শুরু হয়।

১৯১৩ সালে কনগ্রেসে প্রথম বিল উত্থাপন করা হলো এ দিনটিকে জাতীয় স্বীকৃতি দেয়ার জন্য। ১৯১৬ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাতে বাঁধা দেয় কনগ্রেস। পরবর্তীতে ১৯২৪ সালে আবারও আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কেলভিন কোররিজ বাবা দিবস উদযাপনের প্রতি সম্মতি দেন। অবশেষে, ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিনডন জনসন সরকারি প্রজ্ঞাপনে জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে জাতীয় বাবা দিবস উদযাপনের ঘোষণা দেন। ১৯৭২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বাবা দিবসকে আইনে পরিণত করেন।

সেই থেকে আজ পর্যন্ত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বব্যাপী বাবা দিবস পালিত হয়ে আসছে।

পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে 'বাবা' ডাকটির রয়েছে নানা রূপ। বাংলাদেশে কেউ ডাকে বাবা, আবার কেউ বা আব্বু, কেউ আবার ডাকে আব্বা। আবার অনেকেই পাশ্চাত্যের মত ডাকে পাপা বা ড্যাডি। হিন্দি, রাশিয়ান বা স্প্যানিশ ভাষায়ও ‘পাপা’ শব্দটিই ব্যবহার হয়। জার্মানে ‘পাপি’ নামে বাবাকে সম্বোধন করা হয়। আবার আইসল্যান্ডিক ভাষায় বাবাকে ডাকা হয় ‘পাব্বি’। ‘পাপ্পা’ আবার সুইডিশ ভাষায় বাবা। এছাড়াও তুর্কি, গ্রিক, সোয়াহিলি, মালয় ভাষাসহ আরো অনেক ভাষায় ‘বাবা’ কে সম্বোধন করা হয়।

শুধু একটা দিন নয়, বাবা দিবস হোক বছরের প্রতিটা দিন। প্রতিটা সময়ই শ্রদ্ধা,ভালোবাসায় টিকে থাকুক বাবা-সন্তানের সম্পর্কগুলো। ভালো থাকুক বৃদ্ধাশ্রমে থাকা সকল বাবা।

বিজেসি নিউজের পক্ষ থেকে পৃথিবীর সকল বাবাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা….