সাংবাদিকদের আইনি সুরক্ষা কোথায়?


সাংবাদিকদের আইনি সুরক্ষা কোথায়?

বিশ্বজুড়ে মতপ্রকাশ ও তথ্য পাওয়ার যে আইনী অধিকার সাংবাদিকদের রয়েছে, তা প্রতিনিয়তই কমবেশী বদলে যাচ্ছে। সাথে শারীরিক ঝুঁকি আর আর্থিক ক্ষতি তো একরকম সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা জাতীয়, আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সেই অধিকার রক্ষায় কাজ করে। অবশ্য আইনি সহায়তা দেয় যেসব সংস্থা, তাদের সংখ্যা সীমিত; সেবাও একটি নির্দিষ্ট আইনী বা ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখানে তেমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করা হলো, যারা সাংবাদিকদের আইনি এবং অন্যান্য সহায়তা দেয়ার জন্য সুপরিচিত।

মিডিয়া লিগ্যাল ডিফেন্স ইনিশিয়েটিভ

আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা মিডিয়া লিগ্যাল ডিফেন্স ইনিশিয়েটিভ, এমএলডিআই সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সহায়তা করে থাকে। যে কোনো দেশের প্রিন্ট, ব্রডকাস্ট বা অনলাইনসহ অন্য যে কোন মাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কাজ করে তারা। লন্ডনভিত্তিক গ্রুপটি বিশ্বজুড়ে আইনী সুরক্ষা দেয়া প্রতিষ্ঠাগুলোর নেটওয়ার্ক, এমনকি সরাসরি আইনজীবিদের সঙ্গেও কাজ করে। প্রয়োজন হলে, তারা আইনজীবীদের ফিও প্রদান করে থাকে। বিশেষ করে, কোনো সাংবাদিক যখন কারাগারে যাওয়া বা আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন অথবা কোন গণমাধ্যম যখন অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যায়, এমন পরিস্থিতিতে তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে। সাংবাদিকদের যখন নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনী সহায়তার দরকার হয়, তখনো সাহায্য করে এমএলডিআই।

অফিস অব দা স্পেশাল রেপোর্টেয়ার ফর ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন

আমেরিকাভিত্তিক এই সংগঠনটি কাজ করে স্বাধীন ন্যায়পাল হিসেবে। ইন্টার আমেরিকান কমিশন অফ হিউম্যান রাইটসে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের কেনো অভিযোগ এলে তারা সেটি তদন্ত করে। এই বিষয়ে কেউ কোনো আবেদন করলে তারা আইএএইচসিআরকে সেই আবেদন মূল্যায়ন ও রিপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করে। এটা তাদের সবচে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি। এর ভিত্তিতে আইএএইচসিআর চাইলে মামলা দায়ের করতে পারে ইন্টার আমেরিকান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটসে। রিপোর্টেয়ার অবশ্য সাংবাদিক বা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি আর্থিক বা আইনী সহায়তা দেয় না। তবে বিবেচনার জন্য বিনামূল্যে তাদের পিটিশন গ্রহণ করে।

অনলাইন মিডিয়া লিগ্যাল নেটওয়ার্ক

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বার্কম্যান সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটি যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে অনলাইন মাধ্যমের সাংবাদিক ও প্রতিষ্ঠানকে বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে ফি’তে আইনি পরামর্শ দেয়। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে তাদের বাছাই করা আইনী প্রতিষ্ঠান, ল’ স্কুল ও আইনজীবী রয়েছে। ওএমএলএন বিনামূল্যে কপিরাইট লাইসেন্সিং ও এর ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার, সরকারী তথ্যে প্রবেশাধিকার, কোনো লেখা প্রকাশের আগে পর্যালোচনা (রিভিউ) এবং মামলা পরিচালনা সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়ে থাকে।

পার্স ফ্রাই হেইডস ফন্ডস

নেদারল্যান্ডসের ডাচ এসোসিয়েশন অব জার্নালিস্টস্ এবং সোসাইটি অব এডিটরস মতপ্রকাশের অধিকার ও তথ্যে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য ‘স্বাধীন মুক্ত সাংবাদিকতা ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করে। আমস্টারডামে এবং প্রাথমিকভাবে ডাচ ‘মিডিয়া কমিউনিটি’কে সেবা দিতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এই ফাউন্ডেশন ইউরোপের অন্য দেশের একই ধরনের গ্রুপগুলোকেও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।

রিপোর্টার্স কমিটি ফর ফ্রিডম অব দা প্রেস

২৪ ঘন্টা জরুরি হটলাইনে সাংবাদিকদের সেবা দেয় এই সংস্থাটি। এটি মূলত: একটি অলাভজনক সংস্থা। এটি আদালতের সিদ্ধান্তের অগ্রগতি, মিডিয়া আইন সম্পর্কিত সংবাদ এবং এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকে। ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক এই সংস্থা কাজ করে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য। তারা ডিজিটাল সাংবাদিকতার জন্য ‘রিপোর্টারের অগ্রাধিকার’ বিষয়ে একটি ধারাবাহিক নির্দেশিকাও তৈরি করেছে।

সোসাইটি অব প্রফেশনাল জার্নালিস্টস্ লিগ্যাল ডিফেন্স ফান্ড

সরকারী নথিপত্র ও কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণের জানার অধিকার জোরালো করতে মামলা দায়ের ও পরিচালনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সোসাইটি একটি তহবিল গঠন করেছে। একই উদ্দেশ্যে নাগরিকদেরকে সংগঠিত, অবহিত এবং লবিং করতেও এই তহবিল ব্যবহার হয়। এর প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে সাংবাদিকদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যে মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী (যা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়) বিষয়ে আইনজীবী চিহ্নিত করতেও সাংবাদিকদের সহায়তা করে।

সাংবাদিক সুরক্ষায় বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে নানান সংগঠন কাজ করলেও বাংলাদেশের চিত্র আলাদা। এখানে নানান নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন সাংবাদিকরা। তবে দেশে সাংবাদিকদের স্বার্থ সুরক্ষায় একাধিক সংগঠন গড়ে উঠলেও সেগুলো তাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে বা নির্যাতনের ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবি আদায়ে অতটা তৎপর নয়।

এ ব্যাপারে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, "সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। কোন একটা বিষয়ে যদি সবার এক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তখন দেখা যায় রাজনৈতিকভাবে কেউ কেউ এটার ফায়দা নিতে চেষ্টা করে। আবার সাংবাদিকদেরও সাহসের অভাব আছে, কারণ সাংবাদিকদের চাকরির নিশ্চয়তা এখনও গড়ে ওঠেনি।"

সাংবাদিকদের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেন এমন একটি সংস্থার কর্মকর্তা তাহমিনা রহমান বলেন, "সাংবাদিক নির্যাতনের মামলাগুলো দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রাখা হয়। একের পর এক তারিখ পড়তে থাকে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংক্রান্ত আইনগুলোয় সাংবাদিকদের সুরক্ষার কথা সেভাবে বলা নেই। এ কারণে তারা দ্রুত বিচার পান না। এছাড়া তাদের কোন ‘সাপোর্ট সিস্টেম’ নেই যারা তাদের এসব সমস্যা নিয়ে কথা বলবে।"