টিভি সাংবাদিকদের স্বাধীনতা কম?


টিভি সাংবাদিকদের স্বাধীনতা কম?

একজন পত্রিকার সাংবাদিক সম্প্রচার মাধ্যমের সাংবাদিকের চেয়ে তুলনামূলক স্পর্শকাতর সংবাদ বেশি করতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচার সাংবাদিকদের এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ দেখা যায় মাঝে মাঝে।

সম্প্রচার সাংবাদিকরা বলছেন, পত্রিকার সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করতে যে পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করেন তারা সে পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন না। বিশ্লেষনে দেখা যায়, ছাপা মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কিন্তু টেলিভিশন মাধ্যমে এ ধরনের সংবাদের পরিমাণ তুলনামূলক কম।

বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক বীমা ও শেয়ারবাজারসহ ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার কাবেরী মৈত্রেয়। বিবিসে বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, "কোনো একটি সংবাদ যেন প্রকাশ না হয় এই চাপটা মনে হয় যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি হয়ে গেছে। যেমন একটি সংবাদ সংগ্রহ করতে যাচ্ছি যার বিরুদ্ধে এটি যাবে সে হয়তো আমার অফিসের কোনো কর্তৃপক্ষ, মালিক বা অন্যকাউকে হয়ত ফোন করছে। এবং তাকে বলছে যে উনি আমার কাছে এসেছিলেন এই সংবাদটা যেন প্রকাশ না হয়। এবং সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে অন্যতম বড় হাতিয়ার হিসেবে আছেই।"

স্পর্শকাতর সংবাদ প্রকাশে সম্প্রচার সাংবাদিক পিছিয়ে আছে কেন এই প্রশ্নের উত্তরে বিজেসি ট্রাস্টি ও একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাকিল আহমেদ বিজেসি নিউজকে বলেন, “পত্রিকা সাধারণত একজন অভিজ্ঞ সম্পাদকের অধীনে চলে কিন্তু টেলিভিশনের মালিক একজন উদ্যোক্তা হিসেবে লাইসেন্স পান। সাংবাদিকতার কাজ হচ্ছে সর্বদা নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং এটি করা সম্ভব হয় যখন একজন সাংবাদিক পেশাজীবী নয় বরং সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। টেলিভিশনের যাবতীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে মালিক কর্তৃপক্ষ থাকার ফলে তারা যে সম্পাদকীয় নীতিমালা অনুসরণ করতে বলেন বার্তাকক্ষকে তা মেনে চলতে হয়। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মী আইন, বিধি-মালা, চাকুরীর সুরক্ষা এবং বেতন কাঠামো ঠিক না থাকায় সম্প্রচার সাংবাদিকরা মূলত চাকুরীজীবী হিসেবে কাজ করেন। এই চাকুরীরত অবস্থায় সাংবাদিকতা করা তাদের জন্য বেশ কঠিন। বর্তমানে টেলিভিশন সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা করলেও সংকটপূর্ণ মূহুর্তে প্রকৃত সাংবাদিকতা করার অধিকার সে অনেক সময় পায় না। কারণ মালিক পক্ষ, সম্পাদকীয় হিসেবে যা বলছে সেটিই তাকে মেনে চলতে হয়”।

বিজেসি’র ট্রাস্টি ও আরটিভির উপ-বার্তা প্রধান মামুনুর রহমান খান জানান, সাধারণত ব্যবহারিক কিছু কারণে সম্প্রচার সাংবাদিক অনেক সংবাদ প্রচার করতে পারেন না। ছাপা মাধ্যমে যেকোন তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ করে দেয়া যায় কিন্তু সম্প্রচার মাধ্যমে সংবাদ প্রচারের জন্য ফুটেজ, বাইট ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে সাংবাদিকদের মনোবল কুঁকড়ে দেয়া হয়েছে ফলে সাংবাদিকরা নিজেরাই নিজেদের ওপর সেলফ সেন্সরশীপ আরোপ করেছে। এ কারণে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পরিমাণ কমে এসেছে।

সেলফ সেন্সরশীপের ব্যাপারে দীর্ঘদিন টেলিভিশনে অনুসন্ধানি সাংবাদিকতা এবং এ নিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণে যুক্ত থাকা বদরুদ্দোজা বাবু বলেন, “ইয়াং জার্নালিস্টদের ক্ষেত্রে যেটা আতঙ্কের বিষয় সেটা হচ্ছে সেলফ সেন্সরশিপ। তারা ধরেই নিয়েছে যে এই এই বিষয়গুলো নিয়ে রিপোর্ট করাই যাবে না। ওই বিষয়গুলো নিয়ে যদি আমি রিপোর্ট করি সেটা আমার সময় নষ্ট এবং আমার জীবনের জন্যও ঝুঁকি হতে পারে। সুতরাং তারা যখন চিন্তাভাবনা করে কোনো রিপোর্ট নিয়ে, তারা অনেকগুলো বিষয় বাদ দিয়েই চিন্তা করে”।

সংকট সমাধের উপায় নিয়ে শাকিল আহমেদ বলেন, “টেলিভিশনের লাইসেন্স দেয়ার সময় যদি সংবাদ প্রচারিত হয় তাহলে তা গণমাধ্যমের লাইসেন্স আকারে দেয়া উচিত। টেলিভিশনে পত্রিকার মতো একজন সম্পাদক পদ তৈরি করে তাকে লাইসেন্স পেতে হবে। এটি আমরা করতে পারলে সম্প্রচার সাংবাদিকতা একটা নতুন জায়গায় পৌঁছবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সাংবাদিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য পাশের অপেক্ষায় থাকা গণমাধ্যমকর্মী আইনটি দ্রুত পাশ করতে হবে। এতে শুধু সম্পাদক নয়, গণমাধ্যমে কর্মরত সকলের চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত হবে যার মাধ্যমে সাংবাদিক হিসেবে তারা স্বীকৃতি পাবে এবং সাংবাদিকতার চর্চাও আইনসিদ্ধ হবে"।