খুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক গ্রেপ্তার


খুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক গ্রেপ্তার

খুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় এনটিভির খুলনা ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক আবু তৈয়বকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। 


মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার নূরনগর এলাকার বাসা থেকে সাংবাদিক আবু তৈয়বকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ জানায় সাংবাদিক আবু তৈয়ব সম্প্রতি খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। ঐ পোস্টে তার বিরুদ্ধে মোংলা কাস্টমসের শুল্ক ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ তোলা করা হয়। ঐ পোস্টের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা সদর থানায় দায়ের হওয়া এই মামলার নম্বর- ২৫। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(২),২৯(2),৩১(১) ও ৩১(২)/৩৫ ধারায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে।


আবু তৈয়বের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে বিজেসির ট্রাষ্টি ও সাংবাদিক রাশেদ আহমেদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের যে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে হয়রানি করা হচ্ছে সেটি মুক্ত সাংবাদিকতার পরিপন্থি কাজ হচ্ছে কারণ সাংবাদিকরা মুক্তভাবে কাজ করবেন সেটাই স্বাভাবিক। সাংবাদিকদের কোনো প্রকার অন্যায়ের বিচারের জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। এরকম একটি প্রেস কাউন্সিল বিদ্যামান থাকা অবস্থায় আলাদা আইনের মাধ্যমে সাংবাদিককে হয়রানি করে সাংবাদিকের কণ্ঠ রোধ করে দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রাষ্ট্রের জন্য হয়তো প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু সেটি সাংবাদিকদের জন্য প্রযোজ্য নয়। সাংবাদিকরা সবসময় জাতির কাছে রাষ্ট্রের কাছে এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ এবং নিরপেক্ষ ভাবে সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে চান। 


সাংবাদিকদের যেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতা বহির্ভূত রেখে কাজ করা সু্যোগ দেওয়া হয় সে দাবি জানান তিনি। সাংবাদিক আবু তৈয়বকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নয় বরং তার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে প্রচলিত আইনে প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।  


উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা আর্টিকেল ১৯-এর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে মোট ১৯৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আসামি করা হয়েছে ৪৫৭ ব্যক্তিকে। দায়েরকৃত মামলার ৪১টিতে আসামি করা হয়েছে ৭৫ জন পেশাদার সাংবাদিককে। এই ৭৫জন সাংবাদিকের মধ্যে ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালে এ আইনের অধীনে দায়ের করা মোট মামলার সংখ্যা ছিল ৬৩টি।  ২০২০ সালে ডিজিটাল আইনের অধীনে যে ১৯৮ মামলা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ১৯ মামলা দায়ের করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাংসদেরা নিজেই কিংবা তাঁদের ঘনিষ্ঠ লোকজন।


বাংলাদেশের এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ব্যাপক সমালোচিত একটি আইন। অনেকের মতে এই আইনটি গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরার জন্য তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে এই আইনের ২৫, ২৯, ৩১, ৩২ নম্বর ধারা গুলো নিয়ে রয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা গুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে অপরাধ প্রমাণের আগেই দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হচ্ছে অভিযুক্তকে। 


ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সংবিধানের ৩৯নং অনুচ্ছেদে উল্লেখিত “মানহানি” শব্দটির প্রকৃত অর্থ স্পষ্ট নয়। যেমন কেউ কোনো প্রকার দুর্নীতি বা অন্য কোনো প্রকার অপরাধ সংগঠিত করার তার বিরুদ্ধে কোনো সংবাদ ছাপা হলে বা কোনো মতামত প্রকাশ করলেও তিনি যদি উক্ত সংবাদ বা মতামতকে মানহানি বলে মনে করেন এবং সে বিষয়ে মামলা করেন তাহলে সেই মামলা আসলে কতটা যুক্তিযুক্ত? স্বাভাবিক ভাবেই মনে এই প্রশ্ন আসে।