করোনায় কতটুকু বদলালো স্বাস্থ্যখাত


করোনায় কতটুকু বদলালো স্বাস্থ্যখাত

আজ ১৮ই মার্চ, তেমন কোনো বিশেষ দিন নয়। তবে গত এক বছরের হিসাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর এক বছর আজ। গত বছর এই তারিখেই করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু হয়েছিলো বাংলাদেশে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৬২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে সনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার১৮৭। এখন পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৬৪হাজার ৯৩৯জন।

বাংলাদেশে গত বছর ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। গত এক বছরে করোনা চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনায় কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেছে। তবে একই সাথে যথাযথ উপকরণের অভাব, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ, হাসপাতালে সেবার অভাব, জরুরি সেবা নিশ্চিতে ব্যাপক দুর্বলতার পাশাপাশি ছিলো দুর্নীতির খবরও।

এর আগে প্রথম ২০১৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য প্রকাশ করা হয়। আর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের কথা ঘোষণা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৪ জানুয়ারি থেকেই দেশের বিমানবন্দরসহ সব স্থল ও নৌবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করে।

মার্চ ১ তারিখ থেকে সব সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট খোলারও নির্দেশ দেয় সরকার। চালু হয় কন্ট্রোল রুম। সাতদিন পর ৮ মার্চ দেশের প্রথম করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এরপর তা দ্রুত ছড়িয়ে পরে নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুরের শিবচর ও ঢাকার মিরপুরে।

১৯শে মার্চ স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়মিত ব্রিফিং-এ করোনায় প্রথম কোন ব্যক্তির মৃত্যুর কথা জানায়। যিনি মারা গিয়েছিলেন ১৮ই মার্চ। সেদিন ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছিলো নতুন করে ১৬টি আরটিপিসিআর মেশিন ক্রয় করার প্রক্রিয়া চলছে, যার মধ্যে সাতটি দ্রুত পাওয়া যাবে। এছাড়াও চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য ৬ হাজার সেট পিপিই মজুত আছে।

সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ঐ সময় দেশে সরকারি হাসপাতালে ৬৫৪টি এবং মোট শয্যার সংখ্যা ছিলো ৫১,৩১৬টি। আর বেসরকারি হাসপাতাল ছিলো ৫,০৫৫টি, যেখানে মোট শয্যার সংখ্যা ছিলো ৯০ হাজার ৫৮৭টি। তখন ঢাকায় আইসোলেশন শয্যা ছিলো ১ হাজার ৫০টি । আর ঢাকা মহানগরীর বাইরে ঢাকার অন্যান্য জেলায় আইসোলেশন বিছানার সংখ্যা ২২৭, চট্টগ্রামে ৪৪১, রাজশাহীতে ৫৫৮, বরিশালে ৪২৯, রংপুরে ৫২৫, সিলেটে ৬৬৪, ময়মনসিংহ ৯০, খুলনায় ৫৩১। তখন সরকারি স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত মোট চিকিৎসকের সংখ্যা ছিলো ২৫ হাজার ৬১৫ জন। আর বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতাল কর্মীসহ মোট জনবল কর্মরত রয়েছেন ৭৮ হাজার ৩০০ জন।

মূলত এরপর থেকে ক্রমাগত নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা বাড়ানোর চেষ্টা চালাতে থাকে স্বাস্থ্য বিভাগ। পহেলা এপ্রিল ব্রিফিং এ জানানো হয়েছিলো করোনা চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ওই দিন ২০ হাজার ২৪৭ চিকিৎসক নিবন্ধিত হয়েছিলো ।

প্রথম মৃত্যুর দু'মাস পর ১৮ই মে স্বাস্থ্য বিভাগ ৪২টি প্রতিষ্ঠানে ৯৭৮৮টি নমুনা পরীক্ষার খবর দেয়। একই সাথে জানানো হয় প্রায় বিশ লাখ পিপিই বিতরণ করা হয়েছে এবং মজুদ আছে আরও প্রায় চার লাখ। এর ঠীক দুই মাস পর ১৮ই জুলাই মোট ৮০টি পরীক্ষাগারে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় মোট ১০ হাজার ৯২৩টি নমুনা পরীক্ষার কথা জানিয়েছিলো স্বাস্থ্য বিভাগ।

স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী এখন ১৬৩টি কেন্দ্রে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা হচ্ছে যার মধ্যে আরটি পিসিআর ল্যাবরেটরি আছে ১১৮টি। সব মিলিয়ে এ মূহুর্তে সারাদেশে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট ১০ হাজার ৩০৫টি সাধারণ শয্যা ও ৫৫৮টি আইসিইউ শয্যা আছে। দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ১২ হাজার ৭৭৩টি। আর হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে ৭১৫টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে ৬৬০টি।

এছাড়া সারা দেশে ৫ হাজার ১০০ ডাক্তার ও ১ হাজার ৭০০ নার্সকে করোনা ভাইরাস ব্যবস্থাপনা ও ইনফেকশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।