যেভাবে 'বঙ্গবন্ধু' হয়ে উঠেছিলেন শেখ মুজিব


যেভাবে 'বঙ্গবন্ধু' হয়ে উঠেছিলেন শেখ মুজিব

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্কুল জীবন থেকেই তিনি ছিলেন প্রতিবাদী চরিত্রের। যেখানেই অন্যায় কিছু দেখতেন, সেখানেই প্রতিবাদ করতেন শেখ মুজিব। ছিলেন, বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান। বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে প্রকাশ পায় নেতৃত্বের গুণাবলী। 

১৯৬৬ সাল থেকেই শেখ মুজিবের নামের আগে 'সিংহশার্দূল', 'বঙ্গশার্দূল' ইত্যাদি খেতাব জুড়ে দিতে থাকে তরুণরা। তবে ‘মুজিব ভাই’, ‘শেখের বেটা’, ‘বাংলার মুজিব’, ‘শেখ মুজিব’, 'বঙ্গশার্দূল', 'সিংহশার্দূল'-সব ছাপিয়ে এক সময় তিনি হয়ে উঠছিলেন বাংলার বন্ধু। বাংলাদেশের মানুষের বন্ধু, হয়ে ওঠেন ‘বঙ্গবন্ধু’। এ উপাধি এমনি এমনি দেয়া হয়নি তাঁকে। এই উপাধি পাওয়ার পেছনে রয়েছে শেখ মুজিবের সংগ্রামমুখর এক জীবনের ইতিহাস।

১৯৪৬ সালে কোলকাতার ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক গুরু। ১৯৪৮ সালে মুজিবের হাত ধরে গঠিত হয় ছাত্র সংগঠন “পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ”। যেটি এখন বাংলাদেশ ছাত্র লীগ। 

১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে জেলখানায় অনশন শুরু করেন তিনি। এবং একটানা ১৭ দিন অনশন অব্যাহত রাখেন। 

১৯৫৩ সালে পূর্ব বাংলা আওয়ামী মুসলীম লীগের কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিব। ১৯৫৪’র নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে গোপালগঞ্জের আসনে নির্বাচিত হন তিনি। প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। 
১৯৫৬ সাল। শেখ মুজিব কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, দুর্নীতিরোধ এবং গ্রামীন সহায়তা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। 

১৯৫৭ সালের ৩০ মে দলে সময় ব্যয় করার জন্য মন্ত্রী পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। শেখ মুজিবুর রহমানে একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বছর ছিল ১৯৬৬ সাল। ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন শেখ মুজিব। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। যার ধারাবিহকতায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।

১৯৬৮ সাল। ৩রা জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার এক নম্বর আসামী করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। এই মামলার মাধ্যমে “পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন” করার অভিযোগ আনা হয় মুজিবের বিরুদ্ধে। 

১৯৬৯ সালে প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। 
১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী)ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যেগে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী সেটি মেনে নিতে পারেনি। শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে তারা টালবাহানা করছিল।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। সেই ভাষণের মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, পাকিস্তানীদের সঙ্গে আর থাকা হবে না। ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিন্তানের নিয়ন্ত্রণ ছিল শেখ মুজিবের হাতে। 

২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে বাঙালীদের উপর সশস্ত্র আক্রমণের সময় শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানী বাহিনী। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো সময়টাতে শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়। ১০ জানুয়ারি লন্ডন ও দিল্লী হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আজ বাঙালি জাতির এই অবিসংবাদিত নেতার জন্মশতবার্ষিকী। একজন শেখ মুজিব জন্ম না নিলে হয়তো এই জাতি কখনও পেতো না তার আত্মপরিচয়-স্বাধীনতা। তাই তো বলা হয়, পৃথিবীতে যতদিন বাঙালি জাতি টিকে থাকবে, ততদিন বেঁচে থাকবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু!