মিডিয়া কি ক্ষমতাবানের পক্ষে?


মিডিয়া কি ক্ষমতাবানের পক্ষে?

গুলশানে এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের পর দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যম গুলোর আচরণ নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুক্তভুগীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ ও মামলায় অভিযুক্ত বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহানের নাম এড়িয়ে যাওয়া এবং গণমাধ্যমের নীতি-নৈতিকতা নিয়ে সমালোচনায় সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো।

ঘটনার সাথে প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম জড়িয়ে থাকার কারণে দেশের বেশির ভাগ গণমাধ্যমই সেই অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চায়নি। কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবি প্রকাশ করলেও সে ছবিতে ভুক্তভুগীকে রেখে অভিযুক্তের চেহারা অস্পষ্ট করে দেওয়া হয়। গণমাধ্যমের এমন আচরণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের সাংবাদিকতার শিক্ষক ও বিভিন্ন সাংবাদিকবৃন্দ।

প্রতিক্রিয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কাবেরী গায়েন বলেন, ‘এইটা তো খুবই দুঃখজনক একটা বিষয়। কারণ আমরা জানি আমাদের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে বিজ্ঞাপন একটি বড় আয়ের উৎস এবং যখনই দেখা যায় যে এই জাতীয় বড় মালিকানার কেউ কোনো অন্যায় কাজ করেন তখন তা মিডিয়াতে আসে না। এবার তা সমস্ত মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বেশির ভাগ পত্রপত্রিকায় এবং গণমাধ্যমে ওই ব্যক্তির নাম বলা হয়নি শুধু বলা হয়েছে দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি। এমনকি কোনো কোনো জায়গায় দেখলাম মেয়েটির ছবি দেওয়া হয়েছে কিন্তু যিনি অভিযুক্ত তার ছবি ব্লার করে দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে বোঝা যায় আসলে আমাদের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির পলিটিক্যাল ইকোনোমির যে জায়গাটা সেই জায়গাটা আসলে খুব খারাপ একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছে। ন্যূনতম নীতি-নৈতিকতার যে জায়গাটা সে জায়গাটা আর নেই।’

বসুন্ধরা গ্রুপের ঘটনা নিয়ে যেসব গণমাধ্যম অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করতে চায়নি তারা আসলে কেন এমন আচরণ করেছে? আপনার মতামত কি? এমন প্রশ্নের জবাবে এটিএন বাংলার বার্তা প্রধান ও বিশিষ্ট সাংবাদিক জ.ই. মামুন বলেন, ‘আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে যেটা বুঝি সেটা হচ্ছে আমি এই ঘটনায় সামগ্রিকভাবে খুবই লজ্জিত এবং মর্মাহত। কারণ আমি মনে করি একটা মেয়ে এরকম একটা অভিযোগে সুইসাইড করেছে এবং সেটা নিয়ে মামলা হয়েছে সেরকম ঘটনা বাংলাদেশের মূলধারার পত্রিকা বা টেলিভিশনে ওইরকম ভাবে ফলাও করে প্রচার করা হয়নি এটি খুবই অমানবিক একটি ঘটনা। এটি নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা শুধু না সামগ্রিক ভাবে এটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে আমি দেখি। এত বড় একটা অন্যায়কে চেপে যাওয়া বা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা অন্যায়। এটি হওয়া উচিত না। সে কারণে সাংবাদিক হিসেবে প্রথমত আমি লজ্জিত দ্বিতীয়ত মর্মাহত।

সাংবাদিকতার একজন শিক্ষক হিসেবে গণমাধ্যমের এইরূপ আচরণ কে কিভাবে দেখছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, ‘গত দুইদিন যাবত যা দেখছি এটি আসলে গণমাধ্যমের যে নীতি-নৈতিকতা তার মধ্যে পড়ে না। আমরা সাংবাদিকতায় সবসময় একটা বিষয় বলি যে সাংবাদিকতা সবসময় সত্যটা তুলে ধরবে এবং সাংবাদিকতায় কোনো পক্ষ অবলম্বন করার সুযোগ নেই। কিন্তু এই প্রতিবেদন গুলোর মাধ্যমে একটা বিষয়ই সামনে আসে যে

