গণমাধ্যমে ২৫ মার্চ


গণমাধ্যমে ২৫ মার্চ

Born in war, Bangladesh marks 50 years of independence উপরের এই লেখাটি গতকাল এপি বা এসোসিয়েটেড প্রেসের (Associated Press) বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে করা সংবাদের হেডলাইন। ঠিক এইভাবেই এখন থেকে ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের ভয়াল গণহত্যার কথা তুলে ধরেছিলো এপি'র সংবাদদাতা।

শুধু এপিই নয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের গণহত্যার খবর ছড়িয়ে দিয়েছিল বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী গণমাধ্যম। বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিল ২৫শে মার্চের পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নৃশংসতার চিত্র। 'বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা: ফ্যাক্টস অ্যান্ড উইটনেস, যা লিখেন আ.ফ.ম সাঈদ'। তার এই বইতে স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কে বিদেশী সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টের একটি সংকলন প্রকাশ করা হয়েছে। পাঠকদের জন্যে তা তুলে ধরা হলো।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছিলো,

".....কলকাতা থেকে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের খবরে প্রকাশ যে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এক গুপ্ত বেতার থেকে জনসাধারণের কাছে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।..."

ভয়েস অব আমেরিকা, "....ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনী আক্রমণ শুরু করেছে। মুজিবর রহমান একটি বার্তা পাঠিয়েছেন এবং সারা বিশ্বের নিকট সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন..."।

দিল্লির দি স্টেটসম্যানের খবর ছিলো, "বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে রহমানের পদক্ষেপ। একটি গোপন বেতার থেকে প্রচারিত ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের পূর্বাংশকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে নতুন নামকরণ করেছেন।"

দি ডেইলি টেলিগ্রাফ, লন্ডন, ২৭শে মার্চ দি ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় 'সিভিল ওয়ার ফ্লেয়ারস ইন ইস্ট পাকিস্তান: শেখ এ ট্রেইটর, সেইস প্রেসিডেন্ট'শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীন ঘোষণা ও ইয়াহিয়া খান তার বেতার ভাষণে শেখ মুজিবকে বিশ্বাসঘাতক বলার কথা উল্লেখ করা হয়।

দি গার্ডিয়ান, গার্ডিয়ানের ২৭শে মার্চ সংখ্যায় এক খবরে বলা হয়, "...২৬শে মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাতির উদ্দেশ্যে রেডিওতে ভাষণ দেয়ার পরপরই দি ভয়েস অব বাংলাদেশ নামে একটি গোপন বেতারকেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর এই ঘোষণা অপর এক ব্যক্তি পাঠ করেন।"

আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ারস হেরাল্ডের ২৭শে মার্চের সংখ্যার একটি খবরের শিরোনাম ছিলো, "বেঙ্গলি ইন্ডিপেন্ডেন্স ডিক্লেয়ার্ড বাই মুজিব।"

এর বাইরে ভারতের বহু সংবাদপত্র এবং আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ক্যানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, হংকং, নরওয়ে, তুরস্ক, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশের খবরে স্থান পায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার খবর। নিউইয়র্ক টাইমসেও শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়ার ছবি ছাপানো হয়েছিলো। পাশেই বলা হয়েছে 'স্বাধীনতা ঘোষণার পর শেখ মুজিব আটক'।

বার্তা সংস্থা এপির একটি খবরে বলা হয়, "ইয়াহিয়া খান পুনরায় মার্শাল ল দেয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে।"

আয়ারল্যান্ডের দি আইরিশ টাইমসের শিরোনাম ছিলো - পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা আর সাথে ছিলো শেখ মুজিবের ছবি।

দিল্লি থেকে রয়টার্সের খবরে ১০ হাজার মানুষের নিহত হবার ও স্বাধীনতা ঘোষণার পর মুজিবকে সম্ভবত আটক করা হয়েছে, এমন কথা বলা হয়।

ব্যাংকক পোস্টের খবরে বলা হয়, "শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নাম দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।"

সেই সময়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কথা আসলেই সবার আগে যে নামটি সামনে আসে সেটি সাইমন ড্রিং। ২৫ মার্চের গণহত্যার চিত্র যাতে বিশ্ববাসী জানতে না পারে, সে জন্য পাক হানাদার বাহিনী বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছিলো। তবে সে ব্যবস্থা নিয়েও সফল হতে পারেনি পাক হানাদাররা। সাইমন ড্রিং-ই সর্বপ্রথম বিশ্ববাসীকে জানান, পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা হয়েছে। তিনি লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফে লিখেন, ‘ট্যাংকস ক্রাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার পত্রিকাগুলোর বিশেষ অবদানও উল্লেখ করার মতো। সেই ক্রান্তিকালে নিয়মিত মুক্তিযুদ্ধের খবর ছাপতো সংবাদ জাগরণ, গণরাজ, রুদ্রবীণা, নাগরিক জনপদ ইত্যাদি দৈনিক পত্রিকা। সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে ছিল সমাচার, দেশের কথা, সীমান্ত প্রকাশ ও ত্রিপুরার কথা। প্রথমদিকে এ সব পত্রিকা বাংলাদেশে থেকে পালিয়ে আসা লোকদের স্মৃতিনির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশ করতো। পরবর্তী সময়ে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় প্রতিবেদক পাঠিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চলমান সংবাদ সংগ্রহ করে প্রকাশ করা হতো।

তবে সেসময় ইয়াহিয়ার জারি করা ৭৭ নম্বর সামরিক বিধির মাধ্যমে প্রথম রাশ টেনে ধরা হয় গণমাধ্যমের। এটা ছিল কেবল শুরু মাত্র। এরপরই সেই সময়ে শুরু হয় একের পর এক আইন প্রণয়ন। যেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে সঠিক তথ্যসংগ্রহ ও প্রকাশ প্রক্রিয়া।

তথ্য ও ছবিঃ ইন্টারনেট