সাংবাদিক রোজিনা গ্রেফতারে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নিন্দা


সাংবাদিক রোজিনা গ্রেফতারে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নিন্দা

প্রথম আলোর জেষ্ঠ্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা এবং পরে শাহবাগ থানায় হস্তান্তরের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠন।

বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট-সিপিজে এ ঘটনায় টুইট করেন। টুইট বার্তায়, রোজিনা ইসলামকে আটক এবং পুলিশের কাছে হস্তান্তরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। বাংলাদেশে সচিবালয়ে তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে তাঁকে অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানায় সিপিজে।

গণমাধ্যমে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের ফোরাম, হেলথ জার্নালিস্ট অব বাংলাদেশ রোজিনা ইসলামকে হেনস্থা ও তার বিরুদ্ধে করা মামলার তীব্র নিন্দা জানায়। এছাড়াও তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জোর দাবিও জানায় সংগঠনটি।

এঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম বাংলাদেশ। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবী জানায়। তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে সেটি ন্যাক্কারজনক বলেও জানান সংগঠনটি। এ ঘটনায় সাংবাদিকেরা উদ্বিগ্ন,ক্ষুদ্ধ ও বিস্মিত। অবিলম্বে রোজিনাকে ছেড়ে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এস এম ফয়েজ মনে করেন, এভাবে সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করা হলে দুর্নীতিবাজরা উৎসাহিত হবে। এ ঘটনা স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতি ধারাবাহিক আক্রোশেরই প্রতিফলন। সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা সরকারকেই নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসি জার্নালিস্ট ফোরাম। মঙ্গলবার রাতে এক যৌথ বিবৃতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংগঠনের নেতারা বলেন, সচিবালয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ভেতরে সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করার দাবী জানাচ্ছি। তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা অপ্রত্যাশিত এবং অত্যন্ত লজ্জাজনক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আটকে রাখা, হেনস্তা করা, চিকিৎসা না করে থানায় হস্তান্তর করা ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলার মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। এমন ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মনে করে ইসি জার্নালিস্ট ফোরাম।

সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ডও প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবি করেছে। সংগঠনটির সভাপতি মোজাম্মেল বাবু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, এডিটরস গিল্ড একজন সাংবাদিকের সঙ্গে এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানায়। সংগঠনটি মনে করে দেশের স্বনামখ্যাত একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা অন্যায়, অনভিপ্রেত। কী কারণে এভাবে আটকে রাখা হয়েছে, অসুস্থ হওয়ার পরও কেন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলো না তার সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। রোজিনাকে হেনস্তার পেছনে কারা দায়ী সেইসব ব্যক্তিদেরও খুঁজে বের করতে হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারের নীতি যেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সেখানে আমলাতন্ত্রের ভেতরে বা প্রশাসনের অভ্যন্তরে কারা এসব কাজ করে গণমাধ্যমকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে তারও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। গিল্ড মনে করে, সত্য তুলে ধরা, মিথ্যা উন্মোচন করা, দুর্নীতির চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরাই সাংবাদিকতার কাজ। রোজিনা ইসলাম সেই কাজ করছিলেন। যদি কোথাও কোনও আইনের ব্যত্যয় ঘটে থাকে তবে আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সুরাহাই কাম্য। কিন্তু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা কোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়। এডিটরস গিল্ড ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করছে। অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে তার মুক্তি দাবি করছে।

এছড়াও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সংগঠনের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় একজন নারী সাংবাদিকের ওপর সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগের এই আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছে মহিলা পরিষদ।

রোজিনা ইসলামকে আটক ও হেনস্তার নিন্দা জানিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র- আসক একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে রোজিনা ইসলাম কাজ করছেন। তিনি তাঁর প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম তুলে এনেছেন। এ ছাড়া করোনাকালীন সময়ে জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষায় মন্ত্রণালয়ের দূর্বলতাগুলোও তাঁর প্রতিবেদনে পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। এসব প্রতিবেদন নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যখাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এমন একজন সাংবাদিককে পেশাগত কাজের সময় এভাবে আটক করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রোজিনাকে আটকের এ ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।