গণমাধ্যম তার পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে সরে গেছে

গণমাধ্যমকে আমরা সবসময় বলি এটি একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে নাগরিকদের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে।এই দায়বদ্ধতা থেকে সবসময় বস্তুগত সংবাদ মানুষের নিকট তুলে ধরবে। কিন্তু গণমাধ্যমগুলো কতটুকু নৈতিকভাবে কাজ করছে বা কতটুকু সত্য তুলে ধরছে? আমরা দেখলাম যে  একটি টেলিভিশন চ্যানেল দুইজনের ছবিই প্রকাশ করলো। সেখানে ভুক্তভুগীর চেহারা খোলা রাখলো আর অভিযুক্ত ব্যক্তির চেহারা অস্পষ্ট করে দিল। এই বিষয় গুলো কিন্তু সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতার সাথে যায় না। আমরা সবসময় দেখতে চাই গণমাধ্যম সবসময় যা সঠিক তা তুলে ধরবে। গণমাধ্যমকর্মীরা কতটুকু মুক্ত সাংবাদিকতার চর্চা করতে পারছে? এই ঘটনাটি কিন্তু আমাদের কে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এবং সাধারণ মানুষ হতবাক হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখলেই বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট হয় যে মানুষ আসলে কি ভাবছে এবং মানুষের অনুভূতি কি। সাধারণ মানুষরা দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা দেখতে চায় বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকতা দেখতে চায়। একটা ঘটনার সাথে যারা জড়িত সবাইকে যুক্ত করেই প্রতিবেদন তৈরি করা উচিত। কয়েকজনকে বাদ দিয়ে কয়েকজনকে রেখে এটি একটি অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন। গণমাধ্যম কিন্তু এই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। এই ধরণের নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত সাংবাদিকতা চলতে থাকলে গণমাধ্যমের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকবে না।’ বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

কেন এমন হচ্ছে?

এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণ হিসেবে কাবেরী গায়েন বলেন, ‘আমাদের গণমাধ্যমের বাজার ছোট কিন্তু গণমাধ্যম অনেক। এই সমস্ত গণমাধ্যমগুলো সাংবাদিকতার যে নৈতিকতা তা নিয়ে বাজারে আসেনি। তারা এসেছে বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজের মুখপাত্র হিসেবে, তাদের হয়ে কাজ করার জন্য। আবার গণমাধ্যমের যে মালিক তারা বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে এবং সাংবাদিকতার প্রতি তাদের কোনো দায় নেই। দ্বিতীয়ত এরাই আবার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। মিডিয়া, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং রাজনীতি তিনটি একই জায়গা থেকে উদ্ভূত ফলে কে কাকে ধরবে করবে? কেউ কাউকে ধরতে পারে না।

মিডিয়া তো তাদের পোশাক 

গণমাধ্যমের যে দায়বদ্ধতা থাকার কথা ছিল যে স্বচ্ছতা থাকার কথা ছিল তা তারা থাকতে পারছে না। দেশের ৮০% গণমাধ্যমই অভিযুক্তের পরিচয় প্রকাশ করতে চায়নি অথচ আমরা ভুক্তভুগীর মেয়েটির বোন কে, মেয়েটির বাবা কে, মেয়েটির কোথায় বাড়ি আমরা সব জানি মেয়েটির ছবি দেখতে পাচ্ছি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না শুধু অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম। সাংবাদিকতার ন্যুনতম কিছু নৈতিকতা পালন করলে এই মেয়েটার মুখ গণমাধ্যমে আসার কথা ছিল না তার বোনের ছবি আসার কথা ছিল না এভাবে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ীও ভুক্তভুগীর পরিচয় গণমাধ্যমে আসার কথা ছিল না। কিন্তু এসেছে তার পরিচয়ই। যিনি অভিযুক্ত তার কোনো নাম-ছবি কিছুই আসছে না। এটি কিন্তু সাংবাদিকতার যে নৈতিকতা আছে এবং দেশের প্রচলিত আইন আছে তারও বাইরে।

