“অপবাদ আর গুজব পেরিয়ে জয়ের গল্প"


“অপবাদ আর গুজব পেরিয়ে  জয়ের গল্প"

২০১৯'র মাঝামাঝি সময়। মাসটা সম্ভবত জুলাই...
দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য মানুষের মাথা লাগবে .....
আবার ২০১৫ সাল.....
চাইনিজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নদীতে পশুর রক্ত ঢেলে ভিত্তি স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। এ নিয়েও আছে তর্ক-বিতর্ক....
এখানেই শেষ নয়....
২০১২ সাল.. পদ্মা সেতু প্রকল্পে উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক।
এছাড়াও পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী কায়সারের দিকেও তোলা হয় আঙ্গুল।
উপরের প্রতিটি তথ্যকেই ভুল প্রমান হয়েছে। সগর্বে মাথা উঁচু করে দাড়িচ্ছে পদ্মা সেতু। অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে উপরের তথ্যগুলো ভুল প্রমান হয়েছে!!!!
পদ্মাসেতুকে ঘিরে মাথা কাটার গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হওয়া ৬০টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ২৫টি ইউটিউব লিংক এবং ১০টি ওয়েব পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছিলো আইনশৃংখলাবাহিনী।
গুজব ও গণপিটুনির ঘটনায় মোট ৩১টি মামলা ১০৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৯ সালের জুলাই মাসেই, পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে এসব জানায় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
আবার ২০১৭ সালে কানাডার একটি আদালত পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা থেকে এসএনসি-লাভালিনের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেয়। 
ঐ কর্মকর্তারা পদ্মা সেতু প্রকল্পের পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। 
কিন্তু অভিযোগের পক্ষে জোড়ালো প্রমাণ না থাকায় দীর্ঘ তদন্ত শেষে কানাডার আদালত ওই তিন কর্মকর্তাকে বেকসুর খালাস দেন।শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই, যুগ যুগ ধরে উন্নয়নের বিপক্ষে বরাবরই এমন গুজব ছড়ানো হয়। তবে দেখার বিষয় গুজবকে পাশ কাটিয়ে কিভাবে কর্ম বাস্তবায়ন করে সেটিকে দৃশ্যমান করা যায়।
দৃশ্যমান কথাটা যখন চলে আসে তখন তার তার বড় উদাহরন হতে পারে ঐতিহাসিক পদ্মা বহুমুখী সেতু।

বাংলাদেশে অন্যতম বড় অবকাঠামোটির প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। আর আজ বসানো হলো ৪১ নম্বর স্প্যানটি। দৃশমান হলো পদ্মা সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল অবকাঠামো।
পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির মতে, পদ্মা সেতু যান চলাচলের উপযোগী হতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত লেগে যাবে।
তবে বাংলাদেশের সরকার চেষ্টা করছে, স্বাধীনতার ৫০ তম বছরের মধ্যেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করার। অর্থাৎ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করে যান চলাচল শুরু করতে চায়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মোঃ. শফিকুল ইসলাম জানান, সেতুর কাজ শেষ হতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে তাদের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে সেটিকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে আসা যায়। 

আরো কিছু তথ্য পদ্মা সেতু নিয়ে....
একেক পাশে দুটো করে গাড়ির লেন থাকবে এবং আরো থাকবে একটি ব্রেকডাউন লেন। 
পানির অংশ সহ পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। আর ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় নয় কিলোমিটার।
দ্বিতল সেতুটির এক অংশ থাকবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায়, আরেক অংশ শরীয়তপুরের জাজিরায়।
ওপরে চলবে গাড়ি,নিচের অংশে চলবে রেল।
সেতু নির্মাণে মোট খরচ করা হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। 
এদিকে গুজব ও ভুল তথ্য যাতে না ছড়ায় এ জন্যে, পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ বা নির্মাণ এলাকার কোন ছবি/ভিডিও বা অন্যান্য তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ না করার নির্দেশনা দিয়েছেন পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। 
এখন থেকে সকল তথ্য প্রকল্প পরিচালক ও প্রকল্পের জন সংযোগ কর্মকর্তারা তথ্য শেয়ার করবেন।

*তথ্য উপাত্ত ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত