করোনায় দেশ জুড়ে গাজি গ্রুপের সেবা


করোনায় দেশ জুড়ে গাজি গ্রুপের সেবা

গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবের যাত্রা

বাংলাদেশে যখন করোনা ভাইরাস তার ভয়াল থাবা বসাতে শুরু করেছে এবং স্বল্প সংখ্যক পিসিআর ল্যাব নিয়ে করোনায় পরীক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে সরকার ঠিক সে সময় দেশপ্রেমের তাগিদে ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) যৌথভাবে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চনে উদ্বোধন করেন গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাব। চালু হওয়ার পরদিন থেকেই দেশ ও দশের কল্যাণে কাজ শুরু করে এবং অফিসিয়ালি রিপোর্ট দেয়া শুরু করে ল্যাবটি। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতিক) ও গাজী গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পার নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপিত হয় ল্যাবটি। এই ল্যাবে থেকে সুফল পাচ্ছে ঢাকা, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, সোনারগাঁও, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। ল্যাবটিতে করোনা সংক্রমণের প্রথমদিকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষা করা হতো। বর্তমানে গাজী পিসিআর ল্যাবে সরকার নির্ধারিত মাত্র ১০০ টাকা ফি প্রদানের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা করাতে পারবেন যে কেউ। প্রতিদিন প্রায় ৭০০টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে এই ল্যাবের। এখন পর্যন্ত গত এক বছরে মোট ৪৭,৬৭২ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজের সহায়তায় ও ড. রোকসানা রায়হানের নেতৃত্বে ল্যাবটিতে নমুনা পরীক্ষার কাজ করেন দু’জন ভাইরোলজিস্ট ও চার জন চিকিৎসক। নমুনা সংগ্রহের কাজ করেন পাঁচ জন টেকনোলজিস্ট। এখানে বায়োসেফটি লেভেল-২ ল্যাব নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও ল্যাবটিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে। 

দেশে করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনের প্রসঙ্গে গাজী গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘এই ল্যাব স্থাপনের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশপ্রেম। দেশে যখন করোনা সংক্রমণ শুরু হয় তখন আমাদের যে অভিভাবক গোলাম দস্তগীর গাজী সাহেব আমাকে ফোন দিয়ে বলেন যে আমরা এই যুদ্ধে সামিল হতে চাই। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা আমি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। তুমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তুমি এই যুদ্ধে সামিল হও। এরপর আমরা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসরণ করে আলহামদুলিল্লাহ্‌ মাত্র দশ দিনের মধ্যে এই ল্যাব স্থাপন করি।’ এরকম একটি উদ্যোগ থেকে প্রাপ্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে প্রাপ্তির জায়গা হচ্ছে আনন্দ। দেশের জন্য কিছু করতে পারা মানুষের জন্য কিছু করতে পারা এটার চেয়ে আনন্দ পৃথিবীতে আর কিছুই নাই।’

গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবের সাথে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) যাত্রা

করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই বিজেসি তার সদস্যদের জন্য কিছু করার তাগিদে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে সহজে যাতে সংবাদকর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা করোনা পরীক্ষা করাতে পারেন সে জন্য চেষ্টা করতে থাকে। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সহায়যতায় নমুনা সংগ্রহের জন্য মহাখালী কমিউনিটি সেন্টারটি নির্ধারণ করা হয়। সেসময় বিজেসির সহায়তায় এগিয়ে আসে গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাব। গতবছরের ১১ই মে থেকে গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবের সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে বিজেসি। প্রথমদিকে প্রতিদিন বিনামূল্যে ৩০ জন সাংবাদিকের নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে শুরু হয় বিজেসির করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র। মাঝে করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার কারণে বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকে বিজেসির করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র। এরপর এবছর আবার করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ফলে গত ৭ এপ্রিল থেকে আবার চালু হয় এই পরীক্ষা কেন্দ্র। এ পর্যন্ত বিজেসির উদ্যোগে এবং গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবের সহায়তায় প্রায় ১৭৫০ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। 

গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবের সহায়তায় বিজেসির করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র চালুর প্রসঙ্গে বিজেসির পরিচালক রেজোইয়ানুল হক রাজা বলেন, ‘করোনার প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউ এই দুইবারই শুরু দিকে পরিস্থিতি যখন খারাপ হয়ে গেলো তখন ফ্রন্টলাইনার হিসেবে বিজেসির সদস্যদের করোনা টেস্ট করা খুব জরুরী হয়ে পড়েছিল কিন্তু সেই সু্যোগটা পাওয়া যাচ্ছিল না। এই ক্ষেত্রে গাজী গ্রুপ এগিয়ে আসে এবং সে কারণের আমাদের পক্ষে সে কাজটি করা হয়।’ তিনি গাজী গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বিজেসি গাজী গ্রুপের এই সহায়তার জন্য গাজী গ্রুপের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ এবং বিজেসি আশা করে গাজী গ্রুপ দেশের জনগণের জন্য যে সেবাটি দিচ্ছে সেটি অব্যাহত রাখবে। উল্লেখ্য, গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাব দেশের প্রথম ও সবচেয়ে বড় বেসরকারি করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র।