কেন বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটে? এই প্রশ্নের জবাবে জ.ই. মামুন বলেন, ‘সবসময় বলা হয় যে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করছে সরকার। কিন্তু আমি তো বিএনপির আমল, আওয়ামীলীগের আমল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল সবমিলিয়ে টেলিভিশনেই ২০ বছরের বেশি কাজ করছি এর আগে পত্রিকা যোগ করলে তো ৩০ বছর হবে। আমি যেটা দেখি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যদি খর্ব হয় কারও মাধ্যমে সেটির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হচ্ছে আমাদের মালিকপক্ষ এবং বিজ্ঞাপনদাতারা। সরকার অনেক পরে আসে। যদি হিসাব করা হয় সমাজে প্রভাবশালী যারা তাদের মধ্যে টেলিভিশন এবং পত্রিকার মালিকপক্ষ সবচেয়ে শক্তিশালী। সেই মালিক নির্ধারণ করে দেয় তার পত্রিকায় কি ধরণের নিউজ যাবে, কি ধরণের ফিচার যাবে, বিনোদন পাতায় কার ছবি ছাপা হবে সেগুলো মালিকপক্ষ নির্ধারিত থাকে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে আমাদের যারা বিজ্ঞাপনদাতা। ধরা যাক বাংলাদেশে খুব বড় একটা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন। এখন গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে গ্রাহকের কিন্তু ভুড়িভুড়ি অভিযোগ। কিন্তু কোনো একটা টেলিভিশন কোনো একটা পত্রিকা কোনোদিন গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে এক কলাম লিখবে না। একটা টকশো হবে না গ্রামীণফোনের বিপক্ষে। কারণ এরা বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠাকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে।

বাংলাদেশের মিডিয়া গুলো যেসব বিজ্ঞাপনের উপরে বেঁচে থাকে সেইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো দিন কোনো মিডিয়া কিছু বলবে না। যেমন ধরা যাক খুব পরিচিত এক্স ব্র্যান্ডের একটা পণ্য গুড়া দুধ সেটার মধ্যে যদি তেলাপোকাও পান আপনি নিউজ করতে পারবেন না কারণ ওই প্রতিষ্ঠান আপনাকে মাসে এক কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেয়। আপনি এটি চেপে যাবেন। এই বাস্তবতায় একদিকে হচ্ছে মালিকদের চাপ অন্যদিকে বিজ্ঞাপনদাতার চাপ। পলিটিক্যাল কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো রাজনৈতিক দল বা প্রভাবশালী মহলের চাপ থাকে সরকারের বা অনেক সংস্থার চাপ থাকে কখনও কখনও সেটি খুব কম ঘটনায়। সেটি ১০% ও না। কিন্তু ৯০% হচ্ছে মালিকপক্ষ এবং বিজ্ঞাপন পক্ষের। মালিকদের চরিত্রটা দেখলে দেখা যায় মালিক হচ্ছেন বসুন্ধরার শাহলম সাহেব তার ছেলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। বাংলাদেশের মূল ধারার টেলিভিশন চ্যানেল মালিকরা বেশির ভাগই কিন্তু তাদের বন্ধুবান্ধব, আত্নীয়স্বজন।

বসুন্ধরার সঙ্গে যমুনা গ্রুপের এক সময় খুব শত্রুতা ছিল বৈরীতা ছিল সেটা সবারই কম বেশি জানাশোনা। তখন যমুনা গ্রুপের কোনো একটা বাজে ঘটনা ঘটলে বসুন্ধরা গ্রুপের পত্রিকা কালেরকণ্ঠ ,বাংলাদেশ প্রতিদিনে বিরাট ফলাও করে প্রচার করা হতো। আবার এদিকের কিছু ঘটলে ওদের যে পত্রিকা যুগান্তর এবং যমুনা টেলিভিশিনে বিরাট করে প্রচার করা হতো। এখন কি হচ্ছে? তাদের মধ্যে বৈরীতা দূর হয়ে গেছে বন্ধুত্ব হয়েছে। আমি লক্ষ্য করলাম যুগান্তর পত্রিকাতেও বসুন্ধরা গ্রুপের নাম উল্লেখ করা হয় নাই। বলা হয়েছে যে, একটি শিল্প গ্রুপের চেয়ারম্যানের ছেলে বা ম্যানেজিং ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুধুমাত্র যমুনা বসুন্ধরা না আর যারা বাংলাদেশে টেলিভিশন বা বড় বড় মিডিয়া হাউজ চালান তারা সবাই বিরাট শিল্পপতি বিরাট পুঁজি তাদের এখানে। একটা টেলিভিশন করতে শত শত কোটি টাকা লাগে এখন। কি মনে হয় তারা এই টেলিভিশন করেছে দেশের মানুষের অবাধ তথ্য প্রবাহের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য? আমি সেটি মনে করি না। আমি মনে করি এটি একটি বিজনেস। এখানে যারা বিনিয়োগ করেছে তারা এখানে যদি ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখান থেকে আর ২০০ কোটি টাকা তুলবে। পাশাপাশি তার অন্য বিজনেসের প্রটেকশন দিবে। আমি এভাবে বলি কথাটাকে

মিডিয়াকে বাংলাদেশে ব্যবহার করা হয় ঢাল এবং তলোয়ার হিসেবে

অর্থাৎ অন্যের উপর আঘাত করার জন্য আপনি তলোয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন আবার অন্যকেউ আপনার উপর আক্রমণ করতে চাইলে আপনি তখন ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইবেন। এটি হচ্ছে প্রধান কারণ। তারপরে যদি সময় থাকে সু্যোগ থাকে বা স্পেস থাকে এই কিছু হয়তো সামাজিক দায়বদ্ধতায় অন্য কোনো নিউজ দিলেন আরকি। লোকজনের চোখে একটা ধুলো দেওয়ার জন্য যে না আমরা কিন্তু সামাজিক দায়িত্বও পালন করি। আমি শুধু এই বসুন্ধরার ঘটনাই বলছি না। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে একটা ঘটনা ঘটলো সেখানে পাঁচজন লোককে গুলি করে মেরে ফেলা হলো শ্রমিককে। তারা বেতন চাইতে গিয়েছিল। বাংলাদেশের কয়টা মিডিয়া সেটির ব্যাপারে নিউজ করেছে? কারণ ওই গ্রুপ বিশাল প্রতিপত্তিওয়ালা তাদের অনেক টাকা তাদের অনেক প্রতিষ্ঠান তারা অনেক বিজ্ঞাপন দেয়। এর আগে আপন জুয়েলার্সের এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল তখনও অনেক প্রতিষ্ঠান নাম বলে নাই অনেক মিডিয়া হাউজ নাম বলে নাই পরিচয় বলে নাই চেপে গিয়েছে। কারণ আপন জুয়েলার্সও বিজ্ঞাপন দেয়। এরকম অসংখ্যা ঘটনা বাংলাদেশে আছে। আমি মনে করি সাংবাদিকতার জন্য এটি অশুভ একটি লক্ষণ।

এখান থেকে মুক্তির উপায় কি? এখান থেকে মুক্তির উপায় আমি দেখি না। আপাতত কোনো মুক্তির উপায় আমি দেখি না। রাষ্ট্র যদি এখানে সাহায্য করে । প্রিন্ট মিডিয়ায় যেমন সরকারি বিজ্ঞাপন আসে। কোনো পত্রিকা যদি চায় সরকার যদি তাকে সাহায্য করে সরকারি বিজ্ঞাপন নিয়ে সে চলতে পারবে। কিন্তু টেলিভিশনে তো এক টাকার সরকারি বিজ্ঞাপন নাই। বাইরের বিজ্ঞাপন ছাড়া আমি চলব কিভাবে? আজকে আমি বসুন্ধরার বিপক্ষে ক্ষেপে গেলাম। কারণ বাংলাদেশে তো বড় অপরাধ তো বড়রাই করে। আপনার আমার পক্ষে তো ১০০০ কোটি টাকা ৫০০০ কোটি টাকা ১০০০০ কোটি টাকা মেরে দেওয়ার সামর্থ্য নাই ব্যাংকের। সেটা যারা মেরে দিবে তারাই তো আবার বিজ্ঞাপন দেয়। আজকে আপনি বসুন্ধরার বিপক্ষে নিউজ করবেন কালকে আপনি যমুনার বিপক্ষে করবেন তারপর দিন স্কয়ারের বিপক্ষে করবেন তারপর দিন বেক্সিকোর বিপক্ষে করবেন তাহলে আপনার মিডিয়া চলবে কি করে? আপনি প্রতিষ্ঠানের লোকদের কে বেতন দিবেন কিভাবে? এটাই বাস্তবতা। এখন সরকার যদি আমাদেরকে পত্রিকার মত বলত তোমাদের কে আমরা মাসে ৫ কোটি টাকার বা ১০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিব। তাহলে আমরা বলতাম আমরা বসুন্ধরার বিজ্ঞাপন নিব না, যমুনার নিব না, বেক্সিমকোর নিব না যারা ঋণ খেলাপী তাদের নিব না। সেটা তো আমরা পাচ্ছি না। ফলে আমাদের কে প্রতিনিয়ত আপোষ করতে হয় এবং আপোষ করতে গিয়ে আমাদের সাংবাদিকতা আমাদের মূল নৈতিকতার জায়গাটা থেকে বিচ্যুত হই। এইটাই বাস্তবতা। এখন আমি ইন্ডিভিজ্যুয়ালি কি করতে পারি? আমি মাঝেমধ্যে খুব ভাবি আমার এক বড়ভাই/বন্ধু তার জায়গায় যদি আমি থাকতাম আমি কি করতাম বিরাট বিপ্লব করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বের হয়ে আসতাম? যে না তোমার মত অনৈতিক লোকের সঙ্গে আমি চাকরি করবনা। তো বাংলাদেশে নৈতিক কে? কোন লোকটা খুব ফেরেশতা হয়ে কোন মিডিয়া চালাচ্ছে বা কোন প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে ?’

