হেফাজতের হামলায় আহত অন্তত ২০ সাংবাদিক; নিউজ ২৪ এর জিডি


হেফাজতের হামলায় আহত অন্তত ২০ সাংবাদিক; নিউজ ২৪ এর জিডি

হেফাজতে ইসলামের গত দুই দিনের সহিংস কর্মসূচি ঘিরে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্তত ২০ জন গণমাধ্যমকর্মী হামলার শিকার হয়েছেন। ছবি নিতে গেলে বা রাস্তা পারাপারের সময় একের পর এক হামলার শিকার হয়েছেন তারা। এই দুই দিনে গুরুতর আহত সাংবাদিকদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে, এমনকি এখনো কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এদিকে, হামলার শিকার বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার মৌ খন্দকার আজ সোমবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন।

রোববার দিনভর যা হয়েছে:

হেফাজতের হরতালে রোববার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাইনবোর্ড মোড় থেকে শিমরাইল মোড় পর্যন্ত সংবাদ সংগ্রহের সময় হামলার শিকার হন সাংবাদিকরা। 

হরতালের দিন রোববার নারায়ণগঞ্জের শিরাইরাইলের কাছাকাছি জায়গায় হামলার শিকার হন নিউ এইজের সাংবাদিক মোক্তাদির রশিদ রোমিও। তার সঙ্গে ছিলেন আরটিভি অনলাইনের একজন সাংবাদিক। তারা দুজন মহাসড়ক ধরে যাওয়ার পথে কয়েকজন পিকেটার তাদের আটকায়। পরিচয়পত্র দেখানোর পরও তাদেরকে ছাড়া হয়নি।

এ সময় ‘সঠিক নিউজ প্রচার হচ্ছে না’ দাবি করে রোমিওর মাথায় বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করে হেফাজত কর্মীরা। হেলমেট মাথায় থাকায় রোমিও খুব একটা আঘাত না পেলেও, তার হেলমেটটি ভেঙে গেছে।

বিজেসি নিউজকে রোমিও বলেন, ‘আমাকে আটকানোর পর তারা কোনো কথাই শুনছিল না। আইডি কার্ড দেখানোর পর তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একজন আমার মাথায় আঘাত করে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই।' 

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিউজ টোয়েন্টিফোরের একটি গাড়ি সানারপাড় মোড়ের কাছে দাঁড়ানো ছিল। পিকেটাররা চালককে মারধর করে গাড়ির চাবি নিয়ে নেয়। এরপর গাড়িটি ভেঙে চুরমার করা হয়। এ সময় হেফাজতের কর্মীরা নিউজ টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার মৌ খন্দকারের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন।

মৌ খন্দকার বিজেসি নিউজকে বলেন, ‘হরতালের নিউজ সংগ্রহের সময় একদল হেফাজত কর্মী আমার গায়ে মবিল ঢেলে দেয়। তারা আমাকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল। ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে যাই। এছাড়া তাদের ছোঁড়া ইটে আমার মাথায় আঘাত লাগে। আমার সারা গায়ে এখনও মবিলের গন্ধ, মাথায় ব্যথা। তারা আমাদের অফিসের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমার ক্যামেরাসপার্সনের গায়েও মবিল ছুঁড়েছে।‘ 

গাড়িতে আগুনের ফুটেজ নেয়ার সময় মারধরের শিকার হয়েছেন জিটিভির ক্যামেরাপারসন মাসুদুর রহমান। মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন তিনি।

মূল সড়ক ধরে সানারপাড় বাসস্ট্যান্ড থেকে মৌচাকের দিকে যাওয়ার পথে বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক এম কে রায়হান ও বৈশাখী টেলিভিশনের আশিক মাহমুদ। হেফাজত কর্মীরা তাদেরকে প্রথমে ধাওয়া করে। পরে ধরে বেধড়ক মারধর করে হরতাল সমর্থক হেফাজত বাহিনী, ছিনিয়ে নেয় মোবাইল ফোন।

আশিক মাহমুদ বলেন, “আমরা কোনো ছবি তুলছিলাম না, এমনকি ফোনও আমাদের হাতে ছিল না। পুলিশ পিকেটারদের হটিয়ে সামনে যাওয়ার পর আমাদের পেয়ে ‘এই ধর সাংবাদিক, পিঠা, জন্মের মাইর দে’ এসব বলে আমাদের লাঠিসোটা দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। সারা শরীর জুড়ে মাইরের দাগ।”

সাইনবোর্ড এলাকায় ছবি তুলতে গিয়ে হামলার শিকার হন নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোরের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি বিল্লাল হোসাইন। তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে গেছে পিকেটাররা।

এদিকে, নিউজ২৪ এর সাংবাদিক মৌ খন্দকার আজ সোমবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন। এছাড়া এই ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে।