গণমাধ্যমকে সাকিবের বিপক্ষে ভাবছেন সাকিবপত্নী


গণমাধ্যমকে সাকিবের বিপক্ষে ভাবছেন সাকিবপত্নী

বাংলাদেশের প্রাণ, বাংলাদেশের জান…..সাকিব আল হাসান….

কারন সাকিব যে একজনই। বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার… বাংলাদেশের প্রাণ, বাংলাদেশের জান দেশের গন্ডি পেড়িয়ে এখন বিশ্ব সেরা। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম বড় বিজ্ঞাপণ সাকিব। তবে এতো কিছুর মাঝেও বিতর্ক পিছু ছাড়ে না পোস্টার বয় সাকিব আল হাসানের। এইতো ঢাকা প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে করেছেন অসদাচরণ।

এ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়াতে দুইটি পক্ষ দেখা গেছে। এক পক্ষ বলছে সাকিব যা করেছেন তা ঠিকই করেছেন। কারন হিসাবে বলছে, দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে রয়েছে পেশাদারিত্বের অভাব।

আবার অন্য পক্ষ বলছে সাকিব যে আচরন মাঠে দেখিয়েছেন তা মোটেও কাম্য নয়। কারন আন্তর্জাতিকভাবে এবং সিনিয়র ক্রিকেটের হিসাবে তাঁর থেকে এই আচরন কাম্য নয়।

ঘটনার পরপরই দুঃখিত লিখে সোস্যাল মিডিয়াতে ক্ষমা চেয়েছেন সাকিব। দ্বন্দ মিটিয়ে ফেলেছেন আম্পায়ার ও খালেদ মাহমুদের সাথেও। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি এরই মধ্যে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছেন সাকিবকে, সাথে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানাও করেছেন।

এই সব সমালোচনার মাঝেই সাকিব আল হাসানের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি লেখেন, গণমাধ্যমের মতো আমিও পুরো বিষয়টা খুব উপভোগ করছি। অবশেষে টিভিতে কিছু খবর পাওয়া গেলো। যারা আজকের (শুক্রবার) ঘটনার পরিষ্কার চিত্র বুঝতে পেরেছে, তাদের সমর্থন দিতে দেখা সত্যিই দারুণ। অন্তত কেউ একজনের তো সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহসটা রয়েছে। যাই হোক, এখানে মূল বিষয়টা চাপা পড়ে যাচ্ছে কারণ গণমাধ্যমে তার (সাকিব) দেখানো রাগের বিষয়টিই শুধু সামনে আসছে। পুরো ঘটনায় মূল বিষয়টা হলো আম্পায়ারদের নেয়া ক্রমাগত ভুল সিদ্ধান্তগুলো। কিন্তু শিরোনামগুলো সত্যিই হতাশাজনক। আমার কাছে মনে হয়, এটা তার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র। যা কি না দীর্ঘসময় ধরে চলে আসছে, যাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে তাকে খলনায়ক বানানো যায়। আপনি যদি ক্রিকেটপ্রেমী হয়ে থাকেন, তাহলে নিজের কর্মকান্ডের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক ক্রিকেটারের পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে তাদের হয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এর আগেও সাকিব আল হাসানের স্ত্রী সোস্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এই বিষয়টি কিভাবে দেখছেন ক্রীড়া সাংবাদিকরা। এ নিয়ে বিজেসি নিউজ কথা বলেছেন কয়েকজয়ন সাংবাদিকের সাথে।

সমকালের ক্রীড়া সাংবাদিক সঞ্জয় সাহা পিয়াল বলেন, এটা তো অনাকাঙ্খিত একটা ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পক্ষ বলছে সাকিব আসলে প্রতিবাদ করেছেন। তবে আদৌ কি তিনি প্রতিবাদ করেছেন কিনা এ বিষয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। কারণ ওই ঘটনার পরপরই সাকিব দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সে তার ভুল স্বীকার করেছে। এইখানেই ব্যাপারটা শেষ। এ বিষয়ে আর কোনো আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। সাকিব স্ত্রী শিশিরের স্ট্যাটাস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে এর আগেও শিশির স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তার এসব স্ট্যাটাসকে আমরা গুরুত্ব দিই না। কারণ সে তো ক্রিকেটের কোনো অংশ না।

এদিকে সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক ও টি-স্পোর্টসের ইনপুট এডিটর আহমেদ রাকিব বলেন, সাকিবের ব্যাপারে কিছু হলে কাউন্টারে তার স্ত্রী সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করেন বা স্ট্যাটাস দেন। শিশির অনেক কিছুই হয়তো সম্পর্কের কারণে করে থাকেন। কিন্তু আমি মনে করি এসবের মধ্যে তার না আসাই ভালো। ভেতরের বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি না জেনে এভাবে না বললেই ভালো। এতে করে শিশির বরং গণমাধ্যমের সঙ্গে সাকিবের একটা বিভাজন তৈরি করছে। প্রথম যে সিচুয়েশনটা ছিল তাতে আমার ব্যক্তিগত ভাবে সাকিবের আচরণ ভালো লাগেনি পুরো বিষয়টাই দৃষ্টিকটু। তার অনেক ভক্ত আছে বিশেষত নতুন প্রজন্ম তাকে অনুসরণ করে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে তার অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু এভাবে প্রতিক্রিয়া না জানালেও পারত। ভিডিও ফুটেজে যা দেখা গেছে যে সেটা খুব ক্লোজ কল ছিল। শুধুমাত্র সিদ্ধান্ত রিভিউ করার সুযোগ থাকলেই বোঝা যেত কারণ বল পড়ার পর টার্ন করেছিল। ঐ রকম পরিস্থিতে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া কঠিন। বলটা টার্ন করে লেগ স্ট্যাম্প দিয়ে বের হয়ে যেতে পারত। দ্বিতীয় যে পরিস্থিতাটা ছিল সেটা তো রীতিমত কাহিনী করেছে। কারণ টি-টুয়েন্টির যে নিয়ম সে নিয়মে পাঁচ ওভার খেলা হলেই খেলার ফলাফল দেওয়া যায়। সাকিব যে পৃথিবী জুড়েই খেলে বেড়াচ্ছে তার এটা ভালো করেই জানা থাকার কথা। ঐ সময় কিন্তু পাঁচ ওভারের বেশি খেলা হয়ে গেছে। তখন যদি খেলাটা শেষও হয়ে যেত মোহামেডানেরই জিতার কথা। ঐ প্রতিক্রিয়াটা ঐভাবে না দেখালেও পারত। এখন আসলে অনেক ক্রিকেটাররাই দলের জন্যে খেলে না, কারন প্রতি টুর্নামেন্টেই তারা নতুন নতুন দলে খেলছে। এর আগেও তো সাকিব আবাহনীর হয়ে খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সেই টুর্নামেন্টেও অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিলো, সে তো তখনই দলের ভিতরে থেকেই এসব নিয়ে প্রতিবাদ করতে পারতো।

অন্যদিকে এসব নিয়ে সোস্যাল মিডিয়াতেও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষন। বিবিসি মিডিয়া একশ্যানের সোহেইল জাফর বণিক বার্তার করা একটি রিপোর্ট নিয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেন। রিপোর্টি ছিলো সাকিব আল হাসানের বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ে।

তিনি স্ট্যাটাস দেন, ব্যবসা করা দোষের কিছু না। যেহেতু আইনী কোনো বাধা নেই, ব্যবসা করতেই পারেন। সাকিব বিদেশে খেলেন, বিদেশে খেলার টাকা দেশে না এনে আমেরিকা পাঠিয়ে দেন, এটাও বড় অভিযোগ না। কিন্তু মুশকিল হলো- সাকিব সম্ভবত ব্যবসা করছেন না। তথ্য বলছে, তিনি ব্যবসা শুরু করেন এবং বন্ধ করে দেন কিংবা ব্যবসায় লাভ করতে পারেন না। অথচ বছর বছর সাকিবের সম্পদের পরিমাণ বাড়ে, এ মুহূর্তে প্রায় প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকার মালিক তিনি। লোকসান হওয়ার পরেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একের পর এক ব্রাঞ্চ খোলার রহস্য কী, এটা একটা প্রশ্ন।

এ ঘটনার পর, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘বিষয়টা আন্তর্জাতিকভাবে এত বেশি ছড়িয়ে পড়েছে, আমাকে এত দেশ থেকে ফোন করছে। আমি ভয়ে ফোন ধরছি না। বেইজ্জতির চরমে চলে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। আমার মনে হয় এই ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার কোনো মানে হয় না। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা এ সমস্যার সমাধান না বের করছি। এটা চরম জায়গায় নিয়ে গেছে। যা উঠেছিল, এমনেই শেষ করে দিয়েছে।’

এমন ঘটনা যে সাকিব আল হাসানের জন্যে প্রথম ব্যাপারটা এমন নয়। এর আগে আন্তর্জাতিক ম্যাচেও সাকিব কান্ড দেখেছে বিশ্ব।

এদিকে সাকিব আল হাসানের শাস্তি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছে তাঁর দল মোহামেডান। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড- বিসিবি প্রধান নাজমুল হোসেন বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে দলটি।

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে- গাছ যত বড় হয়, ততই নত হয়-এটাই নাকি মহত্বের লক্ষণ। ক্রিকেটভক্ত হিসাবে এই লক্ষণ ক্রিকেটারদের মাঝে আসুক এমনটাই আশা আমাদের।