সাংবাদিকদের যে সাধারণ মানুষ ঢালাও ভাবে দোষারোপ করছে সে প্রসঙ্গে জ.ই. মামুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আরেকটা কথা এখানে বলা দরকার সেটি হচ্ছে যে সাংবাদিকদের উপর খুব মানুষের ক্ষোভ। সংবাদ মাধ্যম এগুলি নিয়ে কিছু লিখলো না। তো কই আমি তো দেখলাম না বাংলাদেশের কোনো নারী সংগঠন ঢাকা শহরের রাস্তায় একলক্ষ নারী নিয়ে বিরাট প্রতিবাদ করলো কিংবা একটা মিছিল করলো বা একটা বিক্ষোভ করলো যে, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই বা মেয়েটা কেন আত্নহত্যা করলো। কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সামাজিক সংস্থা কার কোনো দায়িত্ব নাই। সবার দায়িত্ব হচ্ছে ফেইসবুকে এসে বিরাট বিপ্লব করা এবং সাংবাদিকদের চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা। যে সাংবাদিকরা কিছুই করলো না কিছুই করলো না আরে ভাই আপনি কি করেছেন? নিজেকে জিজ্ঞেস করেন। নিজে কিছুই করবে না শুধুমাত্র সাংবাদিকদের দোষ দিয়ে দিবে। এমনকি বাংলাদেশের সকল রাজনীতিবিদ সকল এমপি বিরোধীদল , আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি সবাই খুব ভালো মানুষ। বাংলাদেশের সকল ডাক্তার খুব ভালো, সকল ইঞ্জিয়ার খুব ভালো, সকল পুলিশ সৎ, সকল বিচারক ভালো, সকল আইনজীবি ভালো, সকল ব্যবসায়ী চরম সৎ শুধুমাত্র সাংবাদিকরা অসৎ ব্যাপারটা কি তাই! যদি তা না হয় তাহলে কেন সাংবাদিকদের কে এই অঙ্গুলি নির্দেশ করা??? এই আমার কথা'

চ্যানেল আই’য়ের ভুল

দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের ভুমিকা নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা চলছে তখন এতে আগুনে ঘি ঢালার মত নতুন মাত্রা যোগ করে চ্যানেল আই প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত একটি ছবি। ওই ছবিতে দেখা যায় চ্যানেল আই ভুক্তভোগীর সাথে অভিযুক্তের একটি ছবি প্রকাশ করে সেই ছবিতে ভুক্তভোগীর চেহারা স্পষ্ট রেখে অভিযুক্তের চেহারা অস্পষ্ট করে দেওয়া। যা গণমাধ্যমের যে নীতি যে নৈতিকতা তার সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র।

ব্যাখ্যা ও দুঃখ প্রকাশ

এমন ভুলের ব্যাখা হিসেবে চ্যানেল আই’য়ের বার্তা বিভাগ প্রতিবেদন প্রকাশের একদিন পর ২৮ এপ্রিল এটিকে কারিগরি ভুল বলে দুঃখ প্রকাশ করে তাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ থেকে একটি বিবৃতি দেয়। সেই বিবৃতিতে চ্যানেল আই তাদের ভুল স্বীকার করে বলে, ‘টেকনিক্যাল ভুলের কারণে ভিকটিমের বদলে অভিযুক্তের ছবি ব্লার করে প্রচার হয়েছে যা আমাদের দর্শকদের মতো আমাদের কাছেও কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভুলটি অসাবধানতার কারণে হলেও তা চ্যানেল আই’র নীতিনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। এরকম ভুল যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে সে বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকব।’